শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মাদকদ্রব্য অধিদফতর ও কারবারিদের যোগসাজশে মাদক পাচার

শর্ষেতেই ভূত

নিজস্ব প্রতিবেদক, রংপুর

মাদক পাচারের নিরাপদ রুট রংপুর। সহজে হাতের নাগালে পাওয়া যায় বলে দিন দিন মাদকসেবীর সংখ্যাও বাড়ছে এখানে। প্রায় প্রতিদিন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে মাদক পাচারকারী এবং সেবনকারী গ্রেফতার হলেও থামানো যাচ্ছে না মাদকের রমরমা ব্যবসা। গত এক মাসে কমপক্ষে ১৫টি মাদকের চালান ধরা পড়েছে র‌্যাব ও পুলিশের হাতে। তবে সচেতন মহলের মতে, মাদকের ব্যবসা ও মাদকসেবীর অনুপাতে আটকের এ সংখ্যা নিতান্তই কম। এনিয়ে অভিভাবক ও সচেতন মহল শঙ্কিত। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-সদস্যের আশ্রয়-প্রশ্রয় ও যোগসাজশে এখানে মাদক কারবারিরা নিরাপদে পাচার ও ব্যবসা চালিয়ে যেতে সক্ষম হচ্ছেন। এ যেন শর্ষেতেই ভূত। জানা গেছে, গত বুধবার দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে লালমনিরহাট আদিতমারী উপজেলার বুড়িমারী-রংপুর মহাসড়কে চেকপোস্ট বসিয়ে সন্দেহভাজন একটি ট্রাক তল্লাশি করা হয়। এতে ট্রাকের ভিতর থেকে ১৮৭ বোতল ফেনসিডিলসহ মাদক কারবারি আদিতমারী দুরাকুটি এলাকার তোতা মিয়ার ছেলে নবিয়ার হোসেনকে (৩০) গ্রেফতার করে র‌্যাব। গত বৃহস্পতিবার ভোরে গঙ্গাচড়া উপজেলার বড় রুপাই গ্রামের নাজির হোসেনের ছেলে রবিউল ইসলামের বাড়িতে র‌্যাব অভিযান চালিয়ে সাড়ে ১১ কেজি গাঁজাসহ রবিউলকে গ্রেফতার করে। গত বৃহস্পতিবার সকালে অপর একটি অভিযানে লালমনিরহাট কালিগঞ্জ উপজেলার পুষ্প চন্দ্র বর্মণের (৩৮) বসতবাড়ির খাটের নিচ থেকে ১ হাজার ৮৮০ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধারসহ পুষ্প চন্দ্র বর্মণ ও সেকেন্দার আলীর ছেলে গোলাপ মোস্তফাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব।এর আগে ৪ ফেব্রুয়ারি লালমনিরহাটের কালিগঞ্জ উপজেলার কাকিনা বাজার থেকে এলাকাবাসী রংপুর নগরীমুখী একটি বেপরোয়া গতির প্রাইভেট কারসহ মাদককারবারি মেহেদী হাসানকে (২৫) আটক করে। স্থানীয়রা কারের ভিতরে থাকা তিন বস্তা ফেনসিডিলের চালান দেখতে পান। এ সময় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যরা উপস্থিত হয়ে প্রাইভেট কার থেকে মাদকের চালান বের করতে স্থানীয়দের বাধা দেয়। এনিয়ে স্থানীয়দের সঙ্গে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সদস্যদের বাগবিতন্ডা ও হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। স্থানীয়দের অভিযোগ, মাদক পাচার ও পাচারকারীদের সঙ্গে স্থানীয় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা-সদস্যের কালো হাত রয়েছে।

রংপুর নগরীর একটি ছয় তলা ভবনের ছাদে টুইন রুফটপ হোটেলে রমরমা মাদকের ব্যবসা চলছিল। গত ১৪ জানুয়ারি এ হোটেল থেকে মাদকসহ পাঁচ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে পুলিশ। এ সময় তাদের কাছ থেকে বিপুল পরিমাণ ইয়াবা ও ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। গত ১৩ জানুয়ারি রংপুরে মাদকবিরোধী অভিযানে মিজানুর রহমান (২০) নামে এক মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করা হয়। তার কাছ থেকে ৫৩ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। এভাবে প্রায় প্রতিদিনই রংপুরের কোথাও না কোথাও মাদকের চালান উদ্ধার হচ্ছে। সেই সঙ্গে মাদক ব্যবসায়ীদের গ্রেফতার করা হচ্ছে। কিন্তু মাদকের দৌরাত্ম্য কমছে না।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, লালমনিরহাট সীমান্ত দিয়ে পাচার হওয়া মাদক প্রথমে রংপুরের গঙ্গাচড়ায় প্রবেশ করে। এরপর শহর হয়ে বিভিন্ন স্থানে পাচার হয়। এ ছাড়া কুড়িগ্রামের সীমান্ত গলিয়ে সড়ক পথে রংপুর নগরীতে মাদক আসে। এসব মাদকের একটি উল্লেখযোগ্য অংশ স্থানীয়রা সেবনের জন্য ব্যবহার করছে। বাকিটা পাচার হয়। এ ছাড়াও আরও একাধিক রুট দিয়ে রংপুরে মাদক প্রবেশ করছে।

রংপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের উপ-পুলিশ কমিশনার আবু মারুফ হোসেন (অপরাধ) বলেন, প্রতিদিন মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। মাদকের বিরুদ্ধে পুলিশ জিরো টলারেন্স নীতি গ্রহণ করেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর