শনিবার, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্লাস্টিক সার্জারিতে বিরল সাফল্য

চিকিৎসা শেষে ভুটান ফিরছেন সেই তরুণী

জয়শ্রী ভাদুড়ী

বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে আসা ভুটানের রোগী কারমা দেমার নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি সফল হয়েছে। বর্তমানে তিনি ভালো আছেন। শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে চিকিৎসা শেষে শিগগিরই তিনি দেশে ফিরে যাবেন বলে জানিয়েছেন চিকিৎসকরা। কারমা দেমার চিকিৎসার বিষয়ে আজ এক প্রেস কনফারেন্সে বিস্তারিত জানাবেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। ভুটানের কলেজ শিক্ষার্থী ২৩ বছর বয়সী কারমা দেমা চার বছর আগে নাকের গহ্বরে ক্যান্সারে আক্রান্ত হয়েছিলেন। ভারতের টাটা মেমোরিয়াল হাসপাতালে চিকিৎসায় ক্যান্সারমুক্ত হলেও রেডিওথেরাপিজনিত জটিলতায় তার নাক নষ্ট হয়ে যায়। পরে সেখানে দুই দফা অপারেশন করেও নাক পুনর্গঠনে ব্যর্থ হন চিকিৎসকরা। গত ৯ জানুয়ারি শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে প্লাস্টিক সার্জনদের তিনটি টিম যৌথভাবে প্রায় নয় ঘণ্টা ধরে নাক রিকনস্ট্রাকশন সার্জারি করেন কারমা দেমার। পুরো সার্জারির তত্ত্বাবধানে ছিলেন বার্ন ইনস্টিটিউটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক ও বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন। চিকিৎসকরা বলেছেন, কারমার নাকের গঠন এখন অনেকটা ভালো হয়েছে। তিন থেকে ছয় মাস পর তার আরেকটি ছোট সার্জারি করা হবে। কারমা দেমা বর্তমানে বার্ন ইনস্টিটিউটের ১৩ তলার একটি কেবিনে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। তিনি গত বছরের ১৪ ডিসেম্বর চিকিৎসার জন্য বাংলাদেশে এসে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি হন। তিনটি অপারেশন টিমের একটির প্রধান শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হাসিব রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা একটা সার্জারি করেছি। রোগীর নাকের একটা স্ট্রাকচার দাঁড় করিয়েছি। তার নাকে আমরা সফট টিস্যু লাগিয়েছি। এরপর আরেকটা অপারেশন লাগবে, তবে সেটি আগের মতো তেমন বড় সার্জারি না। কারমা দেমার বুকের পাঁজরের তরুণাস্থি ও হাতের চামড়া/টিস্যু দিয়ে ফ্রি ফ্ল্যাট করে মাইক্রোসার্জারির মাধ্যমে অপারেশন সম্পন্ন করা হয়। এটি একটি জটিল অপারেশন। ভারতে তার দুটি অপারেশন করা হয়েছিল, তবে যে কোনো কারণে সেগুলো সফল হয়নি।’ জানা যায়, গত বছরের ২৫ সেপ্টেম্বর বর্তমান স্বাস্থ্যমন্ত্রী ও বার্ন ইউনিটের তৎকালীন প্রধান সমন্বয়ক অধ্যাপক ডা. সামন্ত লাল সেনের নেতৃত্বে ১৪ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ প্লাস্টিক সার্জারি টিম ভুটানে গিয়েছিল। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকী উপলক্ষে দুই দেশের সরকারের উদ্যোগে ভুটানের রাজধানী থিম্পুতে সাত দিনব্যাপী প্লাস্টিক সার্জারি ক্যাম্প পরিচালিত হয়। ক্যাম্পে বাংলাদেশের সার্জনরা ১৬টি সফল জটিল প্লাস্টিক সার্জারি করেন। সে ক্যাম্পেই প্লাস্টিক সার্জারির মাধ্যমে নাক ঠিক করার জন্য কারমা দেমাকে নিয়ে আসা হয়েছিল। এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা সব সময় শুনি বাংলাদেশ থেকে রোগী বিদেশে যায় চিকিৎসা নিতে কিন্তু ভুটানের কারমা দেমা প্রথম রোগী যিনি মেডিকেল ভিসায় বাংলাদেশে চিকিৎসা নিতে এসেছেন। আমাদের চিকিৎসকরা অনেক কষ্ট করে তাকে সুস্থ করেছেন।

 আশা করি ভবিষ্যতেও আরও বিদেশি রোগী আসবেন। এ রোগী কিন্তু ভারতে গিয়েও চিকিৎসা নিয়েছিলেন।’

কারমা দেমা পরিবারের একমাত্র মেয়ে। তার দুই ভাই। তার বাবা ভুটান সেনাবাহিনীর সৈনিক। তার বড় ভাই একটি রেস্টুরেন্টে কাজ করেন। কারমা দেমার বড় ভাই কারমা ফুসো বলেন, ‘আমার বোন এখন ভালো আছে। আমাদের কোনো খরচ দিতে হচ্ছে না। বাংলাদেশের চিকিৎসা ও সেবায় আমরা খুব খুশি।’

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর