মঙ্গলবার, ১২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংকট আরও গভীর হচ্ছে

চট্টগ্রামের পরিবহন ব্যবস্থায় বাড়ছে হয়রানি

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

চট্টগ্রামে গণপরিবহন সংকটের মধ্যেই প্রায় ৯০০ টেম্পোর রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছে আরটিসি (আঞ্চলিক পরিবহন কমিটি)। নগরের সড়কে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে এ উদ্যোগের কথা বললেও তৈরি হয়েছে বিতর্ক। অভিযোগ উঠেছে, সাধারণ মালিকদের ১০ বছর আগের মডেলের গাড়ি বাতিলের সুপারিশ করলেও বিশেষ ব্যক্তিদের দুই দশক আগের মডেলের গাড়িকে ‘সঠিক’ হিসেবে মতামত দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া হিউম্যান হলার ও বাস-মিনিবাসের আকার পরিবর্তন করা হলেও আরটিসির পক্ষ থেকে ‘রহস্যজনক’ ভূমিকা পালন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এদিকে ব্যক্তি মালিকানাধীন পরিবহনের পরিবর্তে নির্দিষ্ট কোম্পানির আওতায় গণপরিবহন আনার সুপারিশ করেছে আরটিসি। অভিযোগ রয়েছে, চট্টমেট্রো-ফ-১১-০২৭২ নম্বরের টেম্পোটি ২০০২ মডেলের হলেও বিআরটিএর এক কর্মকর্তার আত্মীয় এটির মালিক হওয়ায় তা বাতিলের সুপারিশ করেনি আরটিসি। একইভাবে সিএমপির ট্রাফিকের টিআই পুলক চাকমার চট্টমেট্রো-ফ-১১-০৩৭১, টিআই মহিউদ্দিনের চট্টমেট্রো-ফ-১১-০৩৮৬ ও চট্টমেট্রো-ফ-১১-০৪৪৪, বন্দর বিভাগের স্ট্যানো খালেকের চট্টমেট্রো-ফ-১১-২০৭৯, শ্রমিক নেতা অলির চট্টমেট্রো-ফ-১১-১০৯৫ ও চট্টমেট্রো-ফ-১১-০৪৭৬ গাড়িগুলোকে সঠিক বলে মতামত দিয়েছে জরিপ কমিটি। বিপরীতে সাধারণ মালিকদের গাড়ি ১০ বছর আগের মডেলের হলেও তার পারমিট বাতিলের সুপারিশ করেছে। ২০২২ সালে জরিপের পরও বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ এসব টেম্পোর ফিটনেস-পারমিট নবায়ন করা হয়েছিল। তবে গত ১১ ফেব্রুয়ারি অনুষ্ঠিত আরটিসি কমিটির সভার পর মেয়াদোত্তীর্ণ কাগজপত্র নবায়ন করা হচ্ছে না। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন সাধারণ মালিকরা।

বিআরটিএ চট্টগ্রাম বিভাগের উপপরিচালক সৈয়দ আইনুল হুদা বলেন, আরটিসির জরিপ কমিটির সদস্য সচিব সম্প্রতি বদলি হয়ে গেছেন। যার কারণে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলতে পারব না। তবে যে সব যানবাহন অসঙ্গতিপূর্ণ তা বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। রুট পারমিট বাতিল করে বিপরীতে সমানসংখ্যক পরিবহনের পারমিট দেওয়া হবে।

সিএমপির পশ্চিম জোনের উপকমিশনার ও অটোটেম্পো জরিপ কমিটির আহ্বায়ক তারেক আহমেদ বলেন, ২০২২ সালের শেষের দিকে জরিপটি করা হয়েছে। বিগত আরটিসির সভায় অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। তা বিআরটিএর কাছে আছে। বাকিটা তারা দেখবেন। পুলিশের গাড়ি থাকতে পারে, তবে মনে হয় না নিজের নামে আছে। তবে কয়টি গাড়ির রুট পারমিট বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে, তার তথ্য জানা নেই। অটোটেম্পো মালিক কল্যাণ সমিতির সভাপতি মোহাম্মদ শামীম ইসলাম বলেন, ‘সব কাগজপত্র ঠিক আছে দেখে ২০২৩ সালের নভেম্বর মাসে আমি একটি টেম্পো কিনেছিলাম। যার নম্বর চট্টমেট্রো-ফ-১১-১১৭৮। কিন্তু এখন দেখছি সেই গাড়িটি জরিপে অনুপস্থিত ছিল এমন অজুহাতে বাতিল করা হয়েছে। এমন অবস্থা কেবল আমার ক্ষেত্রে নয়, অনেকে প্রতারণার শিকার হয়েছেন। আরটিসির উদ্দেশ্যপ্রণোদিত সিদ্ধান্তে আমার মতো শত শত মালিক নিঃস্ব হওয়ার মতো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। ২০২৪ সালের জানুয়ারি পর্যন্তও গাড়িগুলো ঠিক ছিল। কিন্তু ১১ ফেব্রুয়ারি আরটিসির অনুষ্ঠিত সভায় আমাদের গাড়িগুলো রহস্যজনক কারণে অবৈধ হয়ে গেছে। চেসিস অস্পষ্ট, খোদাইকরা এবং অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি কেবল অজুহাত।’ সূত্র জানায়, জরিপে ৫৮১টি হিউম্যান হলার বাতিলের সুপারিশ করা হয়েছে। তার মধ্যে চেসিস অস্পষ্ট এবং খোদাইকরা থাকার অভিযোগে ৩৫টি ও ইঞ্জিন অস্পষ্ট থাকার কারণে ৫৪৬টি গাড়ি বাতিল করা হয়। অথচ এসব হিউম্যান হলারের সব কয়টি গাড়ির চাকার সাইজ এবং চেসিস পরিবর্তনসহ আকার পরিবর্তন করা হয়েছে। কিন্তু জরিপে উঠে এসেছে ইঞ্জিন পরিবর্তনের বিষয়টি। জানা গেছে, নির্ধারিত ফি দিয়ে ইঞ্জিন পরিবর্তনের সুযোগ থাকায় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া নগরীর ২১টি রুটে অটোটেম্পোর সিলিং রয়েছে ২ হাজার ৩৯৯টি। এর মধ্যে পারমিট রয়েছে ২ হাজার ১৯৩টির। তবে চেসিস অস্পষ্ট, খোদাইকরা এবং জরিপে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে ৮৯৩টি টেম্পো বাতিলের জন্য সুপারিশ করেছে আরটিসি। যার মধ্যে চেসিস অস্পষ্ট এবং খোদাই থাকার অভিযোগে ৫৬১টি, জরিপে অনুপস্থিত থাকার কারণে ১০৮টি এবং জরিপে উপস্থিত থাকা নতুন আবেদনের মধ্যে ২২৪টি বাতিল করা হয়েছে। ২০০৮ থেকে ২০১২ মডেলের টেম্পোগুলো সড়ক থেকে তুলে দিতে চেসিস অস্পষ্ট বা খোদাই এবং জরিপে উপস্থিত না থাকার অভিযোগে বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে আরটিসি। বিশেষ ব্যক্তির ক্ষেত্রে এবং আর্থিক লেনদেনের মাধ্যমকে ২০০২ মডেলের টেম্পো ‘সঠিক’ রয়েছে বলে মতামত দেওয়া হয়েছে।

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর