মঙ্গলবার, ২০ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদেশি ফল ও সবজি চাষে ভাগ্যবদল সুমনের

নিজস্ব প্রতিবেদক, বরিশাল

বিদেশি ফল ও সবজি চাষে ভাগ্যবদল সুমনের

বিদেশি জাতের ফল ও সবজি চাষে ভাগ্য পাল্টেছে আবু বকর সিদ্দিক সুমনের। কৃষিতে সাফল্যের স্বীকৃতিস্বরূপ ইতোমধ্যে দেশি-বিদেশি তিনটি পুরস্কার পেয়েছেন তিনি। তার সাফল্য দেখে নাগরিকত্বসহ বসবাসের ঘর ও কৃষি জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিয়েছে নেদারল্যান্ডস সরকার। পৃথিবীর ৩৭টি দেশ ঘুরে ৭৪ বছর বয়সের আবু বকর সিদ্দিক সুমন বরিশাল জেলার বাবুগঞ্জ উপজেলার বায়লাখালী গ্রামে নিজের জন্মস্থানে জীবনের সফলতার গল্প বুনতে শুরু করেছেন। এক সময়ে নুন আনতে পান্তা ফুরানো সুমনের এখন বার্ষিক আয় প্রায় ২০ লাখ টাকা। কৃষিতে সফল এই উদ্যোক্তা নিজে স্বাবলম্বী হওয়ার পাশাপাশি এলাকাবাসী এবং বিভিন্ন স্থান থেকে আসা কৃষি উৎসাহীদের দিচ্ছেন নানা পরামর্শ। এ জন্য বাড়ির সামনে করেছেন কৃষি পরামর্শ কেন্দ্র। সপ্তাহে তিন দিন সেখানে দূর-দূরান্তের মানুষ হাতে-কলমে শিখছেন এবং নানা পরামর্শ নিচ্ছেন।

প্রাইভেট কোম্পানিতে চাকরির সুবাদে পৃথিবীর ৩৭টি দেশ ঘুরে অর্জিত অর্থ দিয়ে দেশের মাটিতে কিছু জমি কেনেন সুমন। দেশে জটিল রোগে আক্রান্ত স্ত্রীর চিকিৎসায় চলে যায় প্রবাসে অর্জিত সব অর্থ। স্ত্রীর মৃত্যুর পর হতাশা নিয়ে আবারও বিদেশে যাওয়ার চিন্তাও করেছিলেন সুমন। এ সময় এক বন্ধুর পরামর্শে বাবুগঞ্জ উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা সাদিউজ্জামানের সঙ্গে দেখা করেন তিনি। সুমনকে স্থানীয় মৎস্য বিভাগ থেকে ৫০ হাজার টাকার একটি প্রদর্শনী মৎস্য খামার দিয়ে শুরু করার পরামর্শ দেন মৎস্য কর্মকর্তা সাদিউজ্জামান। এরপর আর পেছনে তাকাতে হয়নি তার।  বাবুগঞ্জের বায়লাখালী গ্রামে ২০২০ সালে প্রায় ৫০ শতাংশ জায়গায় একটি পুকুর খনন করে মাছ চাষ শুরু করেন তিনি। পুকুরের পাড়ে পেঁপে, লাউ, কুমড়া, সিমসহ বিভিন্ন সবজির আবাদ করেন সুমন।

২০২১ সালে তার প্রকল্প থেকে তেমন আয় না হলেও পরবর্তীতে আর একটি পুকুর খনন করেন তিনি। এক একর জমির দুটি পুকুরের পাড়ে রোপণ করেন উন্নত জাতের পেঁপে চারা। ২০২২ সালে প্রায় ৫ শতাধিক মাদায় ভারতের কাশ্মীরি ও শাহি জাতের পেঁপে চাষ করেন তিনি। একেকটি গাছে ৫ থেকে ৮ মণ পেঁপের ফলন পান তিনি। ওই বছর সব খরচ বাদে প্রায় ৬ লাখ টাকা লাভ করেন সুমন। নিজের শ্রম ও মেধা কাজে লাগিয়ে লাভের মুখ দেখে পুরোদমে শুরু করেন পেঁপে চাষাবাদ।  ২০২৩ সালে তার ওই খামার থেকে প্রায় ১৮ লাখ টাকা আয় করেছেন তিনি। এ বছর প্রতিটি ৪০ টাকা দরে উন্নত জাতের ৩ লাখ পেঁপে চারা বিক্রির অগ্রিম অর্ডার পেয়েছেন তিনি। ইতোমধ্যে দেড় লাখ চারা ডেলিভারিও দিয়েছেন।

এ ছাড়া পুকুরে মনসেক্স তেলাপিয়াসহ তিন জাতের মাছের সঙ্গে মাচা বানিয়ে উন্নত জাতের লাউ চাষ করে লাভবান হয়েছেন সফল উদ্যোক্তা সুমন। পেঁপে চাষের পাশাপাশি ঘেরের বেড়ার কাছে পরিত্যক্ত জমিতে এ বছর শ্রীলঙ্কান ব্লাক স্টোন ও স্মল সুইট জাতের মিষ্টি কুমড়ার চাষ করেছেন তিনি। এ বছর ইতোমধ্যে দেড় লাখ টাকার কুমড়া বিক্রি করেছেন। মাত্র ২০ হাজার টাকা খরচ করে কুমড়া চাষে এবার অন্তত ৩ লাখ টাকা আয়ের আশা তার।

গত চার বছরে কৃষিকাজের জন্য আন্তর্জাতিক পরিসর থেকেও পেয়েছেন স্বীকৃতি। গত ২ ডিসেম্বর পেয়েছেন দ্য ইন্টারন্যাশনাল ক্রিয়েটিভ আর্টস অ্যাওয়ার্ড। আমেরিকার ফ্লোরিডা ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি থেকে অ্যাওয়ার্ড ও মাসে মাসে পাচ্ছেন সম্মানী ভাতা। নেপাল সরকারের তরফ থেকেও পুরস্কারের ঘোষণা পেয়েছেন সুমন। নেদারল্যান্ডস সরকার সুমনকে নাগরিকত্বসহ ঘর ও কৃষি জমি দেওয়ার প্রস্তাব দিলেও তা গ্রহণ করেননি তিনি।

কৃষি উদ্যোক্তা আবু বক্কর সিদ্দিক সুমন জানান, ছোটবেলা থেকেই বাবার সঙ্গে অন্যের জমিতে কৃষি কাজ করেছেন তিনি। বিদেশ গিয়েও কাজের ফাঁকে বিভিন্ন কৃষি খামার ঘুরে অর্জন করেছেন অভিজ্ঞতা। দক্ষিণ আফ্রিকায় গিয়ে পেঁপে চাষে উদ্বুদ্ধ হন তিনি। দেশে ফিরে অভিজ্ঞতা কাজে লাগিয়ে নিজের জমিতে শুরু করেন পেঁপে চাষ। নিজের জমি ছাড়াও পরিসর বাড়াতে অন্য দুই স্থানে তিন একর জমিতে পেঁপের খামার গড়ে তুলেছেন তিনি।

কৃষক সুমনের ধারণা, লাখ লাখ টাকা খরচ করে বিদেশে না গিয়ে, সেই টাকা দিয়ে নিজ দেশে কৃষি কাজ শুরু করলে কম পরিশ্রমে অধিক লাভবান হওয়া সম্ভব। এ জন্য দরকার মনোবল ও দৃঢ় সংকল্প। সমাজের বেকার তরুণ শিক্ষিত যুবকদের কৃষিতে সম্পৃক্ত করার ইচ্ছা তার। এ জন্য নিজ উদ্যোগে কৃষি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র করে আগ্রহীদের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন তিনি।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর