সোমবার, ২৯ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বরিশালে পুকুর-দিঘি ভরাটের মচ্ছব

পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্রের তোয়াক্কা নেই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বরিশালে পুকুর-দিঘি ভরাটের মচ্ছব

বরিশাল নগরীতে পরিবেশ অধিদফতরের ছাড়পত্র ছাড়াই একের পর এক পুকুর-দিঘি ভরাটের ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দা ও পরিবেশবাদীদের মধ্যে ক্ষোভ বিরাজ করছে। তবে পুকুর রক্ষায় কঠোর থাকার কথা জানিয়েছে পরিবেশ অধিদফতর। বরিশাল নগরীর জনবহুল পশ্চিম হাসপাতাল রোড এলাকায় প্রায় ৬০ বছর আগে খনন করা সরকারি মালিকানাধীন একটি পুকুর গত সপ্তাহ থেকে ভরাটের কাজ শুরু হয়েছে। এর প্রতিবাদে এলাকাবাসী মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচি পালন করেছে। তাদের দাবি, স্থানীয় মানুষের ব্যবহার যোগ্য একমাত্র এই পুকুরটি ভরাট হলে তারা পানি সংকটে পড়বে। আশপাশে কোনো অগ্নিকান্ড ঘটলে এই পুকুরটি ছিল পানির উৎস্য। স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, প্রায়ই সিটি করপোরশেনের সাপ্লাই পানির সংকটের সময় দৈনন্দিন গৃহস্থালি কাজগুলো এই পুকুরের পানি সম্পন্ন করেন তারা। হঠাৎ করে পুকুরটি ভরাট করে ফেলায় সেই সুযোগ আর থাকল না। ভবন নির্মাণের জন্য অন্য জায়গা থাকার পরও পুকুর ভরাট করে ভবন নির্মাণের প্রতিবাদ জানান তারা। প্রায় ৩১ শতাংশ জমিতে থাকা এ পুকুরটির মালিক আঞ্চলিক জনসংখ্যা প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট। পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের বিভাগীয় ও জেলা কার্যালয়ের জন্য পাঁচ তলা ভবন নির্মাণ করতে সেখানকার ২৭ শতাংশ জমি বরাদ্দ দেয় সরকার। ভবন নির্মাণের প্রথম পর্যায়েই ভরাট করা হয় পুকুরটি। বরিশাল জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ এ কাজ বাস্তবায়ন করছে।

জেলা স্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. ইসাহাক মিয়া জানান, একটি পাঁচ তলা ভবন নির্মাণের জন্য আমাদের সাড়ে ২৭ শতাংশ জমির বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ওখানে কিছু নিচু জমি আছে। এ জমি নিয়ে অভিযোগ এসেছে। পরিবেশ অধিদফতরের সঙ্গে আলোচনা করে এ বিষয়ে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে।

এদিকে কোনো ধরনের বাধা ছাড়াই নগরীর চৌহুতপুর দিঘি ভরাট করে বাড়িঘর নির্মাণের কাজ চলছে। এ ছাড়াও বিভিন্ন স্থানে ব্যক্তি মালিকানাধীন পুকুর ভরাট করে নির্মাণ করা হচ্ছে স্থাপনা। পরিবেশ আইনবিদ সংগঠন বেলার স্থানীয় সংগঠকদের মতে, বরিশাল নগরীতে এক সময় প্রায় ৩০০ পুকুর ছিল। জমির মূল্য বৃদ্ধি এবং আবাসন চাহিদার কারণে ক্রমশই এই পুকুরগুলো ভরাট হয়ে যায়। বর্তমানে ৮০টি পুকুর অবশিষ্ট রয়েছে। পুকুরগুলো জনস্বার্থে ব্যবহৃত হচ্ছে। ইতোমধ্যে নগরীর ১২টি পুকুর ভরাটের হাত থেকে রক্ষায় আদালতে বেলার মামলা চলমান রয়েছে।

বেলা বরিশালের সমন্বয়কারী লিংকন বায়েন জানান, বরিশাল নগরীর অধিকাংশ পুকুর ভরাট হয়ে গেছে। অবশিষ্টগুলোও ভরাট হয়ে গেলে জলাবদ্ধতাসহ অনেক সংকটের সৃষ্টি হবে। হাসপাতাল রোডের পুকুর ভরাটের বিরুদ্ধে বেলা আইনি লড়াই করবে বলে তিনি জানান। সুশাসনের জন্য নাগরিক-সুজন বরিশালের সম্পাদক মো. রফিকুল আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময়ে বরিশালে একের পর এক পুকুর-দিঘি ভরাট হচ্ছে। এগুলো আইনবিরোধী। কর্তৃপক্ষও এ ব্যাপারে তৎপর নয়। বরিশাল বিভাগীয় পরিবেশ অধিদফতরের উপপরিচালক এ এইচ এম রাসেদ জানান, পুকুর-জলাশয় ভরাটের বিষয়ে পরিবেশ অধিদফতর সব সময় সোচ্চার। কোথাও ছাড়পত্র ছাড়া পুকুর-জলাশয় ভরাটের খবর পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক অভিযান চালিয়ে সেগুলোর ভরাট বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে। মামলা দেওয়া হচ্ছে।  উপপরিচালক আরও বলেন, হাসপাতাল রোডের পুরনো পুকুর ভরাটের জন্য স্বাস্থ্য প্রকৌশল বিভাগ কোনো ছাড়পত্র নেয়নি। এ জন্য পুকুর ভরাট বন্ধে তাদের চিঠি দেওয়া হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর