শনিবার, ১৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার-কুয়াকাটা

কোনো হোটেল খালি নেই, ভাড়া বেড়েছে কয়েক গুণ

কক্সবাজার ও কলাপাড়া প্রতিনিধি

পর্যটকে টইটম্বুর কক্সবাজার-কুয়াকাটা

কক্সবাজার সৈকতের সুগন্ধা পয়েন্টে গতকাল পর্যটকদের উপচে পড়া ভিড় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

শীতের শেষে সাপ্তাহিক ছুটির দিনে কক্সবাজার ও কুয়াটাকায় লাখ লাখ পর্যটকের সমাগম ঘটেছে। পর্যটকদের ভিড় বাড়ার সঙ্গে তাল মিলিয়ে হোটেল-মোটেলের ভাড়াও বেড়েছে কয়েক গুণ। এর পরেও এসব আবাসনে কোনো সিট খালি নেই। আগাম বুক হয়ে আছে সব সিট।

কক্সবাজারে গতকাল সকালে সরেজমিনে দেখা গেছে, হোটেল-মোটেলে নির্ধারিত ভাড়ার চার্ট রাখার নিয়ম থাকলেও কোনো হোটেলেই তা নেই। হোটেল লজ, গ্যালাক্সি, বিচওয়ে, বিচ রিসোর্ট, হোয়াইট অর্কিডসহ বেশ কয়েকটি হোটেলে ঘুরে দেখা গেছে, ২১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তাদের কোনো রুমই খালি নেই। আর এসব হোটেলে প্রতিটি রুম (নরমাল) সাড়ে ৪ হাজার থেকে সর্বোচ্চ ৮ হাজার টাকায় ভাড়া হয়েছে। কক্সবাজার হোটেল-মোটেল গেস্ট হাউস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আবুল কাশেম সিকদার জানান, বৃহস্পতিবার রাত থেকে সব হোটেলের রুম বুকিং। তাই পর্যটকরা রুম পাচ্ছেন না। অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, ‘সেটি আমার জানা নেই। তবে কিছু অসাধু ব্যবয়াসী নিচ্ছে।’ রাজবাড়ী থেকে আগত পর্যটক সোয়াব বলেন, সকালে কক্সবাজার এসেছি। কোথাও রুম নেই। হোটেলে রুম না পেয়ে সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পাশে রমজান গেস্ট হাউস নামে একটি কটেজে গিয়ে রুম চাইলে একদিনের জন্য ৮ হাজার, দুই দিনের জন্য ১০ হাজার টাকা চায়। তারপর ওই কটেজে রুম বুকিং দিলেও রুমে গিয়ে দেখি রুমের সঙ্গে ওয়াশরুম নেই। এই রুমের ভাড়া ১ হাজার টাকা দিলে লস হবে। এখন রাতে ফিরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। ঢাকা থেকে আসা আরেক পর্যটক জিহান বলেন, ফ্যামিলি নিয়ে ঘুরতে এসেছিলাম। এখানে কোথাও রুম খালি নেই। যেসব রুম খালি আছে সেগুলো কোনো মানের নয়। রুমগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। তার মধ্যে ৫ হাজার টাকা চায়। কী করব বুঝতে পারছি না। কক্সবাজারে বেড়াতে আসা শিক্ষার্থী সাদমান বলেন, আমরা ঢাকা থেকে কয়েকজন বন্ধু বেড়াতে এসেছি। এখানে এসে শহরের গণপূর্ত ভবনের পাশে গড়ে ওঠা গ্রিন কক্স এবং কক্স হিলটপ হোটেলে রুম ভাড়া নিতে গেলে প্রতি রুম সাড়ে ৮ হাজার চায়। এক দিনের জন্য নাকি রুম ভাড়া দিতে মালিকপক্ষ নিষেধ  করেছে। রুমগুলো দেখে মনে হলো এটি সর্বোচ্চ ১ হাজার টাকা হবে। পর্যটক বেশি আসায় হোটেল ব্যবসায়ীরা এমন আচরণ করছে। কয়েকজন পর্যটক অভিযোগ করেন, হোটেল লজ নামে একটি আবাসিক হোটেলের দুই হাজার টাকার কক্ষের ভাড়া উঠেছে ৭ থেকে ৮ হাজার টাকা। এ বিষয়ে কক্সবাজার জেলা প্রশাসনের পর্যটন সেলের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মাসুদ রানা বলেন, ‘রুম ভাড়া বেশি নেওয়ার অভিযোগটি আমরা অনুসন্ধান করে ব্যবস্থা নিচ্ছি। পর্যটক হয়রানি হলে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না।’ এ ছাড়া কুয়াকাটায় পিকনিক পার্টিসহ শিক্ষা সফরে আসা পর্যটকদের পদচারণে মুখরিত হয়ে উঠেছে সব কটি পর্যটন স্পট। দীর্ঘ ১৮ কিলোমিটার সৈকতে তিল ধরনের ঠাঁই নেই। বৃহস্পতিবার রাত থেকে শত শত বাস, মিনিবাস এবং প্রাইভেট কারযোগে এসব পর্যটক আসতে শুরু করেন। প্রায় চার শতাধিক আবাসিক হোটেল-মোটেল এবং রিসোর্টগুলোর সব রুম বুকিং হয়ে গেছে। গঙ্গামতি, ফাতরাবন, সৈকত-সংলগ্ন নারিকেল বাগান, তালবাগান, ঝাউবন এবং জাতীয় উদ্যানসহ বিভিন্ন পর্যটন স্পট এখন পর্যটকদের হইহুল্লড়ে এখন সরগরম। পর্যটকরা জানান, বেশ আনন্দ উল্লাস করেছি। সব কটি পর্যটন স্পট ঘুরে দেখেছি। ভালোই লেগেছে। তবে এখানকার হোটেল ভাড়াটা একটু বেশি। এ ছাড়া খাবার রেস্তোরাঁগুলোর খাবারের মান তেমন ভালো ছিল না বলে পর্যটকদের আভিযোগ। কুয়াকাটা হোটেল মোটেল ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক মোতালেব শরীফ বলেন, রেকর্ড সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। কুয়াকাটার সব হোটেল মোটেল ও রিসোর্টের রুম বুকিং হয়ে আছে। একই সঙ্গে দেড় শতাধিক খাবার হোটেল ও রেস্তোরাঁতেও বিক্রি বেড়েছে। এক কথায় কুয়াকাটা এখন পর্যটকের আগমনে বাণিজ্যিকভাবে গতিশীল হয়েছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর