শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিনটি দুই মাসের বেশি সময় বন্ধ। বিশেষজ্ঞ ডাক্তার ও জনবল না থাকায় আধুনিক এ মেশিনটির সেবা থেকে বঞ্চিত গুরুতর হৃদরোগীরা। এখানে সেবা না পেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ও সময় খরচ করে ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হাসপাতালসূত্রে জানা যায়, হৃদরোগীদের চিকিৎসায় সরকার ২০১৩ সালে বরিশাল শেরেবাংলা মেডিকেল কলেজ (শেবাচিম) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগে প্রায় ৯ কোটি টাকা মূল্যের একটি এনজিওগ্রাম মেশিন সরবরাহ করে। কিন্তু মেশিনটি পরিচালনার জন্য দক্ষ জনবল না থাকায় এনজিওগ্রাম মেশিনটি ছিল বাক্সবন্দি। পরে ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম সালেহ উদ্দীনকে বরিশালে পদায়ন করা হলে তিনি এনজিওগ্রাম মেশিনটির কার্যক্রম শুরু করেন। ২০১৪ সালের ২৪ জুলাই তিনি রোগীদের করনারি এনজিওপ্লাস্টি (হার্টে রিং স্থাপন) শুরু করেন। এর আগে গুরুতর হৃদরোগীদের এ সেবা পেতে ঢাকায় যেতে হতো। ডা. এম. সালেহ উদ্দীন করোনারি এনজিওপ্লাস্টির (হার্টে রিং স্থাপন) পাশাপাশি রোগীর হৃৎপিন্ডে (হার্টে) ডুয়েল চেম্বার পেসমেকার প্রতিস্থাপন এবং কিডনিতে রিং সংযোজন করে আসছিলেন। এর মধ্যে দুবার মেশিনের ত্রুটি দেখা দিলেও আবার মেশিনটি সচল করা হয়।
প্রতি মাসে এখানে ২০-২৫ জন রোগীর এনজিওগ্রাম করা হতো। কিন্তু ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহে একমাত্র ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ ডা. এম. সালেহ উদ্দীনকে পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজে বদলি করার পর থেকে দক্ষ জনবলের অভাবে এনজিওগ্রাম মেশিনটির কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে। হাসপাতালের ক্যাথ ল্যাবের ইনচার্জ নার্সিং কর্মকর্তা শামীমা ইয়াসমিন জানান, এনজিওগ্রাম হলো হৃদরোগীর ডায়াগনসিস। অনেক রোগীকে ডায়াগনসিস করে ঢাকা থেকে সাপোর্ট স্টাফ এনে এক দিনে হার্টে রিং স্থাপন করা হতো। একটি এনজিওগ্রাম মেশিন চালাতে ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ, দক্ষ টেকনোলজিস্ট এবং নার্স দরকার হয়। দুই মাস ধরে ইন্টারভেনশনাল হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ নেই। ৩ ফেব্রুয়ারি একমাত্র দক্ষ টেকনোলজিস্ট অবসরে গেছেন। তিনি একমাত্র সেবিকা হিসেবে রয়েছেন। এ কারণে এনজিওগ্রাম মেশিনটি বন্ধ। শেবাচিম হাসপাতালের ক্যাথ ল্যাবের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মো. আফজাল হোসেন জুয়েল জানান, শেবাচিমে রয়েছে একমাত্র এনজিওগ্রাম মেশিন। সাপোর্ট স্টাফ না থাকলেও ডা. এম. সালেহ উদ্দীন বিভিন্ন জায়গা থেকে দক্ষ জনবল এনে মেশিনটির কার্যক্রম চালাতেন। কিন্তু তিনি বদলি হয়ে যাওয়ায় দুই মাসের বেশি সময় ধরে এনজিওগ্রাম মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। বরিশাল বিভাগে এনজিওগ্রামের অনেক চাহিদা আছে উল্লেখ করে মেশিনটির কার্যক্রম চালু করা উচিত বলে মন্তব্য করেন তিনি। হাসপাতালের পরিচালক ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম বলেন, ডা. এম. সালেহ উদ্দীনকে পটুয়াখালীতে বদলি করার পর থেকে এনজিওগ্রাম মেশিনটি বন্ধ রয়েছে। এ কারণে হৃদরোগীদের ঢাকায় গিয়ে চিকিৎসা নিতে হচ্ছে। হৃদরোগীদের সুবিধার্থে ডা. এম. সালেহ উদ্দীনকে বরিশালে আনার জন্য ঊর্ধ্বতন মহলে অনুরোধ করা হয়েছে। বিকল্প হিসেবে শেবাচিমের হাসপাতালের চারজন ডাক্তারের একটি দলকে ঢাকায় এক মাসের প্রশিক্ষণ দিয়ে এনজিওগ্রাম মেশিন চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানান ডা. এইচ এম সাইফুল ইসলাম।