শুক্রবার, ৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কমিশন বাণিজ্যের নামে ৮১ লাখ টাকা লোপাট

নিজস্ব প্রতিবেদক

কমিশন বাণিজ্যের নামে পুঁজিবাজারের তালিকাভুক্ত ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও লিজিং কোম্পানিগুলো লোপাট করছে গ্রাহকের টাকা। এর মধ্যে কোনো ডিপোজিট জমা না করেই ডিপোজিট সংগ্রহের বিপরীতে কমিশনের নামে প্রায় ৮১ লাখ টাকা হাতিয়ে নেওয়ার অভিযোগে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) তুহিন রেজাসহ সাতজনের বিরুদ্ধে চার্জশিট দিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। ডিপোজিট সংগ্রহের বিপরীতে কমিশনের নামে দুই বছরে ওই টাকা লোপাট হয়েছে বলে অভিযোগে উল্লেখ করে সংস্থাটি। গতকাল দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার আদালতে এ চার্জশিট দাখিল করেন। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন ফার্স্ট ফাইন্যান্সের হেড অব ট্রেজারি ও এসভিপি মোহাম্মদ সবুর খান দিপু, সিনিয়র প্রিন্সিপাল অফিসার মোহাম্মদ শাহরুজ্জামান, তানজিমুল মুকতাদির, সিনিয়র অফিসার মো. মুকিত হোসেন ও মো. মাইনউদ্দিন এবং অফিসার মাহবুবুর রহমান।

জানা যায়, ২০২১ সালের ২৮ মার্চ ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি তুহিন রেজাকে অপসারণ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এর আগে টানা দুই বছর এমডি হিসেবে ক্ষমতার অপব্যবহার করে তিনি নিয়মিত গ্রাহকের ডিপোজিট সংগ্রহের বিপরীতে কমিশনের নামে অগ্রিম টাকা উত্তোলন করে গেছেন। অথচ কমিশনের বিপরীতে ডিপোজিটের কোনো টাকা প্রতিষ্ঠানে জমা হয়নি। তিনি অবৈধ ও বেআইনিভাবে কমিশনের নামে নেওয়া পুরো টাকাটাই আত্মসাৎ করেন। দুদকের তদন্তে বেরিয়ে আসে, এমডি হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে পরিচালনা পর্ষদের অনুমোদন ছাড়াই তুহিন রেজা কমিশন হিসেবে উন্নয়ন খাতে মোট ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করেন।

বাংলাদেশ ব্যাংক জানায়, ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি হিসেবে তুহিন রেজার নিয়োগই হয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়া। দুদক চার্জশিটে বলেছে, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনুমতি ছাড়াই ২০১৬ সালের ১৩ অক্টোবর ফার্স্ট ফাইন্যান্সের এমডি ও সিইও (চলতি দায়িত্ব) হিসেবে তুহিন রেজাকে পদায়ন করা হয়েছিল। পরে ২০২০ সালের ১১ মার্চ ৩১৯তম পর্ষদ সভায় তাকে এমডি নিয়োগ করা হয়। এ নিয়োগের বিষয়ে ওই বছরের ১২ মার্চ কেন্দ্রীয় ব্যাংকের অনাপত্তি চেয়ে চিঠি দেওয়া হয়। ২৫ জুন তা নাকচ করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। পরে ২৮ জুন তুহিন রেজাকে এমডির বিষয়ে পুনরায় অনাপত্তি চায় ফার্স্ট ফাইন্যান্স। তা-ও নামঞ্জুর করে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। সর্বশেষ ২০২১ সালের ৩ মার্চ তুহিন রেজার এমডি হিসেবে অনাপত্তির অনুমোদন চেয়ে আবেদন করে ফার্স্ট ফাইন্যান্সের পর্ষদ। কিন্তু তা-ও নামঞ্জুর করে বাংলাদেশ ব্যাংক। একই সঙ্গে দ্রুত নিয়মিত এমডি নিয়োগ দিতে পর্ষদের চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেওয়া হয়। ঘটনাচক্রে পুরো অনিয়ম ঘটে ওই সময়ই। বাংলাদেশ ব্যাংক তুহিন রেজার বিরুদ্ধে ব্যক্তিগত সিআইবি তথ্য গোপন করাসহ কোনো বিজ্ঞপ্তি ও নিয়োগ পরীক্ষা ছাড়াই একক সিদ্ধান্তে ২২ জন কর্মকর্তা/কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে প্রতিষ্ঠানটির সার্ভিস রুলের ব্যত্যয় ঘটানোর অভিযোগ এনেছে। দুদকের তদন্তের দেখা যায়, ফার্স্ট ফাইন্যান্স লিমিটেডের অফিশিয়াল ডিপোজিট সংগ্রহের জন্য ২০২০ সালের ৭ জানুয়ারি থেকে ৩০ জুলাই এবং ২০২১ সালের ১৮ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত কমিশন হিসেবে বিভিন্ন সময়ে মোট ৮০ লাখ ৫০ হাজার টাকা উত্তোলন করা হয়েছে। অগ্রিম হিসেবে কমিশন ১৬ লাখ টাকা পর্যন্ত উত্তোলন করা হয়েছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর