মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিষণ্ণতায় আক্রান্ত নার্স

চট্টগ্রামে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গবেষণা

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের বিএসসি নার্সিং বিভাগের ১২০ শিক্ষার্থীর মধ্যে ৫৭ দশমিক ৫ শতাংশ বিষণ্ণতায় ভুগছে। আর ২০ শতাংশ আশঙ্কাজনক এবং ২২ দশমিক ৫ শতাংশ অস্বাভাবিক বিষণ্ণতায় আক্রান্ত।

‘স্নাতক নার্সিং শিক্ষার্থীদের মধ্যে বিষণ্ণতা এবং উদ্বেগের ব্যাপকতা’ শীর্ষক গবেষণায় এসব তথ্য উঠে আসে।     চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের প্রভাষক এবং একাডেমিক কো-অর্ডিনেটর তাজবীন ফারিহা গত বছরের জুলাই থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গবেষণাটি পরিচালনা করেন।

গবেষণায় চট্টগ্রাম ইন্টারন্যাশনাল নার্সিং কলেজের ১২০ জন বিএসসি নার্সিং শিক্ষার্থীর বিষণ্ণতা ও উদ্বেগ সম্পর্কে বিভিন্ন ধরনের তথ্য সংগ্রহ করা হয়। শিক্ষার্থীদের উদ্বেগ-বিষণ্ণতা পরিমাপের জন্য হসপিটাল অ্যাংজাইটি এবং ডিপ্রেশন স্কেল ব্যবহার করা হয়। গবেষণায় অংশগ্রহণকারীর মধ্যে ৮৮.৩ শতাংশ ছাত্রী ও ১১.৭ শতাংশ ছাত্র। তাদের গড় বয়স ২০.৫ বছর। এর মধ্যে ৩৪.২ শতাংশ প্রথম বর্ষ, ৩৭.৫ শতাংশ দ্বিতীয় বর্ষ এবং ২৮.৩ শতাংশ তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

তাজবীন ফারিহা বলেন, ‘তত্ত্বীয় শিক্ষার পাশাপাশি ক্লিনিক্যাল অনুশীলন চালিয়ে যাওয়ার কারণে নার্সিংয়ের শিক্ষার্থীরা দ্বিগুণ কাজের চাপে যুক্ত হয়ে পড়ে। এ ছাড়া আর্থিক সমস্যা, ব্যক্তিগত কারণ, একাডেমিক পরিবেশ, পরীক্ষা, স্টাডি প্রজেক্ট, নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে অ্যাসাইনমেন্ট জমা দেওয়া ও পরীক্ষার সংখ্যার কারণে শিক্ষার্থীরা মানসিক বিষণ্ণতা ও উদ্বেগে ভুগতে পারে।’

তিনি বলেন, মানসিক চাপ-উদ্বেগ নার্সিং শিক্ষার্থীদের নিজস্ব শান্তির ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলার আশঙ্কা থাকে। ফলে তাদের কর্মদক্ষতা হ্রাস পেতে পারে। নার্সিং পেশায় রোগীদের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া একান্ত প্রয়োজন। অত্যধিক মানসিক চাপ এবং বিষণ্ণতা সেবার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। একই সঙ্গে যোগাযোগ দক্ষতা, ভুল সিদ্ধান্তসহ চিকিৎসা ক্ষেত্রে ত্রুটির ঝুঁকি বাড়ায়।

কলেজের উপাধ্যক্ষ ডা. মুসলিম উদ্দিন সবুজ বলেন, ‘নার্সিং শিক্ষায় মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর তদারকির বিষয়ে অবহেলা করার সুযোগ নেই। নার্সিং শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোয় মানসিক স্বাস্থ্যসচেতনতা কার্যক্রম পাঠ্যক্রমের সঙ্গে একীভূত করার বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করা যায়। কারণ নার্সদের ওপর স্বাস্থ্য খাতের সফলতার অনেক কিছুই নির্ভর করে। গুণগত সেবা নিশ্চিতে ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের মানসিক সুস্থতার ওপর গুরুত্ব দেওয়া প্রয়োজন।’

গবেষণায় বলা হয়, ৭৩.৩ শতাংশ নার্স কখনো কখনো, ২৩.৩ শতাংশ নিয়মিত এবং মাত্র ৩.৪ শতাংশ দৈনন্দিন জীবনে কোনো চাপ অনুভব করেন না। তা ছাড়া ৫৬.৭ শতাংশ নার্সের মধ্যে কখনো কখনো ভয় বা উদ্বেগের অনুভূতি কাজ করে, ৩০.০ শতাংশ এ ধরনের অনুভূতির নিয়মিত ভুক্তভোগী, ১৩.৩ শতাংশের মধ্যে এ ধরনের অভিজ্ঞতা অনুপস্থিত। গবেষণায় ৩৫.০ শতাংশের মধ্যে উদ্বেগের মাত্রা ছিল স্বাভাবিক, ৩০.৮ শতাংশের মধ্যে এর মাত্রা স্বাভাবিক সীমারেখার মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে এবং ৩৪.২ শতাংশের মধ্যে উদ্বেগের ব্যাপকতা অস্বাভাবিক মাত্রায়।

গবেষণার পরিসংখ্যানে বলা হয়, ৪১.৩ শতাংশ নার্সিং শিক্ষার্থী দ্বিতীয় বর্ষের মধ্যেই অস্বাভাবিক মাত্রায় উদ্বেগ চিহ্নিত করা হয়, যা অন্য দুই বর্ষের পর্যবেক্ষণ করা শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে। ফলাফলগুলো ৩১.৭ শতাংশ ও ৩৫.১৩ শতাংশ। ২৩.৯ শতাংশ প্রথম বর্ষের শিক্ষার্থীরা আশঙ্কাজনক উদ্বেগ স্কোরগুলোর একটি উচ্চতর ঘটনা প্রদর্শন করেছে, যা অন্য দুই বছরের রেকর্ড করা শতাংশকে ছাড়িয়ে গেছে, ২১.৯০ শতাংশ এবং ১৮.৯১ শতাংশ।

 

 

সর্বশেষ খবর