বৃহস্পতিবার, ৭ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

অগ্নিঝুঁকিতে বহুতল ভবন

রাজশাহীতে ৯৯ শতাংশেই অনিয়ম, খুলনায় ৯০ শতাংশ নিয়ে শঙ্কা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী ও খুলনা

রাজশাহীতে নিয়ম না মেনেই গড়ে উঠছে বহুতল ভবন। অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই অধিকাংশ ভবনে। সরু গলিপথের কারণে দুর্ঘটনা ঘটলে উদ্ধার তৎপরতায় ভোগান্তিতে পড়তে হবে ফায়ার সার্ভিসকে। অন্যদিকে, খুলনা মহানগরীর প্রায় ৯০ শতাংশ বাণিজ্যিক বহুতল ভবন অগ্নিঝুঁকিতে। এসব ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, সতর্কতামূলক ব্যবস্থা, বিকল্প নির্গমন সিঁড়ি ও পানির বড় রিজার্ভার নেই। আবাসিক ভবনের অনুমতি নিয়ে অনেক স্থানেই হোটেল ও রেস্টুরেন্ট চালু করা হয়েছে।

রাজশাহী : ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের দেওয়া তথ্য মতে, রাজশাহীতে ৩ শতাধিক বহুতল ভবন আছে। তবে এগুলোর ৯৯ শতাংশ ভবনেই অনিয়ম আছে। এসব ভবন ঝুঁকি নিয়ে ব্যবহার করা হচ্ছে। অধিকাংশ ভবনেই নেই অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা। আছে বিল্ডিং কোডের অনিয়ম। এদিকে নকশার অনুমোদন ও ট্রেড লাইসেন্স দিয়েই দায় সারছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (আরডিএ) এবং রাজশাহী সিটি করপোরেশনের (রাসিক) মতো গুরুত্বপূর্ণ দুটি প্রতিষ্ঠান। শুধু ঝুঁকিপূর্ণ ও অনিরাপদ ভবনের তালিকা করেই দায়িত্ব শেষ করছে ফায়ার সার্ভিস কর্তৃপক্ষ।          

আরডিএ আবাসিক ও বাণিজ্যিক এই দুই ধরনের ভবনের নকশার অনুমোদন দিয়ে থাকে। তবে রাজশাহীতে সফট কমার্শিয়াল ভবনের নকশার অনুমোদন দেওয়া হয়। কয়েকটি ভবন আছে মার্কেটের জন্য অনুমোদিত। সফট কমার্শিয়াল ভবনে আবাসিক ও অফিস এ দুই ধরনের কার্যক্রমেরই অনুমোদন দেওয়া হয়ে থাকে। তবে অনুমোদন না থাকলেও রাজশাহী নগরীর প্রধান প্রধান সড়কের ধারে অধিকাংশ ভবনই এখন বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। এসব ভবনে ঝুঁকি নিয়ে গড়ে উঠেছে একাধিক রেস্তোরাঁ ও অভিজাত পোশাকের শোরুম।

রাজশাহী বিভাগের ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্সের উপপরিচালক ওহিদুল ইসলাম জানান, ‘রাজশাহীতে ৩ শতাধিক বহুতল ভবন আছে। এ ভবনের ৯৯ শতাংশেই অনিয়ম আছে। এসব অনিয়মের বিভিন্ন মাত্রা ও দিক আছে। তবে এর বেশি কোনো তথ্য এই মুহূর্তে দেওয়া সম্ভব নয়।’ আরডিএ চেয়ারম্যান জিয়াউল হক অবশ্য এ নিয়ে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। তিনি বলেন, ‘মন্ত্রণালয় থেকে এসব নিয়ে কথা বলতে নিষেধ আছে। মন্ত্রণালয়ের অনুমতি ছাড়া আমরা ইন্টারভিউ দিতে পারি না।’

খুলনা : নগরীর হেরাজ মার্কেট, বড়বাজার, খানজাহান আলী হকার্স মার্কেট, রেলওয়ে মার্কেটসহ প্রায় ২০টি মার্কেটে আগুন লাগলে সেখান থেকে বের হওয়ার মতো বিকল্প পথ নেই। সরু গলিপথে ফায়ার সার্ভিস গাড়ি নিয়ে পৌঁছাতেও পারে না। বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ আশরাফ-উজ্জামান বলেন, হাতে গোনা দু-একটি ভবন ছাড়া কোথাও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। আবাসিক এলাকার মধ্যেই বাণিজ্যিকভাবে হোটেল-রেস্তোরাঁ চলছে। ফায়ার সার্ভিস বা কেডিএ কোনো প্রতিষ্ঠান যথাযথ দায়িত্ব পালন করেনি। এসব ভবনে আগুন লাগলে ক্ষয়ক্ষতি কমানো যাবে না।

জানা যায়, আইন অনুযায়ী ছয় তলার বেশি উচ্চতার ভবনে নিজস্ব অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা, প্রশিক্ষিত জনবল, স্মোক ডিটেক্টর, রিজার্ভার, সাধারণ সিঁড়ির পাশাপাশি বিকল্প সিঁড়ি থাকা বাধ্যতামূলক। কিন্তু ভবন নির্মাণের সময় ফায়ার সার্ভিসের কাছ থেকে এ বিষয়ে অনাপত্তিপত্র নেওয়া হয় না। এ ছাড়া খুলনায় পাঁচ তলা ভবনের বেশি উচ্চতায় আগুন লাগলে তা নেভানোর মতো সুউচ্চ মই নেই ফায়ার সার্ভিসের।

এদিকে আবাসিক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা পর্যবেক্ষণে অভিযান শুরু করেছে খুলনা উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (কেডিএ) ও ফায়ার সার্ভিস। মঙ্গলবার প্রথম দিনে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা না থাকায় রেস্টুরেন্টসহ ১১টি প্রতিষ্ঠানকে শোকজ করা হয়েছে। খুলনা ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স অধিদফতরের সহকারী পরিচালক ফারুক হোসেন সিকদার বলেন, ফায়ার সার্ভিসের টিম ১১ মার্চ পর্যন্ত নগরীর বহুতল ভবনগুলো পরিদর্শন করবে। যেসব ভবনের অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা থাকবে না, ফায়ার সার্ভিসের আইন নীতিমালা ভঙ্গ করেছে তার তালিকা করা হবে। সেই তালিকা অনুযায়ী জেলা প্রশাসক ও পুলিশ কর্মকর্তারা আইনগত ব্যবস্থা নেবেন।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর