বৃহস্পতিবার, ১৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

শুষ্ক মৌসুমে মাটি কাটার মহোৎসব

নেপথ্যে রাজনৈতিক প্রভাবশালী মহল

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে শুষ্ক মৌসুম ঘিরে মাটি কাটার মহোৎসব চলছে। বিভিন্ন উপজেলায় কৃষিজমির টপসয়েল, পাহাড়, টিলা, পুকুর ও বনাঞ্চলের মাটি কেটে উজাড় করা হচ্ছে। এসব মাটির বেশির ভাগ যাচ্ছে ইটভাটায়। কিছু মাটি ব্যবহার হচ্ছে আবাসন খাতে। কিছু এলাকায় প্রশাসনের অভিযানের পরও থামছে না মাটি কাটা। কোথাও কোথাও প্রশাসনের নাকের ডগায় মাটি কাটলেও সেদিকে ভ্রুক্ষেপ নেই। আর বেশির ভাগ এলাকায় মাটি কাটার সঙ্গে স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীদের জড়িত থাকার অভিযোগ আছে। জেলা প্রশাসন সূত্র জানান, অবৈধভাবে মাটি কাটার বিরুদ্ধে কিছু কিছু উপজেলায় ইউএনও-এসিল্যান্ডরা অভিযান পরিচালনা করছেন। গত মাসের শেষে এবং চলতি মাসের শুরুতে চট্টগ্রামের বিভিন্ন উপজেলায় এক ডজনের বেশি অভিযান হয়েছে। কিন্তু বেশির ভাগ ক্ষেত্রে রাতের আঁধারে মাটি কাটায় অপরাধীদের শনাক্ত করা সম্ভব হচ্ছে না। আবার লোকবলস্বল্পতার কারণেও কিছু এলাকায় অভিযান করা যাচ্ছে না। চট্টগ্রামের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) মো. আবদুল মালেক বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘গণমাধ্যম কিংবা ক্ষতিগ্রস্ত লোকজনের কাছ থেকে যখনই খবর পাচ্ছি, তখনই স্থানীয় প্রশাসনকে দিয়ে অভিযান পরিচালনা করছি। অনেক সময় দুর্গম এলাকা হলে কিংবা দেরিতে খবর পেলে অভিযানের আগে অভিযুক্তরা সরে যায়। এর পরও কৃষিজমি ও পাহাড় রক্ষা করতে আমরা চেষ্টা করে যাচ্ছি।’ সংশ্লিষ্টরা জানান, মাটি কেটে বিক্রি করতে উল্লেখযোগ্য পুঁজি না থাকায় স্থানীয় রাজনৈতিক প্রভাবশালীরা প্রতি বছর শুষ্ক মৌসুম ঘিরে মাটি কাটার মহোৎসব করে। পাহাড় কেটে মাটি বিক্রির কারণে পরিবেশের ভারসাম্য হুমকিতে পড়ছে, জীববৈচিত্র্য ও কৃষিজমি ধ্বংস হচ্ছে। আবার মাটি কাটার কাজে ব্যবহৃত ড্রামট্রাকের বেশির ভাগই অবৈধ। এসব যানবাহনের বৈধ কাগজপত্র না থাকার পরও ট্রাফিক পুলিশের পক্ষ থেকে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না। খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এক মাস ধরে বাঁশখালী উপজেলার পাহাড়ি এলাকায় মাটি কেটে বিক্রি করছে স্থানীয় মাটিখেকোরা। উপজেলার নিমতলা, ধুইল্যাঝিরি, বড় বিলসহ বিভিন্ন এলাকায় রাতের আঁধারে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কাটা হচ্ছে। এসব মাটির বেশির ভাগ যাচ্ছে স্থানীয় ইটভাটাগুলোয়। কিছু মাটি যাচ্ছে বসতভিটা তৈরি ও বিভিন্ন স্থান ভরাটের কাজে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বৈলছড়ির স্থানীয় বাসিন্দা নুরুল আলম, মোহাম্মদ আলমগীরসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে একটি চক্র প্রতিদিন রাতের আঁধারে এক্সকেভেটর দিয়ে মাটি কেটে ড্রাম ট্রাকে করে নিয়ে যাচ্ছে। ভোর হওয়ার আগেই তারা স্থান ত্যাগ করছে। বন বিভাগের কালীপুর রেঞ্জের কর্মকর্তা শফি আলম বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, বিষয়টি নজরে আসার পর ঘটনাস্থলগুলো পরিদর্শন করে দস্যুদের তালিকা তৈরি করে ঊর্ধ্বতন মহলকে জানানো হয়েছে। শিগগিরই অপরাধীদের আইনের আওতায় আনা হবে। বাঁশখালীর মতো একই অবস্থা বোয়ালখালী উপজেলায়। যেসব জমির টপসয়েল কাটা হচ্ছে ওইসব জমি উর্বরতা হারিয়ে রুক্ষ হয়ে যাচ্ছে। আবার এসব মাটি অন্য জমিতে ভরাট করে কৃষিজমি নষ্ট করা হচ্ছে। অন্যদিকে ৫-১০ ফুট গভীর করে মাটি কাটার ফলে আশপাশের জমিগুলোয়ও ভাঙন দেখা দিচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, বোয়ালখালীর বেঙ্গুরা, তালুকদারপাড়া, আমুচিয়া, জ্যৈষ্ঠপুরা, খরণদ্বীপ, চরখিজিরপুর, কঞ্জুরী ও পোপাদিয়ায় শুষ্ক মৌসুমের শুরু থেকে এক্সকেভেটর দিয়ে টপসয়েল কেটে নেওয়া হচ্ছে। কঞ্জুরী এলাকায় স্থানীয় ইউপি সদস্য আবদুল জলিল, তালুকদারপাড়ায় ছাদেক নামে এক ব্যক্তি সিন্ডিকেট করে মাটি কাটছেন বলে অভিযোগ আছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর