বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

দুই শহীদ মিনার নির্মাণ প্রকল্প কতদূর

একটির টাকা পাইলিংয়ে শেষ অন্যটি নিয়ে টানাটানি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণে ২০২০ সালের ১৬ ডিসেম্বর ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন ভাষাসৈনিক অ্যাডভোকেট গোলাম আরিফ টিপু। দুই প্রতিষ্ঠানের টানাটানিতে নির্মাণ কাজ আজও শুরু হয়নি। আরেক শহীদ মিনার নির্মাণের টাকা পাইলিংয়েই শেষ হয়ে গেছে।

সূত্র মতে, নগরীর সোনাদীঘির উত্তর-পশ্চিমের ফাঁকা জায়াগায় রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য নির্ধারণ করা হয়। জমিটি জেলা পরিষদের। ২০২০ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হয়। চার বছরে সেখানে শহীদ মিনারের কাজ শুরু করা যায়নি। নির্ধারিত জমিটি বেদখল হতে শুরু হয়েছে। সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফাঁকা জায়গা পেয়ে সেখানে একাধিক দোকান করা হয়েছে। রাতে অন্ধকার স্থানটিতে বসে মাদকের আসর।

রাজশাহী সিটি করপোরেশন (রাসিক) ও জেলা পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, স্থানটিতে একসময় সার্ভে ইনস্টিটিউট ছিল। পরে ওই প্রতিষ্ঠানটি নগরীর নওদাপাড়ায় নিজস্ব জমিতে স্থানান্তর করা হয়। এরপর জেলা পরিষদের সেই জমিতে রাসিক কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য প্রকল্প হাতে নেয়। তবে জেলা পরিষদ জায়গাটিতে নিজেরাই তা নির্মাণের দাবি জানায়। রাসিক ও জেলা পরিষদ আলাদা দুটি দরপত্র প্রকাশ করে একই স্থানে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের। এ নিয়ে দেখা দেয় জটিলতা। ফলে ২০২০ সালে ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করা হলেও এখন পর্যন্ত সেখানে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজই শুরু করা সম্ভব হয়নি। দুই প্রতিষ্ঠান এখন অপেক্ষায় স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সিদ্ধান্তের।

এদিকে রাজশাহী কলেজের মুসলিম হোস্টেলে প্রায় ৬ বছর আগে ২০১৮ সালের অক্টোবরে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নির্মাণ কাজের উদ্বোধন করেন সিটি মেয়র এ এইচ এম খায়রুজ্জামান লিটন ও সদর আসনের তৎকালীন এমপি ফজলে হোসেন বাদশা। তবে কাজ শুরুর পর বরাদ্দ ফুরিয়ে যাওয়ায় আটকে আছে ঐতিহাসিক এই শহীদ মিনার নির্মাণের কাজ।

রাসিকের দেওয়া তথ্য মতে, ৪৯ লাখ ৯৫ হাজার টাকা ব্যয়ে মুসলিম হোস্টেলে দেশের প্রথম শহীদ মিনার নামে শহীদ মিনার নির্মাণের কাজটি ২০২০ সালের জুন মাসে শেষ হওয়ার কথা ছিল। কাজটির ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান সাবেরা এন্টারপ্রাইজ। পাইলিংয়েই প্রায় ৩৫ লাখ টাকার খরচ দেখায় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটির দাবি, প্রকল্পের অর্থের সংকুলান না হওয়ায় রাসিক পুরো অর্থ পরিশোধ করেনি। ফলে পুরো কাজ শেষ করা সম্ভব হয়নি।

রাসিকের প্রধান প্রকৌশলী নূর ইসলাম বলেন, আগের প্রকল্পের অর্থ ফুরিয়ে যাওয়ায় নতুন প্রকল্পে ওই কাজ ধরে রাখা হয়েছে। অনুমোদন পেলেই কাজ শুরু করা হবে।

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার প্রসঙ্গে তিনি জানান, নির্ধারিত জায়গায় আগে সার্ভে ইনস্টিটিউট ছিল। জায়গাটি জেলা পরিষদের। সিটি করপোরেশন চেয়েছিল সেখানে একটি দৃষ্টিনন্দন শহীদ মিনার নির্মাণ করতে। জেলা পরিষদের বাধার কারণে সম্ভব হচ্ছে না। রাজশাহী জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান বীর মুক্তিযোদ্ধা মীর ইকবাল জানান, নকশাসহ রাজশাহী কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার নির্মাণের দরপত্র আহ্বান করে নির্ধারিত পদ্ধতিতে ঠিকাদারকে কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। প্রকল্প ব্যয় ধরা হয়েছে প্রায় ৮ কোটি টাকা। তবে রাসিক ওই জায়গায় শহীদ মিনার নির্মাণের জন্য ডিপিপিতে প্রকল্পটি নিয়ে রেখেছে। ফলে ঠিকাদারের কাজ শুরু করা নিয়ে জটিলতা দেখা দেয়। স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি জানায় জেলা পরিষদ। চলতি মাসে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের সচিবের উপস্থিতিতে সভা হয়েছে। সেখানে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত হয়েছে। জেলা পরিষদই শহীদ মিনারটি নির্মাণ করবে।

সর্বশেষ খবর