বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা

গাইবান্ধায় চার পুলিশ হত্যা : ১১ বছরেও শেষ হলো না বিচারকাজ

গাইবান্ধা প্রতিনিধি

গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জের বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করা হয় ২০১৩ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি। ১১ বছর হলো আজ। এখনো শেষ হলো না সেই হত্যা মামলার বিচার কাজ। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ফাঁসির রায় ঘোষণার বিরুদ্ধে সুন্দরগঞ্জের বিভিন্ন এলাকায় তান্ডব চালায় জামায়াত শিবিরের সশস্ত্র সদস্যরা। এ সময় তারা বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রের চার পুলিশ সদস্যকে কুপিয়ে হত্যা করে। গংশারহাটের এক আওয়ামী লীগ সমর্থককে জিহ্বা কেটে, চোখ উপড়ে হত্যা করে। এ ঘটনার ধারাবাহিকতায় হত্যা করা হয় আরও তিনজনকে। নিহত চার পুলিশ সদস্য হলেন- গাইবান্ধার সাঘাটা উপজেলার খামার ধনারুহা গ্রামের খাজা নাজিম উদ্দিন, রংপুরের পীরগাছা উপজেলার রহমতের চর এলাকার তোজাম্মেল হক, কুড়িগ্রামের রাজারহাট উপজেলার কিশামত গোবধা এলাকার হজরত আলী ও বগুড়ার সোনাতলা উপজেলার ঠাকুরপাড়া এলাকার বাবলু মিয়া। চার পুলিশ হত্যা মামলার ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে গত ১০ বছরে সাক্ষ্য নেওয়া হয়েছে ৩৮ জনের। ২ এপ্রিল মামলার পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত। ৭৪ জন সাক্ষীর মধ্যে তিনজন ম্যাজিস্ট্রেটকে সাক্ষী হিসেবে নেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে আরিফুল ইসলাম ও মাহবুবর রহমান নামের দুজন ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৪ ধারায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামানের সাক্ষ্য ধার্য দিনে গ্রহণ করা হবে। আদালত সংশ্লিষ্টরা জানান, আসামি মৃত্যু, মহামারি করোনা ও আদালতে বিচারক না থাকায় বিচারে কিছুটা ধীরগতি হয়েছে। তবে খুব দ্রুত সাক্ষ্য গ্রহণ শেষ করে চাঞ্চল্যকর এ মামলার বিচারকাজ শেষ হবে বলে প্রত্যাশা তাদের। সাঈদীর রায়ের দিনে গাইবান্ধার সুন্দরগঞ্জে হরতালের ডাক দেয় জামায়াত শিবির। হরতালের সমর্থকরা এদিন সকাল থেকেই সুন্দরগঞ্জের সর্বানন্দ, রামজীবন, ধোপাডাঙ্গা, কঞ্চিবাড়ী, বেলকা, দহবন্দ, হরিপুর ও বামনডাঙ্গা ইউনিয়নসহ বিভিন্ন এলাকায় বিক্ষোভ-মিছিল করে হরতাল পালন করে। হরতাল পালনের নামে তারা শোভাগঞ্জ, ছাইতানতলা ও বামনডাঙ্গা বাজার, বীর মুক্তিযোদ্ধা সংসদ কার্যালয়, আওয়ামী লীগের কার্যালয়, বামনডাঙ্গা রেলস্টেশন, রেলের প্রকৌশল অফিসসহ স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের ঘরবাড়িসহ বিভিন্ন স্থাপনায় ভাঙচুর-লুটপাট চালিয়ে অগ্নিসংযোগ করে। আগুন জ্বালানোসহ উপড়ে ফেলা হয় বামনডাঙ্গা রেলস্টেশনের লাইন। ১১ বছর পরও সেই ভয়াবহ ঘটনার স্মৃতি ভুলতে পারেননি স্থানীয়রা। আতঙ্ক কাটেনি প্রত্যক্ষ তান্ডব দেখা মানুষগুলোর। আজও নিরাপত্তা নিয়ে শঙ্কিত মামলার সাক্ষীরা। এ ছাড়া আলোচিত এ মামলার ১০ বছরেও জড়িতদের বিচার না হওয়ায় হতাশ নিহতের স্বজন, ক্ষতিগ্রস্ত পরিবার ও ক্ষুব্ধ স্থানীয়রা। দ্রুত মামলার বিচার শেষ করে অভিযুক্তদের সর্বোচ্চ শাস্তির দাবি স্থানীয়দের। ঘটনার পর থেকেই প্রতিবছর এ দিনটিতে বামনডাঙ্গা পুলিশ তদন্ত কেন্দ্রে পুলিশ সদস্য তোজাম্মেল হক, নাজিম উদ্দিন, বাবলু মিয়া ও হজরত আলী স্মরণে চার পুলিশের বেদিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন জেলা পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ সুন্দরগঞ্জের পুলিশ।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর