বুধবার, ২১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

মিছিল থেকে চুরি করা ফোন দিয়ে বন্ধু সেজে প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

মিছিল থেকে চুরি করা ফোন দিয়ে বন্ধু সেজে প্রতারণা

অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসে মো. আমির হোসাইন মোল্লার ফোনে। আমির কল রিসিভ করতেই বিপরীত প্রান্ত থেকে বলা হয়, বন্ধু চিনতে পেরেছিস? উত্তরে না বলে আমির। বিপরীত প্রান্তের ব্যক্তির এবার জিজ্ঞেস, তোর কোনো বন্ধু বিদেশে থাকে? আমির বিদেশে থাকা তার এক বন্ধুর নাম বলে। নাম বলতেই অপরপ্রান্তের ব্যক্তি তখন আমিরের সেই বন্ধুর রূপ ধারণ করে এবং জানায়, আমিই তোর সেই বন্ধু। হঠাৎ দেশে এসেছি। মা অসুস্থ ছিল। আজ হাসপাতালে মারা গেছে। টাকা-পয়সা নিয়ে আসতে পারিনি। জরুরিভিত্তিতে কিছু টাকা পাঠাতে পারবি। আমির বন্ধুর এমন বিপদে টাকা দিতে রাজি হয়ে যায়। তখন অপরপ্রান্তের ব্যক্তি আমিরকে অনুরোধ করে যে, আমার ফোনে কারও নম্বর নেই। আমাদের অন্য বন্ধুদের নম্বর দিস। আমির সরল বিশ্বাসে তাদের কয়েক বন্ধুর নম্বর দেয়। তখন তাদেরও কল করে একইভাবে কথা বলে টাকা নেয় অজ্ঞাত ব্যক্তি। দীর্ঘদিন ধরে এভাবে প্রতারণা করে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নেয় একটি চক্র। অবশেষে চক্রের মূলহোতা মো. সাইফুল ইসলাম ওরফে দুর্জয়কে রাজধানীর সবুজবাগ থেকে গ্রেফতার করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) মতিঝিল বিভাগ। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। গত ৬ মাসের বিশ্লেষণে দেখা গেছে, সে প্রায় শতাধিক সিম ব্যবহার করে আড়াই হাজার ব্যক্তিকে প্রতারণার উদ্দেশে ফোন দিয়েছে। তিনি বলেন, ৫ জানুয়ারি ঘটনাটি ঘটে। ভিকটিম আমিরসহ তার দুই বন্ধুকে আসামি সাইফুল কল করে নিজেকে ভিকটিমের বন্ধু আতিকুল্লাহ শাহ বলে পরিচয় দেয়। তার মায়ের মৃত্যু সংবাদ জানানোর পাশাপাশি জরুরিভিত্তিতে বিকাশে টাকা পাঠানোর জন্য অনুরোধ করে।

 বন্ধুর মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনতে পেয়ে তারা তিন বন্ধু মিলে তাৎক্ষণিক ১ লাখ ৬৯ হাজার টাকা বিকাশ এবং নগদের মাধ্যমে পাঠিয়ে দেয়। পরে ভিকটিম প্রতারণার বিষয়টি বুুঝতে পারলে থানায় অভিযোগ করেন। সেই সূত্র ধরে প্রতারককে গ্রেফতার করা হয়েছে। আসামি সাইফুল আগেও একাধিকবার আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক গ্রেফতার হয়েছে। সে নিজেকে জিনের বাদশা বলেও পরিচয় দিত। তার বিরুদ্ধে অস্ত্র, ছিনতাই ও প্রতারণাসহ ৯টি মামলা রয়েছে। প্রতারণার কাজে চুরি করা ফোন ব্যবহার করত প্রতারক সাইফুল। তার সহযোগী মির্জা ৩ জানুয়ারি নীলফামারীর ডিমলা থানা এলাকার একটি নির্বাচনি মিছিল থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত মোবাইল ফোনটি চুরি করে। পরে সেই ফোনটি তাকে দিলে সেটি দিয়েই প্রতারণা শুরু করে সাইফুল। ডিবি প্রধান বলেন, গ্রেফতার সাইফুলের বাড়ি নীলফামারীর ডোমার থানার ভারত-বাংলাদেশ সীমান্ত এলাকার প্রত্যন্ত একটি গ্রামে। সেখানে অবস্থান করে সে প্রতারণার কাজটি সম্পন্ন করে এবং পার্শ¦বর্তী লালমনিরহাটের বিভিন্ন বিকাশের দোকান থেকে ক্যাশ আউটের মাধ্যমে টাকা তুলে নেয়। পুরো নীলফামারীতে সে জিনের বাদশা নামে পরিচিত। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর উপস্থিতি টের পেলে সে ভারতে চলে যায়। সে প্রায় ১০ বছর ধরে প্রতারণা করে আসছিল। তার কয়েকজন সহযোগীও আছে। যাদের একটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে মোবাইল ফোন চুরি করে এবং আরেকটি গ্রুপ বিভিন্ন এলাকায় বিকাশের দোকান থেকে প্রতারণার মাধ্যমে অর্জিত টাকা ক্যাশ করে।

সর্বশেষ খবর