মঙ্গলবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাদক পাচারে জড়াচ্ছেন তরুণীরা

প্রশাসনের চোখ এড়াতে অভিজাত চালচলন

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

পোশাকে আভিজাত্যের ছাপ। দেখতেও সুন্দরী। দামি প্রাইভেট কার বা মোটরসাইকেলে নির্দিষ্ট স্থানে মাদকের চালান পৌঁছে দেন। বোঝার উপায় নেই এরাই মাদক পাচারে জড়িত। গত ছয় মাসে খুলনায় মাদক পাচারের অভিযোগে কয়েকজন সুন্দরী তরুণী গ্রেফতারের পর বিষয়টি গোয়েন্দা সংস্থার নজরে আসে। তদন্তে জানা যায়, নগরীর নিম্ন আয়ের মানুষের আবাসস্থল বস্তিবাড়ি থেকে অভিজাত এলাকা পর্যন্ত মাদক বেচাকেনা ও পাচারের ঘটনায় জড়িয়েছেন নারীরা।

জানা যায়, ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর নগরীর গোবরচাকায় ইমন শেখ হত্যা মামলার আসামি মামুনকে বিদেশি রিভলবারসহ গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ। ওই অভিযানে মাদককারবারি পলাশের স্ত্রী তরুণী পারভীন সুলতানা টিকলি ১ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার হন। মামুন বিভিন্ন সময় টিকলির বাড়িতে থেকে মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেন। এর আগে থেকেই টিকলির বিরুদ্ধে মামলা রয়েছে।

একইভাবে ২০২৩ সালের ১ আগস্ট প্রাইভেট কারে ইয়াবার চালান নিয়ে চট্টগ্রাম থেকে খুলনায় আসার পথে সুন্দরী তরুণী ফারহানা ফেরদৌসীকে ৯ হাজার ৩৫০ পিস ইয়াবাসহ গ্রেফতার করে র‌্যাব। মামলা তদন্তে লবণচরার মাদক সম্রাজ্ঞী জুলেখা রানীর নাম পাওয়া যায়। চক্রটি মাদক বেচাকেনার কাজে এলাকায় কিশোর গ্যাং পরিচালনা করে। এর বেশির ভাগই মাদকসেবী, ছিনতাইকারী ও পেশাদার অপরাধী।

বিশ্লেষকরা বলছেন, গত এক মাসে ৪৮টি অভিযানে ইয়াবাসহ ১৪০ জনকে গ্রেফতার করে মেট্রোপলিটন পুলিশ। এর মধ্যে ১২ ঘটনায় মাদক পাচারে নারীর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া গেছে। তাদের সহযোগিতার জন্য নির্দিষ্ট অটোরিকশা ও রিকশাচালক রয়েছেন। পুলিশ জানায়, ২ ফেব্রুয়ারি নগরীর আনছার ব্যারাকের পেছনে ফুডঘাট থেকে বন্যা বেগম (২৫) ও বীথি বেগম (২৮), ২৪ জানুয়ারি দৌলতপুর পশ্চিম সেনপাড়া থেকে মোছা. সাথী আক্তার (২১), ১১ জানুয়ারি সোনাডাঙ্গা তেঁতুলতলার রিয়া আক্তার জান্নাত (১৯), ২ জানুয়ারি জোড়াগেট থেকে বকুল (৩০) ও সোনাডাঙ্গা মুছা সড়ক থেকে সোহাগী (২০) ইয়াবা পাচারকালে গ্রেফতার হন।

অন্যদিকে তরুণীদের পাশাপাশি বয়স্ক নারীরাও মাদক পাচারে জড়িয়ে পড়েছেন। এর মধ্যে ২৮ জানুয়ারি ঘাট এলাকার গ্রিনল্যান্ড আবাসন থেকে হাছিনা বেগম (৫০), ২৫ জানুয়ারি একই স্থানে রোজিনা (৪০), ৪ ফেব্রুয়ারি দৌলতপুর পশ্চিম সেনপাড়া থেকে পিয়ারা (৬৫) ও টুটপাড়া খালপাড় থেকে রোজিনা বেগমকে ইয়াবা বিক্রির সময় গ্রেফতার করা হয়।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা, খুলনার সমন্বয়কারী আইনজীবী মোমিনুল ইসলাম জানান, পারিবারিক দারিদ্র্য, বেকারত্ব, হতাশা থেকে টাকার প্রয়োজনে নারীরা ইয়াবা ব্যবসায় ঝুঁকে পড়েন। পর্দার আড়ালে থেকে গডফাদাররা তাদের পরিচালিত করেন। তবে পুলিশ এ গডফাদারদের গ্রেফতার করতে পারেনি।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার মো. মোজাম্মেল হক জানান, মাদক পাচারের নতুন    এ কৌশল নিয়ে পুলিশ স্টাডি করছে। অনেক সময় গর্ভবতীদের মাদক ব্যবসায় সম্পৃক্ততা পাওয়া গেছে। তবে কেউ যেন খারাপ পথে না যায় এজন্য গ্রেফতারের পাশাপাশি সংশোধনের   কাজও করা হচ্ছে।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর