বৃহস্পতিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

স্যুয়ারেজ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ পাইপ সঞ্চালন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

স্যুয়ারেজ প্রকল্পের বড় চ্যালেঞ্জ পাইপ সঞ্চালন

চট্টগ্রাম ওয়াসা প্রতিষ্ঠার ছয়দশক পর নগরের পয়ঃবর্জ্য নিষ্কাশন ব্যবস্থা বাস্তবায়ন করছে। কিন্তু এ কাজে বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে প্রকল্পের পাইপ সঞ্চালন। ফলে বিলম্ব হচ্ছে কাজ। পাইপ সঞ্চালনে চ্যালেঞ্জের মধ্যে আছে, নতুন করে সড়ক কাটার অনুমতি নিতে সময়ক্ষেপণ, সেবা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উপকরণ ও স্থাপনা থাকা, পাইপ সঞ্চালনা করতে গিয়ে পানির লেবেল চলে আসা। বর্তমানে চট্টগ্রাম নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ২৮৮ মিলিয়ন লিটার বর্জ্যপানি নিঃসৃত হয়ে নদীতে পড়ছে। ২০৩০ সালে এর পরিমাণ হবে দৈনিক ৫১৫ মিলিয়ন লিটার। নগরীতে প্রতিদিন প্রায় ৫৩৯ ঘনমিটার ফিক্যাল স্ল্যাজ সেপটিক ট্যাংকে জমা হচ্ছে। ২০৩০ সাল নাগাদ প্রতিদিন এর পরিমাণ হবে প্রায় ৭১৫ ঘনমিটার। ফলে নদীর পানি প্রতিনিয়ত দূষিত হচ্ছে।  জানা যায়, তুলনামূলক স্যুয়ারেজ সিস্টেমের কাজ কঠিন। পানির পাইপ চালানো যত সহজ, স্যুয়ারেজ পাইপ চালানো তত কঠিন। পানির জন্য সড়কে ১ দশমিক ২ মিটার বা ৪ ফুট গভীরে পাইপ স্থাপন করতে হয়। কিন্তু স্যুয়ারেজের পাইপ বসাতে হয় ১২-১৫ মিটার নিচে। চট্টগ্রাম পাহাড়ি এলাকা হওয়ায় পাইপের স্তর ঠিক রাখতে নগরীর কিছু কিছু এলাকায় ৪০ ফুট পর্যন্ত মাটি খনন করে পাইপ স্থাপন করতে হচ্ছে। এটা না হলে বর্জ্য পাইপের বদলে ম্যানহোল দিয়ে ওপরে উঠে আসবে। স্যুয়ারেজ প্রকল্পের উপপরিচালক প্রকৌশলী সাহাবুদ্দিন বলেন, স্যুয়ারেজের পাইপ সঞ্চালন কাজটা কঠিন। পাইপ সঞ্চালনে সড়ক কাটা, সেবা সংস্থাগুলোর বিভিন্ন উপকরণ ও স্থাপনা থাকা, পানির লেবেল চলে আসাসহ নানা সমস্যার মুখোমুখি হতে হচ্ছে। কারণ স্যুয়ারেজ লাইন অনেক গভীরে স্থাপন করতে হচ্ছে। কাজটি জটিল ও সময়সাপেক্ষ। মাইক্রো টানেলিং পদ্ধতিতে ৮-১৫ মিটার পর্যন্ত গভীরে পাইপলাইন স্থাপন করা অনেক চ্যালেঞ্জিং কাজ। তবে সব সমস্যা কাটিয়ে সুয়্যারেজ প্রকল্পের কাজ যথানিয়মে চলছে। ওয়াসা সূত্রে জানা যায়, ওয়াসা প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকা ব্যয়ে ‘চট্টগ্রাম মহানগর পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা স্থাপন প্রকল্পের’ অধীনে নগরে পরিকল্পিত  স্যুয়ারেজ ব্যবস্থা গড়ে তোলা হচ্ছে। প্রকল্পের অধীনে পুরো নগরকে ছয়ভাগে ভাগ করে স্যুয়ারেজ সিস্টেম বাস্তবায়ন করা হবে। প্রথম ধাপে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এ প্রকল্পের আওতায় আনতে নগরের হালিশহরের ১৬৩ একর ভূমির ওপর দুটি সর্বাধুনিক ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট স্থাপন এবং প্রায় ২০০ কিলোমিটার পাইপ নেটওয়ার্কের মাধ্যমে স্যুয়ারেজ সিস্টেম গড়ে তোলা হচ্ছে। এর মধ্যে একটি পাইপলাইনের মাধ্যমে আনা দৈনিক প্রায় ১০ কোটি লিটার তরল বর্জ্য পরিশোধন করে পরিবেশসম্মতভাবে সাগরে ফেলা হবে। অন্য প্লান্টটি ফিক্যাল প্লাসের (বিশেষ ধরনের গাড়িতে বাসাবাড়ি থেকে সংগ্রহ করা পয়ঃবর্জ্য) মাধ্যমে সংগ্রহ করে দৈনিক ৩০০ টন বর্জ্য পরিশোধন করা হবে। প্রথম ধাপের হালিশহর ক্যান্টনমেন্টভুক্ত এলাকাগুলো হলো- এনায়েতবাজার ওয়ার্ড, উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ড, উত্তর আগ্রাবাদ ওয়ার্ড, রামপুর ওয়ার্ড, উত্তর হালিশহর, দক্ষিণ আগ্রাবাদ, পাঠানটুলি, পশ্চিম মাদারবাড়ী, পূর্ব মাদারবাড়ী, আলকরণ, গোসাইলডাঙ্গা, উত্তর মধ্যম হালিশহর এবং দক্ষিণ কাট্টলী, সরাইপাড়া, পাহাড়তলী, লালখান বাজার, বাগমনিরাম, জামালখান, আন্দরকিল্লা, ফিরিঙ্গিবাজার, দক্ষিণ মধ্য হালিশহরের আংশিক। প্রায় ৩৬ বর্গকিলোমিটার এলাকায় ২০০ কিলোমিটার পয়ঃপাইপ লাইন স্থাপনের কাজ চলছে। এ ছাড়াও মহানগরীর যেসব এলাকাকে পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থার আওতায় আনা সম্ভব হবে না, সেসব জনগোষ্ঠীর শতকরা ৪১ ভাগ নিরাপদ সেপটিক স্ল্যাজ ব্যবস্থাপনার আওতায় আনা সম্ভব হবে। যেখান থেকে গাড়ির মাধ্যমে বর্জ্য সংগ্রহ করে হালিশহরের ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্টে পরিশোধন করা হবে।   

 

সর্বশেষ খবর