বৃহস্পতিবার, ১৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

গ্যাস বিদ্যুৎ নিয়ে ফের শঙ্কা

গতবারের চেয়ে এবার বেশি হতে পারে লোডশেডিং

জিন্নাতুন নূর

তাপমাত্রা বাড়ছে। গ্রীষ্মকাল দোরগোড়ায়। এরই মধ্যে শুরু হয়েছে রমজান মাস। চলছে সেচ মৌসুম। সব মিলিয়ে বিদ্যুতের চাহিদা বাড়ছে। একই সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে গ্যাসের চাহিদাও। ঢাকার বাইরে বিভিন্ন জায়গায় এরই মধ্যে লোডশেডিং হওয়ার খবর পাওয়া যাচ্ছে। গত রোজা ও গ্রীষ্মে বিদ্যুতের লোডশেডিংয়ে গ্রাহকদের চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়। এবারও ব্যবসায়ী ও সাধারণ মানুষ রোজায় লোডশেডিং বৃদ্ধির শঙ্কায় আছে। গত কয়েকদিনে বিদ্যুতের চাহিদা ১২ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করা মাত্রই দেশের বিভিন্ন স্থানে লোডশেডিং শুরু হয়েছে। গরমের তীব্রতা বৃদ্ধির সঙ্গে বিদ্যুতের চাহিদা ১৫ হাজার মেগাওয়াট অতিক্রম করলেই লোডশেডিং পরিস্থিতি আরও খারাপের দিকে যেতে পারে বলে আশঙ্কা আছে।

গত বছর বিদ্যুৎ বিভাগের দায়িত্বশীল সূত্র জানিয়েছিলেন, লোডশেডিং হ্রাস বা বৃদ্ধির জন্য তারা তাপমাত্রা তথা আবহাওয়ার ওপর নির্ভর করে ছিলেন। এবারও পরিস্থিতি এক। উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, এ বছর বৃষ্টিপাত গত বছরের চেয়ে কম হওয়ার এবং গরম বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এতে পরিস্থিতি গতবারের চেয়েও খারাপ হতে পারে।

বিদ্যুৎ বিভাগ বলছে, এবার এপ্রিলে বিদ্যুতের চাহিদা সম্ভাব্য প্রায় ১৮ হাজার মেগাওয়াট ধরা হয়েছে।

বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদও রমজানে সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দেশে বিদ্যুৎ উৎপাদনের পর্যাপ্ত সক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও জ্বালানি সংকটের কারণে চাহিদামতো বিদ্যুৎ সরবরাহে বিঘ্ন হতে পারে। আর ডলার সংকটের কারণে এ খাতের ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে। ঘাটতি আছে বিদ্যুৎ উৎপাদনের জন্য কয়লা, এলএনজি ও জ্বালানি তেলের। তবে বিদ্যুৎ উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়লেও জ্বালানির অভাবে সক্ষমতার বড় অংশ বসিয়ে রাখতে হবে। দেশের উৎপাদিত বিদ্যুতের বড় অংশই আসে গ্যাসভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো থেকে। কিন্তু এসব কেন্দ্রে গ্যাসের পর্যাপ্ত জোগান নেই। এ কারণে বিদ্যুতের উৎপাদন ও সরবরাহ কমেছে। কোম্পানিগুলো বাধ্য হয়ে লোডশেডিং করছে। বিদ্যুৎ বিতরণ কোম্পানির কর্মকর্তারা বলছেন, দেশে বিদ্যুতের মোট উৎপাদন সক্ষমতা ২৫ হাজার ৪৮১ মেগাওয়াট। তবে ডলার সংকটের জন্য প্রয়োজনীয় জ্বালানি তেল ও এলএনজি আমদানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। ফলে গ্যাসের উৎপাদন কমছে। এ ছাড়া বিদ্যুতের সঞ্চালন ও বিতরণ লাইনের ব্যবস্থাপনা এখনো দুর্বল। ফলে সক্ষমতার পরও চাহিদা অনুসারে বিদ্যুৎ সরবরাহ করা যাচ্ছে না। এতে এ বছরও গ্রাহককে লোডশেডিংয়ের দুর্ভোগ পোহাতে হবে। এ ছাড়া এ ঘাটতির মধ্যে বন্ধ হয়ে গেছে একটি এলএনজি টার্মিনাল। এতে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশন (পেট্রোবাংলা) চাহিদা অনুযায়ী গ্যাস সরবরাহ বাড়াতে পারছে না। এলএনজি টার্মিনালটির মার্চের শেষ দিকে চালু হওয়ার কথা।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড (পিডিবি)-এর পরিচালক (জনসংযোগ) মো. শামীম হাসান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার গ্রীষ্মে লোডশেডিং পরিস্থিতি গতবারের চেয়ে খারাপ হওয়ার আশঙ্কা করছি। মূলত জ্বালানির অপ্রাপ্যতার জন্যই এ সমস্যা তৈরি হচ্ছে। গ্যাস সংকট তো আছেই। যেহেতু পরিস্থিতি গত বছরের চেয়ে উন্নত হয়নি বরং ডলার সংকট এ পরিস্থিতিকে আরও সংকটে ফেলেছে। এখন রোজা চলছে। সামনেই সেচ মৌসুম। গ্রীষ্মে গরমও সেভাবে পড়বে। সব মিলিয়ে ধরে নেওয়া যায় গত বছরের চেয়ে বিদ্যুতের চাহিদা আরও বাড়বে। চাহিদা পূরণ না করতে পারলে আমাদের লোড ম্যানেজমেন্টে যেতে হবে অর্থাৎ লোডশেডিং করতে হবে।’

এরই মধ্যে ঢাকার বাইরের জেলাগুলোয় লোডশেডিং শুরু হয়েছে। রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় সকাল থেকেই চুলা জ্বলছে না। চাপ কম থাকায় ঢাকার সিএনজি স্টেশনগুলোয় গাড়ির লম্বা লাইন দেখা যাচ্ছে। প্রতিবারই রমজানে সাহরি, ইফতার ও তারাবির সময় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিয়ে চাপে থাকে বিদ্যুৎ বিভাগ। গ্যাস সংকটের কারণে এবার বিদ্যুৎ বিভাগের কর্মকর্তাদের এ চ্যালেঞ্জ আরও বেশি। পরিস্থিতি সামাল দিতে পিডিবি তেলভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রগুলো বেশি হারে চালানোর পরিকল্পনাও করছে।

পাওয়ার গ্রিড কোম্পানি ওয়েবসাইটের তথ্য অনুসারে গতকাল দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১১ হাজার ৩৫৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হয়। এ সময় চাহিদা  ছিল ১১ হাজার ৪১৫ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ৫৭ মেগাওয়াটের। ১১ মার্চ দুপুর ১২টায় বিদ্যুৎ উৎপাদিত হয় ১১ হাজার ১৫৫ মেগাওয়াট। এ সময় চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ১৩৮ মেগাওয়াট। ১০ মার্চ দুপুর ১২টায় উৎপাদিত হয় ১১ হাজার ১৮৩ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ। এ সময় চাহিদা ছিল ১১ হাজার ৩০০ মেগাওয়াট। লোডশেডিং ছিল ১১২ মেগাওয়াট। তবে ১১ মার্চ সন্ধ্যায় পিক আওয়ারে বিদ্যুতের সর্বোচ্চ চাহিদা ছিল ১২ হাজার ২৪৪ মেগাওয়াট।

 

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর