শনিবার, ৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কালুরঘাটের কী অপরাধ

২৩ বছরেও নতুন সেতু না হওয়ায় ত্যক্তবিরক্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামবাসীর প্রশ্ন

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কালুরঘাটের কী অপরাধ

দোহাজারী থেকে কক্সবাজার রেললাইন হয়েছে। রেললাইন প্রসারের সঙ্গে সঙ্গে কালুরঘাট সেতু নতুন করে বানানোর সম্ভাবনাও তৈরি হয়। কিন্তু ১০০ কিলোমিটার রেললাইন নির্মাণ হলো, সেতু দিয়ে ট্রেন চলাচলও শুরু করল, অথচ এখনো কালুরঘাট সেতুটি নতুন করে তৈরি হলো না! প্রয়োজনীয় সংস্কার করে এ সেতু দিয়ে চলাচল করছে ট্রেন। কবে নতুন সেতু হবে তা এখনো অজানা। ২০০১ সালে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ ঘোষিত কালুরঘাট সেতুর স্থলে ২৩ বছরেও নতুন সেতু হয় না। ফলে ত্যক্তবিরক্ত দক্ষিণ চট্টগ্রামের অধিবাসীরা। বলছেন, কালুরঘাটের কী অপরাধ? কবে আমরা পাব নতুন সেতু? ২০১৪ সালে কালুরঘাটে একটি সেতু নির্মাণের সিদ্ধান্ত নিয়েছিল সরকার। রেলমন্ত্রী মো. জিল্øুল হাকিম ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম এসে গণমাধ্যমকে বলেছেন, ‘কালুরঘাট নতুন সেতু হতে চার-পাঁচ বছর লাগবে। এখন সমীক্ষা শেষ। কোরিয়ার অর্থায়নে নতুন কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করা হবে।’ এ ঘোষণার পর দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুুষের হতাশা আরও বেড়ে যায়। বর্তমানে প্রাথমিক সংস্কার শেষে সেতু দিয়ে রেল চলাচল করছে। তবে সংস্কার শেষ হবে আগামী জুনে। এখন সেতু দিয়ে যানবাহন চলাচল বন্ধ। যানবাহন ও মানুষ পারাপারে দুটি ফেরি সার্ভিস চালু করা হয়। নতুন করে সেতু নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরি করা হয়। দক্ষিণ কোরিয়া অর্থায়নে সম্মত হয়েছে।

স্থানীয় বাসিন্দা কফিল উদ্দিন বলেন,‘ পদ্মা সেতু হয়, কিন্তু কালুরঘাট সেতু হয় না। অথচ এ সেতুর জন্য প্রধানমন্ত্রীর নীতিগত সমর্থনও আছে। এটা আমাদের জন্য দুঃখের। ২০১৪ সাল থেকে নানাভাবে আন্দোলন চলছে। জনপ্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতির পর প্রতিশ্রুতি দেখা যাচ্ছে। কিন্তু সেতু হয় না। আমরা এ সেতুর বাস্তবায়ন চাই।’

বোয়ালখালী-চান্দগাঁও আসনের সংসদ সদস্য আবদুচ ছালাম বলেন, ‘দক্ষিণ চট্টগ্রামের মানুষ এখন কালুরঘাট সেতুর বাস্তবায়ন চায়, আর প্রতিশ্রুতি চায় না।’

কালুরঘাট সেতু প্রকল্পের মুখপাত্র প্রকৌশলী গোলাম মোস্তফা বলেন, ‘সেতুর সংস্কার জুনে শেষ হবে। নতুন সেতু নির্মাণে প্রায় ১১ হাজার ৬০০ কোটি টাকার একটি ডিপিপি তৈরি করা হয়েছে। এটি এখন রেলপথ মন্ত্রণালয়ের অনুমোদনের অপেক্ষায়। এরপর একনেক অনুমোদনসহ পরবর্তী প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হবে। তা ছাড়া প্রাথমিক একটা নকশা চূড়ান্ত করা হয়েছে। এটি হয়তো আবারও পরিবর্তন হতে পারে।’ জানা যায়, ১৯৩১ সালে কর্ণফুলী নদীর ওপর ইস্পাতের কাঠামো দিয়ে কালুরঘাট সেতু নির্মাণ করে ব্রুনিক অ্যান্ড কোম্পানি। প্রথম বিশ্বযুদ্ধের পর মিয়ানমারের সঙ্গে সরাসরি রেল যোগাযোগের জন্য ৬৩৮ মিটার দীর্ঘ সেতু করা হয়েছিল। পরে দোহাজারী পর্যন্ত গিয়ে শেষ হয় এ রেললাইন। এরপর সেতুটি প্রথমবারের মতো ১১ মাস সময় নিয়ে সংস্কার করা হয় ১৯৮৬-৮৭ সালে। ২০০১ সালে কালুরঘাট সেতু ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করার পর ২০০৪-০৫ সালে চার-পাঁচ মাস সময় ধরে একবার, ২০১২ সালে একবার এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালের নভেম্বরে প্রায় ৫৫ কোটি টাকা ব্যয়ে আবারও সংস্কার শুরু করে এখনো চলছে। বারবার সংস্কার হয়েছে, নতুন করে সেতু আর হলো না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর