বুধবার, ২৮ ফেব্রুয়ারি, ২০২৪ ০০:০০ টা
গবেষণা প্রতিবেদন

ঋতুর ধরন বদলে যাচ্ছে বাড়ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে মৌসুমভিত্তিক আবহাওয়ার ধরন বদলে যাচ্ছে। সেই সঙ্গে প্রাকৃতিক দুর্যোগও বাড়ছে। এর বিরূপ প্রভাব পড়ছে কৃষি ও জীববৈচিত্র্যের ওপর। বাংলাদেশ আবহাওয়া অধিদফতর ও নরওয়ের আবহাওয়া দফতরের পাঁচ আবহাওয়াবিদের যৌথ গবেষণায় এসব তথ্য উঠে এসেছে। গতকাল রাজধানীর বঙ্গবন্ধু সামরিক জাদুঘরে এক অনুষ্ঠানের মাধ্যমে ‘বাংলাদেশের পরিবর্তনশীল জলবায়ু : আবহাওয়ার পর্যবেক্ষণে ১৯৮০ থেকে ২০২৩ সালের প্রবণতা এবং পরিবর্তন’ শীর্ষক এ গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়। আবহাওয়াবিদরা জানান, ২০২১ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত তিন বছর তাঁরা এ গবেষণা করেছেন। গবেষণায় তাপমাত্রার পরিবর্তন বুঝতে আবহাওয়া অধিদফতরের ৩৫টি স্টেশনের ৪৩ বছরের প্রতিদিনের সর্বোচ্চ ও সর্বনিম্ন তাপমাত্রার তথ্য বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

 বছরের চারটি মৌসুম শীতকাল (ডিসেম্বর-জানুয়ারি-ফেব্রুয়ারি), প্রাকবর্ষা (মার্চ-এপ্রিল-মে), বর্ষা (জুন-সেপ্টেম্বর) এবং বর্ষাপরবর্তী (অক্টোবর-নভেম্বর) ধরে এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করা হয়েছে।

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশীদ বলেন, সিজনাল প্যাটার্ন চেঞ্জ হচ্ছে। এক্সট্রিম ইভেন্ট বেড়ে যাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো দাবদাহের সংখ্যা দ্রুত বাড়ছে। বিশেষ করে বর্ষাকালে। সারা দেশেই এটি বাড়ছে। শীতেও স্থানীয়ভাবে আবহাওয়ার বেশ পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের এখানে ধূলিকণা প্রচুর। এ ছাড়া আন্তমহাদেশীয় দূষণের কারণে দিনের তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। বিশেষ করে শীতকালে। এ সময় ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বেশি। এ দাবদাহ ও শৈত্যপ্রবাহের প্রভাব পড়বে কৃষিতে। সেচের জন্য জ্বালানি ও বিদ্যুৎ খরচ বাড়বে, এসি লাগবে বেশি। সাধারণত তাপপ্রবাহ দেখা যেত গ্রীষ্মকালে-এপ্রিল ও মে মাসে। এখন অক্টোবর পর্যন্ত চলে গেছে। আগে গ্রীষ্মকালে যে দাবদাহ হতো, ১২ বছর থেকে দেখা যাচ্ছে এটা দ্রুত বেড়ে যাচ্ছে। শুধু গ্রীষ্মকালে নয়, বর্ষাকালেও হচ্ছে।

আবহাওয়া অধিদফতরের পরিচালক মো. আজিজুর রহমান বলেন, দেশে চরমভাবাপন্ন আবহাওয়া দেখা যাচ্ছে। বর্ষা আসছে দেরিতে, যাচ্ছেও দেরিতে। তাপপ্রবাহের সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে। বর্ষা, শীত ও গ্রীষ্মেও তাপ বেড়ে যাচ্ছে। শীতের দিনে তাপ বাড়লেও ঠান্ডা অনুভূত হচ্ছে বেশি। মেঘাচ্ছন্ন দিনের সংখ্যা বাড়ছে। এর সঙ্গে বাড়ছে বায়ুদূষণ।

নরওয়ের আবহাওয়া দফতরের জলবায়ু বিভাগের প্রধান হ্যান্স ওলাভ হাইজেন বলেন, জলবায়ু পরিবর্তন থেকে রক্ষা পেতে ভবিষ্যতের জন্য কোনো কিছু ফেলে রাখার অবকাশ নেই। ব্যবস্থা এখনই নিতে হবে। রাজশাহী অঞ্চলসহ বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্তে তাপপ্রবাহ আশঙ্কাজনক হারে বাড়ছে। ভবিষ্যতে বৃষ্টির সময়ও কমে আসতে পারে। হঠাৎ অস্বাভাবিক বৃষ্টি হতে পারে। এমন বৈরী পরিস্থিতি কৃষিনির্ভর বাংলাদেশের জন্য শঙ্কার।

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ মো. বজলুর রশীদের নেতৃত্বে গবেষক দলে ছিলেন আবহাওয়াবিদ আফরোজা সুলতানা, এস এম কামরুল হাসান এবং নরওয়ের আবহাওয়াবিদ এলিনা কোয়া, কাজসা পারিং ও হ্যান্স ওলাভ হাইজেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর