রবিবার, ২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সিলেট

দুই যন্ত্রণায় নাকাল নগরবাসী

ব্যস্ততম সড়কে একসঙ্গে খোঁড়াখুঁড়ি ও ফুটপাতজুড়ে হকারদের দৌরাত্ম্য

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

দুই যন্ত্রণায় নাকাল নগরবাসী

সিলেট নগরীর ব্যস্ততম বেশ কয়েকটি সড়কে একসঙ্গে চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। কোথাও দুই লেনের সড়কের এক লেন বন্ধ। আবার কোথাও খোঁড়াখুঁড়ির কারণে এমনিতেই বন্ধ হয়ে আছে অর্ধেক রাস্তা। তার ওপর রয়েছে ফুটপাত ও সড়কজুড়ে হকারদের দৌরাত্ম্য। ফলে ঘর থেকে বের হয়েই নগরবাসীকে পড়তে হচ্ছে হকার ও যানজটের দুর্ভোগে। কিন্তু এ দুর্ভোগ যেন দেখার কেউ নেই। চোখ বন্ধ করে যেন দুর্ভোগের বিষয়টি এড়িয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছেন সংশ্লিষ্টরা। সিলেট নগরীর ব্যস্ততম ও গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলোর অন্যতম চৌহাট্টা-রিকাবিবাজার-কাজলশাহ সড়ক। দুই লেনের এই সড়ক দিয়ে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে যাতায়াত করেন রোগীরা। স্টেডিয়াম মার্কেটের শতাধিক চিকিৎসকের চেম্বারে যাতায়াতেও ওই সড়কটি ব্যবহার করেন রোগীরা। ব্যস্ততম সড়কটির চৌহাট্টা অংশের দক্ষিণ লেনে চলছে কালভার্ট সংস্কারের কাজ। এজন্য সড়কটির এক লেন বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। এতে বিকাল হলেই সড়কটিতে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয়। একই অবস্থা আম্বরখানা ও দরগা গেট এলাকায়। এ দুই স্থানেও উন্নয়নকাজের জন্য চলছে খোঁড়াখুঁড়ি। একসঙ্গে নগরীর ব্যস্ততম একাধিক স্থানে রাস্তার একাংশ বন্ধ করে খুঁড়োখুঁড়ির কারণে দুপুর থেকেই সৃষ্টি হয় যানজটের। বিকালে সেটা গড়ায় অসহনীয় পর্যায়ে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ছাড়াও যানজটের অন্যতম আরও একটি কারণ হচ্ছে ফুটপাত ও সড়কজুড়ে বসা হকার। হকারদের দৌরাত্ম্যের কারণে শুধু যানজট নয়, হাঁটতে গিয়েও বিড়ম্বনার শিকার হচ্ছেন নগরবাসী। নগরের বন্দরবাজার, কোর্ট পয়েন্ট, জিন্দাবাজার, আম্বরখানা, সুবিদবাজার, রিকাবিবাজার, মদিনা মার্কেটসহ ব্যস্ততম প্রায় সব কটি এলাকার ফুটপাত ও সড়কের একাংশ দখল করে রেখেছেন হকাররা। ফলে পায়ে হেঁটে চলাচলও দায় হয়ে দাঁড়িয়েছে। বেশ কয়েকজন নগরবাসীর সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়, আগে মাঝে-মধ্যে হকার ও অবৈধ অটোরিকশা স্ট্যান্ড উচ্ছেদে সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে অভিযান পরিচালনা করা হতো। গত জুন মাসে অনুষ্ঠিত সিটি নির্বাচনে অংশ নেননি প্রাক্তন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী। নির্বাচন না করায় হকার উচ্ছেদে তিনিও গাছাড়া হয়ে ওঠেন। এতে হকারদের দৌরাত্ম্য আরও বেড়ে যায়। আর গত ৭ নভেম্বর আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেওয়ার পর হকার উচ্ছেদে কোনো উদ্যোগ নেয়নি সিটি করপোরেশন। ফলে হকাররা আরও বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত তারা নগরীর ব্যস্ততম সড়কের একাংশ ও ফুটপাত দখল করে ব্যবসা করছেন। নগরীর জিন্দাবাজারে রাস্তায় শীতের কাপড় বিক্রি করেন সাহেদুল ইসলাম নামের এক হকার। তিনি জানান, রাস্তা কিংবা ফুটপাতে কাপড় বিক্রি করলেও তাদের প্রতিদিন চাঁদা দিতে হয়। তবে চাঁদা কে এবং প্রতিদিন কত টাকা করে নেয় এ ব্যাপারে মুখ খুলতে নারাজ তিনি। তবে যানজটের জন্য তিনি রাস্তার পাশের দোকানদার ও পার্কিংবিহীন মার্কেটগুলোকে দায়ী করেন। তার দাবি, সড়কের পাশের দোকানদাররা তাদের জিনিসপত্র ফুটপাতে বের করে রাখেন। আর পার্কিংবিহীন মার্কেটের কারণে ক্রেতারা যত্রতত্র গাড়ি পার্কিং করায় যানজট বাড়ছে।

হকারদের দৌরাত্ম্য প্রসঙ্গে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র আনোয়ারুজ্জামান চৌধুরী বলেন, হকারদের কারণে নগরবাসীকে দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে এটা সত্য। হকার পুনর্বাসন ও যানজট নিরসনে সিটি করপোরেশন নানা পরিকলপনা নিয়েছে। আশা করা যাচ্ছে, এক মাসের মধ্যে এ পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শুরু হবে। তাদের সিটি করপোরেশনের উদ্যোগে পুনর্বাসিত করার কাজ চলমান রয়েছে।

প্রসঙ্গত, হকারমুক্ত নগরী গড়তে ২০২১ সালে পুনর্বাসনের উদ্যোগ নেয় সিটি করপোরেশন। ওই বছরের জানুয়ারিতে নগরভবনের পেছনে লালদীঘি হকার্স মার্কেটের ভেঙে ফেলা অংশে অস্থায়ীভাবে ১ হাজার ৭০ জন হকারকে বসার ব্যবস্থা করে দেওয়া হয়। কিন্তু এই উদ্যোগ সফল হয়নি। হকাররা নির্ধারিত স্থান ছেড়ে ফের রাস্তা ও ফুটপাতে চলে আসেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর