মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

ভবন নির্মাণ আইন মানছে না কেউ

রাজশাহীতে আরডিএ নিষ্ক্রিয়, প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় একের পর এক অপকর্ম

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

ভবন নির্মাণ আইন মানছে না কেউ

রাজশাহী নগরীর দেবিশিংপাড়ার বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলীর আধাপাকা বাড়ির পাশেই বিশাল ভবন নির্মাণ করছেন গোলাম আজম। রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) অনুমোদিত নকশার বাইরে গিয়ে এ ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এ কারণে আরডিএ’র কাছে অভিযোগ করে বীর মুক্তিযোদ্ধা এরশাদ আলীর পরিবার। আরডিএ অভিযোগ তদন্ত করে ওই ভবন নির্মাণে অনিয়মের সত্যতা পায়। নির্মাণকাজ বন্ধ রাখার পাশাপাশি ভবনটির চারদিকের প্ল্যানবহির্ভূত বর্ধিত অংশ ভেঙে ফেলতে বা সরিয়ে নিতে ২০২৩ সালের নভেম্বরে চিঠি দেয় আরডিএ। কিন্তু ওই নির্দেশনা অমান্য করে ভবনটির অবৈধ অংশ না ভেঙেই গোলাম আজম ভবনের নির্মাণকাজ অব্যাহত রেখেছেন। এরই মধ্যে ভবনটির চার তলা নির্মাণের পর পাঁচ তলার জন্য কলাম ঢালাই দেওয়া হচ্ছে। একইভাবে পরিকল্পনাবহির্ভূত আরেকটি বহুতল ভবন নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে নগরীর রানীবাজার টাইলসপট্টি এলাকার একটি ড্রেন দখল করে। এ ভবনের মালিকানায় আছেন মো. পাভেল, তার মা ও বোন। অভিযোগ পেয়ে আরডিএ ভবনটির মালিককে নির্মাণকাজ বন্ধের পাশাপাশি কারণ দর্শাতে বলে। সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, নির্মাণকাজ এখনও চলছে। নগরীর লক্ষ্মীপুরে জিপিওর উত্তরে একটি বহুতল ভবন নির্মাণের কাজ শুরু করা হয় তিন বছর আগে। বিল্ডিং কোড অমান্য করে ভবন নির্মাণ করা হয়। একপর্যায়ে ভবনটির দক্ষিণের বাড়িতে ফাটল দেখা দেয়। ভূক্তভোগী বাড়ির মালিক তখনই আরডিএকে লিখিতভাবে অভিযোগ করেন। কিন্তু একাধিকবার কারণ দর্শাতে বলার পরও এর নির্মাণকাজ বন্ধ করতে পারেনি আরডিএ। গত বছর শেষের দিকে ভবনটির নির্মাণকাজ শেষ হয়। ভবনটি বর্তমানে মঞ্জু হাসপাতাল অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক সেন্টারকে ভাড়া দেওয়া হয়েছে। অনুসন্ধানে উঠে এসেছে, রাজশাহীজুড়ে প্রভাবশালীদের ছত্রছায়ায় বিল্ডিং কোড অমান্য করে এভাবে একের পর এক বহুতল ভবন নির্মাণ করা হচ্ছে। এসবের বিরুদ্ধে কার্যকর ও দৃষ্টান্তমূলক কোনো পদক্ষেপ নিতে দেখা যাচ্ছে না সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে।

আরডিএ জানায়, রাজশাহী মহানগরীতে গত দুই বছরে ভবন নির্মাণের সংখ্যা বেড়েছে দ্বিগুণ। প্রতি বছর ১ হাজারের বেশি নতুন ভবন নির্মাণের আবেদন জমা পড়ছে অথরাইজড শাখায়। তবে অধিকাংশ ভবনই নির্মাণ করা হচ্ছে আরডিএ অনুমোদিত নকশার বাইরে। ব্যক্তিমালিকানাধীন বাড়ির পাশাপাশি ডেভেলপার বা কনস্ট্রাকশন ফার্মগুলোও এমন অনিয়মে জড়িয়ে পড়ছে। প্ল্যানবহির্ভূত একাধিক ভবন নির্মাণকারীর সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, তারা ভবনের প্ল্যানের অনুমোদনের জন্য আরডিএর নির্ধারিত ফির চাইতে অতিরিক্ত অর্থ দিয়ে থাকেন। প্ল্যানার বা নকশা প্রস্তুতকারীদের মাধ্যমে এ অর্থের লেনদেন হয়। জমি ও ভবনের আয়তনের ওপর ভিত্তি করে অতিরিক্ত অর্থের পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়, যা ২০ হাজার থেকে ২ লাখ টাকা পর্যন্ত হয়। এ ব্যাপারে আরডিএ’র অথরাইজড অফিসার আবুল কালাম আজাদ নিয়মের কথা উল্লেখ করে বলেন, ‘দেবিশিংপাড়ার গোলাম আজমের ভবনের নকশাবহির্ভূত অংশ ভাঙতে বলা হয়েছে; রানীবাজারের মো. পাভেলকে ভবনটির কাজ স্থগিত রাখতে বলা হয়েছে।

এ ছাড়া লক্ষ্মীপুর জিপিওর উত্তরের ভবনটির মালিকের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। অভিযোগ পেলে ইমারত নির্মাণ আইন অনুসারে ব্যবস্থা নেওয়া হয়। অভিযুক্তকে কারণ দর্শানোর সুযোগ দেওয়া হয়। এসব বিষয়ে তদারকির জন্য আরডিএ’র আলাদা কমিটি আছে। কারণ দর্শাতে বলার পাশাপাশি কাজ বন্ধ না করা হলে আমরা আদালতের কাছে যাই।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর