বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

কক্সবাজারে ৫০ দিনে ভেসে এলো ৪১ মৃত মা কাছিম

কক্সবাজার প্রতিনিধি

কক্সবাজারে ৫০ দিনে ভেসে এলো ৪১ মৃত মা কাছিম

কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে একের পর এক ভেসে আসছে মৃত মা কাছিম। এসব কাছিমের অধিকাংশের পেট ভর্তি মিলছে ডিম। গত ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৫০ দিনে ভেসে এসেছে ৪১ মৃত ‘মা কাছিম’। এ ছাড়াও সাগরে আরও মৃত কাছিম ভাসছে বলেও জানান জেলেরা। উপকূলে ডিম দিতে আসার সময় জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে এদের মৃত্যু হতে পারে। এমনটাই মনে করছেন সামুদ্র বিজ্ঞানীরা। গতকাল সকালে উখিয়ার সোনাপাড়া সৈকতে সর্বশেষ দুটি মৃত মা কাছিম পাওয়া গেছে। এ দুটির পেটে মিলেছে ১৮৫টি ডিম। এ নিয়ে গত ৬ দিনে সমুদ্র উপকূলে ভেসে এসেছে ৮টি ‘মা কাছিম’। এ ৮টি কাছিমে পাওয়া গেছে ৭০০ ডিম। ১ জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ৪১টি মৃত ‘মা কাছিম’ ভেসে আসার সত্যতা স্বীকার করে কক্সবাজারে অবস্থিত বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) এর জ্যেষ্ঠ বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা মো. তরিকুল ইসলাম জানিয়েছেন। আরও বলেছেন, গতকাল সকালে উখিয়ার সোনাপাড়া সৈকতে সর্বশেষ দুটি অলিভ রিডলি মা কাছিম ভেসে আসে। দুটির পেটে ১৮৫টি ডিম পাওয়া গেছে। দুটির সামনের ও পিছনের ফ্লিপারগুলো মারাত্মকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত ছিল। ডিম দিতে উপকূলে আসার সময় জালে বা অন্য কোনোভাবে আঘাত প্রাপ্ত হয়ে এদের মৃত্যু হতে পারে। এ নিয়ে গত ৫০ দিনে ৪১টি মৃত কাছিম ভেসে এসেছে।

 

এর আগে ১৯ ফেব্রুয়ারি সৈকতের হিমছড়ি প্যারাসেলিয়ং পয়েন্টে ভেসে এসেছে ৯৫টি ডিম পেটে থাকা একটি মা কাছিম। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলে ভেসে আসে তিনটি মৃত মা কাছিম। কাছিমের পেটে মিলেছে ৩১০টি ডিম। এর আগে ১৭ ফেব্রুয়ারি সকালে কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের হিমছড়ি পয়েন্টে একটি মৃত মা কাছিম ভেসে এসেছে। পেটে ছিল ৯০টি ডিম। এর আগে ৩ দিনে উপকূলে দেখা মিলেছে ৩টি মৃত ডলফিন, ১টি মৃত পরপইস ও ১টি কচ্ছপ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি সৈকতের রেজুনদীর মোহনায় একটি অলিভ রিডলি বা জলপাই রঙের সামুদ্রিক মা কাছিমের মৃতদেহ এবং হিমছড়ি সৈকতে একটি মৃত ইরাবতী ডলফিন ভেসে আসে। বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউট (বোরি) এর দেওয়া তথ্য মতে, জানুয়ারি থেকে ২০ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের সোনাদিয়া, হিমছড়ি, সোনারপাড়া, ইনানী, টেকনাফ, সেন্টমার্টিন সৈকতে ৪১টি মৃত কাছিম পাওয়া গেছে। শুধু ৬ দিনে সৈকতে পাওয়া গেছে ৮টি মৃত মা কাছিম। কক্সবাজার সমুদ্র উপকূলের কাছাকাছি সাগরে মাছ ধরে ফেরা কয়েকজন জেলে জানান, সাগরে মাছ ধরার সময় কয়েকটি মৃত কাছিম ভাসতে দেখা গেছে। তাদের ধারণা, গভীর সাগরে বড় বড় ফিশিং ট্রলার নিয়ে মাছ ধরারত বড় সাইজের জালে এবং জাহাজ ট্রলিং নিয়ে মাছ ধরা রত জালে এসব কাছিম আটকা পড়ে মারা যায় বেশি। এ পরিস্থিতি উদ্বেগজনক মন্তব্য করে বাংলাদেশ সমুদ্র গবেষণা ইনস্টিটিউটের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. তৌহিদা রশীদ বলেন, কয়েকদিন ধরে ভেসে আসা মৃত সামুদ্রিক প্রাণীগুলোর নমুনা সংগ্রহ করে মৃত্যুর কারণ অনুসন্ধানে একদল বিজ্ঞানী কাজ করছেন। পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, সিংহভাগ মৃত কাছিমের পা ছেঁড়াসহ মৃতদেহে নানা স্থানে আঘাত রয়েছে। একইভাবে ভেসে আসা মৃত ডলফিন ও পরপইস এর দেহেও একই রকম আঘাতের চিহ্ন রয়েছে।

সর্বশেষ খবর