শুক্রবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

উত্তরের সড়কে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি

না দিলে চালককে নির্যাতন কিংবা ট্রাফিক আইনে মামলার হুমকি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

উত্তরের সড়কে প্রকাশ্য চাঁদাবাজি

উত্তরের জেলাগুলোর সড়ক পরিবহনে প্রকাশ্যেই চলছে চাঁদাবাজি। ট্রাকের আকার ও পণ্যের পরিমাণের ওপর নির্ধারিত হয় চাঁদার পরিমাণ। চাঁদা না দিলে চালককে নির্যাতন কিংবা ট্রাফিক আইনে মামলার ভয় দেখানো হয়। যার সুযোগ নিচ্ছেন ব্যবসায়ীরা। সড়কে যাতায়াত খরচ বৃদ্ধির অজুহাতে তারা বাড়াচ্ছেন পণ্যের মূল্য। বিষয়টি নজরে আসায় নড়েচড়ে বসেছে প্রশাসন। র‌্যাব এরই মধ্যে সড়কে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে বিভিন্ন জেলা থেকে ৬০ জনকে গ্রেফতার করেছে।

চাঁদাবাজিতে ব্যবহার করা হয় রাজনৈতিক ব্যক্তির পরিচয়, নয়তো পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের নাম। ট্রাক টার্মিনাল ইজারার নামে আদায় করা হচ্ছে অতিরিক্ত অর্থ। টার্মিনালে না দাঁড়িয়ে সড়ক দিয়ে গেলেও দিতে হয় চাঁদা। র‌্যাবের দেওয়া তথ্য মতে, চলতি ফেব্রুয়ারি মাসে রাজশাহী, জয়পুরহাট, চাঁপাইনবাবগঞ্জ ও নাটোরের বিভিন্ন সড়ক ও ট্রাক টার্মিনালে অভিযান চালিয়ে রসিদ বই, নগদ অর্থ, লাল ঝান্ডা ও লাঠিসহ ৬০ জনকে আটক করেছে। তাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা করে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। নগরীর খড়খড়ি হাটে সবজি বোঝাই ট্রাকচালক রুস্তম আলী বলেন, বাঘা, চারঘাট, খড়খড়ি বাইপাসসহ ঢাকা পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন মোড়ে প্রকাশ্যে ট্রাক থেকে চাঁদা তোলা হয়। স্লিপে যদি ৪০ টাকা লেখা থাকে আদায় করা হয় ৪০০ টাকা। এভাবে ঢাকা পর্যন্ত যেতে মালবোঝাই ট্রাককে দিতে হয় অন্তত ৩ থেকে ৫ হাজার টাকা। বাগমারা উপজেলার মাছবোঝাই ট্রাকের চালক হেদায়েত উল্লাহ বলেন, ‘রাস্তায় পদে পদে চাঁদা দিতে হয়। চাঁদা না দিলে ওরা আমাদের আটকে রাখে। সার্জেন্টকে দিয়ে মামলার ভয় দেখায়। বাধ্য হয়ে তাদের চাঁদা দিতে হয়। এই টাকা মহাজনরা ঠিকই মালের সঙ্গে দাম ধরে আদায় করে।’ রাজশাহী সড়ক পরিবহন মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক মতিউল ইসলাম টিটো বলেন, ‘আমরা মালিকরাও সড়কে চাঁদাবাজির বিপক্ষে। পরিবহন সংক্রান্ত যে কোনো সভা-সমিতিতে আমরা এর বিরুদ্ধে বক্তব্য দিচ্ছি। র‌্যাবের যে অভিযান চলছে, তাকেও আমরা স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝির কারণে কিছু নিরীহ শ্রমিকও নাজেহাল হচ্ছে।’ রাজশাহী জেলা মোটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক মাহাতাব হোসেন বলেন, ‘মালিক ও শ্রমিক সংগঠনগুলোর যৌথ সিদ্ধান্তেই সংগঠনের কল্যাণ ব্যয় মেটাতে চাঁদা তোলা হচ্ছে। এটা অবৈধ নয়। পরিবহন থেকে আমাদের শ্রমিকরাই টাকা তোলে; এটি নতুন ঘটনা নয়। আর রসিদ ছাড়া টাকা আদায়ের অভিযোগ সত্য নয়।’ র‌্যাব-৫ এর অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, ‘আমরা কঠোরভাবে চাঁদাবাজি নিয়ন্ত্রণ করছি। অভিযান চালিয়ে ৬০ চাঁদাবাজকে হাতেনাতে আটক করেছি। চাঁদাবাজদের যেখানে পাওয়া যাবে আমরা তাদের গ্রেফতার করব।’ গত ৭ ফেব্রুয়ারি র‌্যাব-৫ এর একটি দল চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার আমনুরা সড়কে অভিযান চালিয়ে পরিবহনে চাঁদাবাজির অন্যতম হোতা রফিকুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করে। ৬ ফেব্রুয়ারি আটক করা হয় আরও দুজনকে। ৫ ফেব্রুয়ারি নাটোরে আলাদা অভিযান চালিয়ে আটক করা হয় ২৫ জনকে। একই দিন জয়পুরহাট জেলার কলাবাজার এলাকা থেকে কাঁচা সবজি ও পণ্যবাহী ট্রাকের গতিরোধ করে চাঁদাবাজির অভিযোগে নগদ টাকা ও সরঞ্জামসহ একজনকে আটক করা হয়।

 এ ছাড়া রাজশাহীর বাঘা উপজেলার বঙ্গবন্ধু মোড়ে সিএনজি অটোরিকশা স্ট্যান্ড এলাকা থেকে ৭ ফেব্রুয়ারি কাঁচামালবোঝাই ট্রাক, সিনএনজি অটোরিকশা ড্রাইভারদের গতিরোধ করে চাঁদাবাজি চক্রের মূল হোতা আরমান রানাসহ চারজনকে আটক করে র‌্যাব। ৪ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী নগরীর শাহ মখদুম ট্রাক টার্মিনালে অভিযানে চাঁদাবাজ চক্রের অন্যতম হোতা আক্তারুজ্জামান হেলেনসহ চারজনকে আটক করা হয়। একই দিন নগরীর কাটাখালী বাসস্ট্যান্ডে অভিযান পরিচালনা করে আশরাফুল ইসলামসহ তিনজনকে আটক করে র‌্যাব।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর