মঙ্গলবার, ১৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে ১৩৮ কোটি টাকার বিদ্যুৎ বিল বকেয়া

কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ কর্তৃপক্ষ

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর বিদ্যুৎ বিভাগের বকেয়া বিল পরিশোধে আগ্রহ নেই। গত বছরের ডিসেম্বর পর্যন্ত ২০টি সরকারি, আধা-সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে ১৩৮ কোটি ৩৮ লাখ টাকা। এর মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের কাছে বিলের চেয়ে সারচার্জই আসছে বেশি। চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনেরও রয়েছে ৫৯ কোটি টাকার বেশি বিল বকেয়া। এসব দফতরে বকেয়া বিল পরিশোধ করার তাগিদ দিলেও কঠোর পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হওয়ায় মিলছে না তার সুফল। বছরের পর বছর এভাবে শত কোটি টাকা বকেয়া রেখে নিরবচ্ছিন্ন সেবা পাচ্ছে প্রতিষ্ঠানগুলো। অথচ বেসরকারি বা ব্যক্তিপর্যায়ে বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার রেওয়াজ থাকলেও এসব প্রতিষ্ঠানের ক্ষেত্রে ভিন্ন মনোভাব বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি চট্টগ্রাম বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের। ছোট ছোট অনেক প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে কোটি কোটি টাকা বকেয়া- এমনই তথ্য দিয়েছে সংশ্লিষ্টরা।

বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড-পিডিবি বিতরণ দক্ষিণাঞ্চলের প্রধান প্রকৌশলী রেজাউল করিম বলেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোর ফান্ড না থাকার কারণে বকেয়া বিল পরিশোধ করতে পারছে না বলে জানিয়েছে। দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের যে বকেয়া তা অনেক আগের, যেগুলো বিহারিরা ব্যবহার করত তার বিল। গত বছর দেড়েক ধরে বিহারিদের প্রিপেইড মিটারের আওতায় আনা হয়েছে। যার কারণে এখন আর আগের সেই সমস্যা নেই। অন্যান্য সংস্থাগুলোও কিছু দিয়েছে, আর কিছু রেখে দিয়েছে। তবে কোনো প্রতিষ্ঠানের কাছে চলমান বিল বকেয়া নেই, যা আগে পূরবর্তী সময়ের বিল। আমরা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে কথা বলছি, যোগাযোগ রাখছি।

পিডিবি সূত্র জানায়, আধা সরকারি ১০টি প্রতিষ্ঠানের কাছে বকেয়া রয়েছে ৬৬ কোটি ৩ লাখ টাকা। তার মধ্যে ৫৯ কোটি ২৩ লাখ টাকা সর্বোচ্চ বকেয়া চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের। অন্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে চট্টগ্রাম ওয়াসার কাছে ৩৭ লাখ টাকা, জনস্বাস্থ্য প্রকৌশল অধিদফতরের কাছে ৬ কোটি ১ লাখ টাকা, পৌরসভা-ইউনিয়ন পরিষদগুলোর কাছে ১৭ লাখ টাকা, পার্বত্য চট্টগ্রাম উন্নয়ন বোর্ডের ৬ লাখ টাকা, সমাজ সেবার ৩ লাখ টাকা, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের ৭ লাখ টাকা, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ-সিডিএ-এর ৪ লাখ টাকা, পানি উন্নয়ন বোর্ডের ২ লাখ টাকা এবং ডাক ও তারের ৩ লাখ টাকা বিদ্যুৎ বিল বকেয়া রয়েছে। এ ছাড়া ১০টি সরকারি প্রতিষ্ঠানের কাছে রয়েছে ৭২ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। সরকারি ১০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে সর্বোচ্চ ৫১ কোটি ৫০ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কাছে। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে কৃষি মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ কোটি ১৩ লাখ টাকা, মসজিদ, মন্দির ও অনান্য ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান বাবদ ধর্ম মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ১০ লাখ টাকা, জেলা, থানা পুলিশ ফোর্সের কাছে ২ কোটি ৬৯ লাখ টাকা, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে ২ কোটি ৬৫ লাখ টাকা, জেলা ও থানা হাসপাতাল বাবদে স্বাস্থ্য অধিদফতরের কাছে ৯০ লাখ টাকা, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের কাছে ৮ লাখ টাকা, রেলওয়ের কাছে ৩২ লাখ টাকা, গৃহায়ন ও গণপূর্ত মন্ত্রণালয়ের কাছে ৯০ লাখ টাকা ও স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদফতরের কাছে ৩ কোটি ৩৮ লাখ টাকা বকেয়া রয়েছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো বছরের পর বছর বিদ্যুৎ বিল না দেওয়ার কারণে সারচার্জসহ বকেয়ার পরিমাণ বাড়ছে। বিলের জন্য এসব দফতরকে বারবার বলার পরও তারা পরিশোধ করছে না। এর মধ্যে ত্রাণ ও দুর্যোগ মন্ত্রণালয়ের যে বিল বকেয়া সেখানে বিলের চেয়ে সারচার্জই বেশি। এসব বিল চট্টগ্রামের বিহারি কলোনির ব্যবহৃত বিদ্যুতের। স্বাধীনতা-পরবর্তী সময় থেকে এ বিল বকেয়া রয়ে গেছে যা এখনো পরিশোধ করেনি। সরকারি বেসরকারি এসব প্রতিষ্ঠানে অন্য সবকিছুর জন্য ফান্ড থাকে, শুধু বিদ্যুৎ বিলের জন্য ফান্ড থাকে না- আক্ষেপ বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মকর্তার।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর