সোমবার, ১৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক রিমান্ড শেষে স্ত্রীসহ কারাগারে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে কারাগারে পাঠানো হয়েছে। গৃহকর্মী প্রীতি উরাংয়ের মৃত্যুর ঘটনায় করা মামলায় রিমান্ড শেষে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়। গতকাল শুনানি শেষে ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট রাজেশ চৌধুরীর আদালত কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এর আগে চার দিনের রিমান্ড শেষে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনাল টিমের পরিদর্শক মোহাম্মদ শরীফুল ইসলাম আসামিদের আদালতে হাজির করে কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন।

গত ১৩ ফেব্রুয়ারি ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আসামিদের চার দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গত ৭ ফেব্রুয়ারি আসামিদের রিমান্ড ও জামিনের আবেদন নামঞ্জুর করে তিন দিনের জেলগেটে জিজ্ঞাসাবাদের নির্দেশ দেন আদালত। ওইদিন সকালে ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের বিরুদ্ধে মামলাটি দায়ের করেন গৃহপরিচারিকা প্রীতি উরাংয়ের বাবা লুকেশ উরাং। মামলায় অবহেলাজনিত মৃত্যুর অভিযোগে দন্ডবিধি আইনের ৩০৪ (ক) ধারায় অভিযোগ করা হয়েছে।

জানা গেছে, ৬ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবাসিক ভবনের নবম তলা থেকে পড়ে প্রীতি উরাং নামে এক কিশোরী গৃহপরিচারিকার মৃত্যু হয়। ১৫ বছর বয়সী ওই কিশোরী ভবনের বাসিন্দা ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় কাজ করত। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মিত্তিঙ্গা গ্রামে। বাবার নাম লুকেশ উরাং। পরে মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ মেয়েটির লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ মর্গে পাঠায়। মামলার তদন্ত কর্মকর্তা জানিয়েছেন, রিমান্ডে আসামিদের ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে তারা মামলার ঘটনার বিষয়ে একাধিক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। তবে যেসব তথ্য পাওয়া গেছে সেটি যাচাই-বাছাই করে দেখা হচ্ছে। প্রীতি উরাং মৃত্যুর আগে গত বছরের ৪ আগস্ট একই বাসায় একই জানালা দিয়ে ফেরদৌসী নামে সাত বছরের একটি কাজের মেয়ে নবম তলা থেকে নিচে পড়ে যায়। পরে চিকিৎসা করলে সে প্রাণে বেঁচে যায়। তখন ওই ঘটনায় আসামিদের বিরুদ্ধে মোহাম্মদপুর থানায় একটি মামলা হয়। তদন্তসংশ্লিষ্টরা বলেন, প্রীতির বাবা-মা আসামিদের মোবাইলের মাধ্যমে মাঝে-মধ্যে কথা বলতে চাইত। প্রীতি অনেক কান্নাকাটি করত এবং আসামি সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারের চাপে ঠিকমতো কথা বলতে পারত না। এমনকি আত্মীয়স্বজন ঢাকায় এলে তাদের সঙ্গে দেখা করার সুযোগ পেত না প্রীতি। মামলার তদন্তসংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা ডিবির তেজগাঁও বিভাগের এডিসি মো. আনিচ উদ্দীন বলেন, প্রীতির মৃত্যুর ঘটনায় সৈয়দ আশফাকুল হক ও তার স্ত্রী তানিয়া খন্দকারকে চার দিনের রিমান্ড শেষে রবিবার আদালতে পাঠানো হয়েছে। তারা অনেক প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেছেন। আমরা যেসব তথ্য-উপাত্ত পেয়েছি তা যাচাই-বাছাই করছি। এর আগেও একই বাসায় একজন গৃহকর্মী নিচে পড়ে গিয়েছিল। সব দিক বিবেচনা করে তদন্ত এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। আশা করছি তদন্তের সার্বিক বিষয়ে তদন্ত ও ময়নাতদন্ত রিপোর্ট হাতে পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ ও ঘটনার নেপথ্য জানা যাবে।

ডেইলি স্টার সম্পাদককে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের’ খোলা চিঠি : ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি স্টারের নির্বাহী সম্পাদক সৈয়দ আশফাকুল হকের বাসায় প্রীতি উরাং নামে এক শিশু গৃহকর্মীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে দেওয়া সম্পাদক মাহফুজ আনামের এক বিবৃতিতে হতাশা ব্যক্ত করেছে ‘নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ’ নামে একটি সংগঠন। ঘটনার ১০ দিন পর হলেও এই বিবৃতি প্রশংসনীয় উল্লেখ করে তারা বেশকিছু প্রশ্নতুলেছেন এবং ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় পত্রিকাটি ভূমিকা রাখবে সেই প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছে।

গতকাল এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে তারা এ কথা জানান। খোলা চিঠিতে বলা হয়েছে, আপনার প্রতিষ্ঠান কি শিশু শ্রমিক রাখার বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে? হত্যার মতো গুরুতর অভিযোগ এবং জেলখানায় বন্দি আসামিকে সাময়িক বরখাস্ত না করা কি গণমাধ্যমের নৈতিকতা ও মূল্যবোধগত বিষয়? ব্যক্তির অপরাধের দায় কি দ্য ডেইলি স্টার-এর? শিশু প্রীতি ও ফেরদৌসীর সঙ্গে কি ন্যায়বিচার হয়েছে? কেন বারবার একই বাড়িতে এমন ঘটনা ঘটছে- বিষয়টি কি একটি দায়িত্বশীল গণমাধ্যম হিসেবে আপনি বিবেচনায় নিয়েছেন?

নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগের খোলা চিঠিতে আরও বলা হয়, আমরা বিশ্বাস করি, দ্য ডেইলি স্টারও একই প্রশ্নের মধ্যেই ঘুরপাক খাচ্ছে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবেই সেগুলোকে আলোচনায় তুলতে চাইছে না। খোলা চিঠিতে জানানো হয়, উন্নত জীবন পেতে শিশু প্রীতিদের গৃহকর্মীর কাজে ঢাকায় আসাকে তারা সমর্থন করে না। পাশাপাশি তারা আহ্বান জানায়, অবিলম্বে পত্রিকাটি আশফাকুল হককে দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান এবং প্রীতি উরাং ও ফেরদৌসী বেগমের পরিবারকে ন্যায়বিচার প্রাপ্তিতে সহায়তা করবে।

সম্পাদকের দেওয়া নোটের সমালোচনা করতে গিয়ে নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাহবাগ তাদের যুক্তি তুলে ধরে। তারা তাদের প্রতিক্রিয়ায় বলে, আপনি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বিচারিক প্রক্রিয়া শেষ হওয়া পর্যন্ত অপেক্ষায় আছেন, উল্লেখ করেছেন। অথচ একই ব্যক্তির বিরুদ্ধে পর পর একই ধরনের দুটি অভিযোগ উঠে এসেছে, যা আপনি অনুধাবনে ব্যর্থ হয়েছেন। অভিযোগটি বিচারাধীন থাকার পরও আপনি তা বিবৃতিতে উল্লেখ করেননি। এমনকি আপনার পত্রিকার পক্ষ থেকে অন্যান্য ঘটনার মতো এ দুটি ঘটনায় সরেজমিন অনুসন্ধান করে বিশ্লেষণধর্মী ও তুলনামূলক আলোচনার প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়নি, যা পত্রিকার পক্ষপাতদুষ্ট আচরণ।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর