মঙ্গলবার, ৩০ জানুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে রেল

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

ইঞ্জিন ও কোচ সংকটে রেল

সরকার দেশের ৬৪টি জেলার সঙ্গে রেলের নেটওয়ার্ক যুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে এ লক্ষ্যে নিয়মিত নতুন নতুন রেললাইন নির্মাণ করছে। বাড়াচ্ছে রেলের নেটওয়ার্ক। কিন্তু এর বিপরীতে রেলে ইঞ্জিন ও কোচ সংকট চরমে। লাইন থাকলেও ইঞ্জিন-কোচ সংকটের কারণে কাক্সিক্ষত সংখ্যক রেল পরিচালনা করা যাচ্ছে না। বাস্তবায়ন হচ্ছে না সরকারের পরিকল্পনা। দৃশ্যমান হচ্ছে না রেলের উন্নয়ন। মিলছে না আশানুরূপ সুফল।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের অধীন দোহাজারী থেকে রামু হয়ে কক্সবাজার পর্যন্ত ১৮ হাজার ৩৪ কোটি ৪৮ লাখ টাকা ব্যয়ে ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ করে। এ লাইন দিয়ে দৈনিক ৬ থেকে ৭টি রেল চলাচল করার কথা। কিন্তু এখন দৈনিক রেল চলছে মাত্র দুটি। খুলনা থেকে মোংলা বন্দর পর্যন্ত ৬৫ কিমি ব্রডগেজ রেলপথে দৈনিক ৬ থেকে ৭টি রেল চলাচল করার কথা। কিন্তু এখন চলছে মাত্র একটি। ঢাকা থেকে রাজশাহী ২৪৫ কিমি রেলপথে চারটি আন্তনগর ট্রেন চলছে। এখানে চলতে পারত ৫-৬টি। বহুমাত্রিক পদ্মা সেতু দিয়ে একাধিক রেল চলাচলের সুযোগ থাকলেও এখন চলছে মাত্র একটি। গত ২৬ জানুয়ারি চট্টগ্রামে গণমাধ্যমকে রেলমন্ত্রী মো. জিল্লুল হাকিম বলেন, রেলে ইঞ্জিন ও কোচ সংকট আছে, এটা সত্য। তবে তা ধীরে ধীরে বাড়ানোর পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হচ্ছে। এ ব্যাপারে একটা সিদ্ধান্তও নেওয়া হয়েছে। কারণ লাইন বাড়ালে ইঞ্জিন ও কোচ বাড়াতে হবে। রেলওয়ের অতিরিক্ত মহাপরিচালক (অপারেশন) সরদার শাহাদাত আলী বলেন, আমাদের লক্ষ্য রেলকে দেশের ৬৪টি জেলার সঙ্গে সংযুক্ত করা। এ জন্য প্রতিনিয়তই নতুন রেললাইন নির্মাণ করা হচ্ছে। একই সঙ্গে এসব লাইনে চলাচলের জন্য ইঞ্জিন ও কোচও আমদানির সিদ্ধান্ত আছে। অভিযোগ আছে, কোচ, রেল ট্র্যাক উন্নয়নসহ নানা খাতে বিনিয়োগ হচ্ছে। কিন্তু যথা সময়ে ইঞ্জিন আমদানি করতে ব্যর্থ হচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ। ফলে রেলের কাক্সিক্ষত সেবা পাচ্ছে না যাত্রীরা। তাছাড়া, এখনই ইঞ্জিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়া হলে তা দেশে আসতে অন্তত সময় লাগবে তিন থেকে পাঁচ বছর। কিন্তু এরই মধ্যে পরিত্যক্ত ঘোষণার উপক্রম হবে আরও অনেক ইঞ্জিন। এ কারণে বিঘ্নিত হতে পারে রেলের যাত্রীসেবাও। ফলে দ্রুত ইঞ্জিন আমদানির উদ্যোগ নেওয়া জরুরি বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল সূত্রে জানা গেছে, এ অঞ্চলে ইঞ্জিন আছে ১৫৩টি। এর মধ্যে গত বছর তিনটি ইঞ্জিন চলাচল অনুপযুক্ত ঘোষণা করা হয়। পূর্বাঞ্চলে প্রতিদিন ইঞ্জিনের চাহিদা আছে ১১৬টি। এর মধ্যে যাত্রীবাহী ট্রেনের জন্য ৭২টি, পণ্যবাহী ট্রেনের জন্য ১৩টি, শান্টিংয়ের জন্য ১৬টি, শাটলের জন্য ২টি, বিটি-প্রকল্পের জন্য ২টি এবং রিলিফ ও অন্যান্য ট্রেনের জন্য ১১টি। কিন্তু সরবরাহ পাওয়া যায় মাত্র ১০০টি। যাত্রীবাহী ১৬০টি ও ৮টি কনটেইনার ট্রেনের জন্য ৭২টি ইঞ্জিন বরাদ্দ দেওয়া হলে প্রতিটি ইঞ্জিন গড়ে প্রতিদিন ২ দশমিক ৬৫টি ট্রেনে যুক্ত হয়। বরাদ্দের শতভাগ সরবরাহ না হওয়ায় পূর্বাঞ্চলে একটি ইঞ্জিন প্রতি ২৪ ঘণ্টায় গড়ে তিনটি ট্রেন পরিচালনা করে। দীর্ঘদিনের পুরনো ইঞ্জিনের জন্য এটি ঝুঁকিপূর্ণ। রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের যান্ত্রিক প্রকৌশল বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালে দক্ষিণ কোরিয়া থেকে ১১টি মিটার গেজ ইঞ্জিন আমদানি করা হয়। দীর্ঘ ১০ বছর পর ২০২১ সালে দক্ষিণ কোরিয়ার হুন্দাই রোটেম কোম্পানি থেকে ৩০টি সর্বশেষ প্রযুক্তির ইঞ্জিন আমদানি করে। এগুলো আমদানির পর রেলের বহরে থাকা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক পুরনো ইঞ্জিন পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। ৩ হাজার সিরিজের ইঞ্জিনগুলো দিয়ে দেশের প্রধান প্রধান রুট এবং ভারী ও দীর্ঘ রুটের পণ্যবাহী ট্রেন পরিচালনা করা হয়। তবে গত জাতীয় নির্বাচনের আগের রাজনৈতিক অস্থিরতায় এ সিরিজের কয়েকটি ইঞ্জিন ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এর মধ্যে একটিকে পার্বতীপুরের কেন্দ্রীয় লোকোমোটিভ কারখানায় মেরামতের জন্য নিয়ে যাওয়া হয়। আরও দুটি মেরামত করা হচ্ছে চট্টগ্রামের পাহাড়তলীর কারখানায়।

কিন্তু রেলের সার্ভিস পরিচালনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় থাকা এসব নতুন ইঞ্জিন সার্ভিসিংয়ে থাকায় ট্রেন পরিচালনায় হিমশিম খাচ্ছে রেলওয়ের পরিবহন বিভাগ। অন্যদিকে, ২০০৯ সালে ৭০টি ইঞ্জিন কেনার একটি মেগা প্রকল্প হাতে নেয়। কিন্তু ঋণের সুদহারসহ নানা জটিলতায় তা বাস্তবায়ন হয়নি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর