মঙ্গলবার, ২৭ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
সংবাদ সম্মেলনে ডিবি

তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক

গত তিন মাসে ১৪৩ রোহিঙ্গার হাতে বাংলাদেশি পাসপোর্ট তৈরি করে দিয়েছে একটি চক্র। এ ছাড়া দেশের ভিতরে থাকা দাগি আসামি ও অপরাধীদেরও অবৈধভাবে জন্ম সনদ, জাতীয় পরিচয়পত্র, পাসপোর্ট বানিয়ে দিত চক্রটি।

বিপুল পরিমাণ বিভিন্ন ধরনের কাগজপত্র এবং ডিভাইসসহ ২৩ জনকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। এদের মধ্যে রোহিঙ্গা নারী-পুরুষ, দালাল এবং দুই আনসার সদস্যও রয়েছেন। ডিবি বলছে, এই চক্র তিনটি পর্যায়ে কাজ করে রোহিঙ্গা ও দাগি অপরাধীদের তৈরি করে দেয় ভুয়া পাসপোর্ট। প্রথমে ভুয়া জন্ম সনদ তৈরি, দ্বিতীয় পর্যায়ে জন্ম সনদ দিয়ে এনআইডি কার্ড। এরপর তৃতীয় ধাপে ওই এনআইডি কার্ডের মাধ্যমে রোহিঙ্গা নাগরিকসহ দাগি আসামিদের অবৈধভাবে পাসপোর্ট বানিয়ে দেওয়া হয়। গতকাল দুপুরে ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব জানান অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। ডিবির অভিযানে গ্রেফতার রোহিঙ্গারা হলেন- উম্মে ছলিমা ওরফে ছমিরা, মরিজান ও রশিদুল। রোহিঙ্গা দালালেরা হলেন- আইয়ুব আলী ও মোস্তাকিম। আর দুই আনসার সদস্য হলেন- জামসেদুল ইসলাম ও রায়হান। এ ছাড়া চক্রের অন্যরা হলেন- রাজু শেখ, শাওন হোসেন ওরফে নিলয়, ফিরোজ হোসেন, তুষার মিয়া, শাহজাহান শেখ, শরিফুল আলম, জোবায়ের মোল্লা, শিমুল শেখ, আহমেদ হোসেন, মাসুদ আলম, আবদুল আলিম, মাসুদ রানা, ফজলে রাব্বি শাওন, রজব কুমার দাস দীপ্ত, আল-আমিন এবং সোহাগ। এদের কাছ থেকে মোট ১৭টি পাসপোর্ট, ১৩টি এনআইডি, ৫টি কম্পিউটার, ৩টি প্রিন্টার, ২৪টি মোবাইলফোন এবং পাসপোর্ট তৈরিতে সংশ্লিষ্ট শত শত কাগজপত্র জব্দ করা হয়েছে। ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ জানান, ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জের সাদিয়া সুলতানা সাথী একজন গৃহিণী। তার পাসপোর্ট নেই, বিদেশ যাওয়ার কোনো স্বপ্নও নেই তার। দালাল চক্রটি গৃহিণী সাদিয়া সুলতানাকে টার্গেট করে তার এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে। পরে তার ছবি, ঠিকানা ও এনআইডি কার্ড ব্যবহার করে কক্সবাজারে থাকা উম্মে ছলিমা নামে এক রোহিঙ্গা নারীর পাসপোর্ট তৈরি করে দেয় এই দালাল চক্র। সাদিয়া সুলতানার মতো সাধারণ নারী ও পুরুষদের এনআইডি কার্ড সংগ্রহ করে গত তিন মাসে ১৪৩ জন রোহিঙ্গা নাগরিককে ভুয়া পাসপোর্ট তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। ডিবির লালবাগ বিভাগের একাধিক টিম রাজধানীর আগারগাঁও, মোহাম্মদপুর, যাত্রাবাড়ী ও বাড্ডায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে ২৩ ফেব্রুয়ারি বিপুল পরিমাণ পাসপোর্ট সংক্রান্ত ডকুমেন্টস, পাসপোর্ট এবং কম্পিউটারসহ তিন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ, ১০ জন বাংলাদেশিকে গ্রেফতার করে। তাদের দেওয়া তথ্যে গত রবিবার দিন ও রাতে কক্সবাজার, টাঙ্গাইল এবং ঢাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে দুই আনসার সদস্যসহ রোহিঙ্গা ও বাঙালি দালাল চক্রের আরও আটজনকে গ্রেফতার করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, চক্রটির একটি দল কক্সবাজার, বান্দরবান, খাগড়াছড়ি থেকে আগ্রহী রোহিঙ্গাদের সংগ্রহ করে ঢাকায় নিয়ে আসে।

আরেকটি দল এদের জন্য জন্ম সনদ, এনআইডি বানিয়ে দেয়। সর্বশেষে অন্য দলটি ঢাকাসহ বিভিন্ন আঞ্চলিক পাসপোর্ট অফিসে আনসার সদস্যদের মাধ্যমে ব্যাংকে এক্সপ্রেস, সুপার এক্সপ্রেস ধরনের টাকা জমা দেওয়া, বায়োমেট্রিক্স করা ও ছবি তোলার ব্যবস্থা করে দেয়। এ ছাড়া ছয় ঘণ্টার মধ্যে জন্ম সনদের জন্য তারা ৫ হাজার থেকে ১২ হাজার টাকা নেয়। তিন দিনের মধ্যে এনআইডি করে নেওয়ার জন্য ২৫ হাজার টাকা এবং পাসপোর্ট তৈরি করার জন্য ১ লাখ থেকে দেড় লাখ টাকা নিয়ে থাকে বলে প্রাথমিকভাবে স্বীকার করেছে তারা।

হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতার হওয়া দালালদের মোবাইলে শত শত পাসপোর্ট করে দেওয়ার প্রাসঙ্গিক সফট ডকুমেন্টস, ডেলিভারি স্লিপ পাওয়া গেছে। ২০১৯ সাল থেকে চক্রটি রোহিঙ্গাদের, বাংলাদেশি দাগি অপরাধীদেরকে ভিন্ন নাম ও ঠিকানায় হাজার হাজার পাসপোর্ট করে দিয়েছে। এরা ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, ময়মনসিংহ, রংপুর, শরীয়তপুর, গোপালগঞ্জ ও বরিশাল জেলার ঠিকানা ব্যবহার করে জন্ম সনদ ও এনআইডি বানিয়ে তার ভিত্তিতে পাসপোর্ট বানিয়ে থাকে।

সর্বশেষ খবর