শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাজশাহী বিমানবন্দর

রানওয়ের কাছাকাছি যেতে পারেন সবাই

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

নিরাপত্তা ঝুঁকিতে রাজশাহী বিমানবন্দর

রাজশাহীর শাহ মখদুম বিমানবন্দরে আগের চেয়ে যাত্রী চলাচল বেড়েছে। বিভাগীয় শহরটিতে প্রায় দিনই আসছে রাষ্ট্রের মন্ত্রী, আমলা থেকে শুরু করে বিশিষ্টজনরা। কিন্তু এই বিমানবন্দরটির ভিআইপি কক্ষটি ব্যবহার করেন যে কেউ। দলীয়, স্বজন ও আত্মীয় পরিচয়ে ভিআইপি কক্ষটি দখলে রাখা হচ্ছে। আগতদের স্বাগত জানাতে বিমানের রানওয়ের কাছাকাছি চলে যাচ্ছেন বহিরাগতরা। এতে করে ঝুঁকিতে পড়েছে বিমানের নিরাপত্তা।

অন্যান্য উন্নয়নকাজের সঙ্গে রাজশাহীর হযরত শাহ মখদুম বিমানবন্দরের ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জও সম্প্রসারণের পরিকল্পনা নেওয়া হয়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজও শুরু করেছে। কিন্তু সেই কাজ আর শেষ হচ্ছে না। লাউঞ্জের অনেক কিছুই পড়ে আছে এলোমেলোভাবে। এ অবস্থায় যাত্রীদের একবার তল্লাশি করেই উড়োজাহাজে উঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। ফলে নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে।

ভিআইপি কক্ষ ছেড়ে সাধারণের অপেক্ষার কক্ষে বসা ছিলেন রাজশাহী-১ আসনের এমপি ওমর ফারুক চৌধুরী। ঠিক পাশের ভিআইপি কক্ষটির সব সোফা দখল করে ছিলেন শ্রমিক লীগের নেতা-কর্মীরা। এমন অবস্থা নিত্যদিনের বলে জানালেন এমপি ফারুক চৌধুরী।

রাজশাহীর নওহাটায় ১৬২ একর জমির ওপর ১৯৮৪ সালে শাহ মখদুম বিমানবন্দরটি প্রতিষ্ঠা করা হয়। যাত্রীসংকটের কারণে ২০০৭ সালের ২০ জানুয়ারি এই বিমানবন্দর থেকে অভ্যন্তরীণ রুটে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করা হয়। পরে ২০১৫ সালে আবার রাজশাহী-ঢাকা রুটে ফ্লাইট চলাচল শুরু হয়। এখন দেশের তিনটি বিমান পরিবহন সংস্থা এই বিমানবন্দর ব্যবহার করে রাজশাহী-ঢাকা ও ঢাকা-রাজশাহী রুটে ফ্লাইট পরিচালনা করছে। প্রতিটি বিমান সংস্থা দিনে দুটি করে সপ্তাহে ৪২টি ফ্লাইট পরিচালনা করছে। বিমানবন্দরে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ডিপার্চার ও প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের পরিধি বড় করার কাজ করছে ঢাকার ইপিক বিল্ডার্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং লিমিটেড নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। গত বছরের ডিসেম্বরে এই প্রকল্পের মেয়াদ শেষ হয়েছে। এর মধ্যে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জের কাজ অর্ধেক শেষ করতে পারেনি প্রতিষ্ঠানটি। তাই গত নভেম্বরে প্রকল্পের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। কিন্তু এই সময়ের মধ্যে কাজ শেষ হবে কি না, তা নিয়েও অনিশ্চয়তা রয়েছে। বিমানবন্দরে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে এখন শুধু প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জ চালু আছে। এর উত্তর পাশে ডিপার্চার লাউঞ্জে চলছে উন্নয়নকাজ। যাত্রীরা প্রধান ফটক দিয়ে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে প্রবেশ করছেন। সেখানে সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তাকর্মীরা তল্লাশি করছেন। স্ক্যানারে ব্যাগও স্ক্যান করা হচ্ছে। এরপর একটি ইলেকট্রিক ডোর পেরিয়ে যাত্রীরা বোর্ডিং পাস নিয়ে প্যাসেঞ্জার লাউঞ্জে অপেক্ষা করেন। পরে এখান থেকেই তারা সরাসরি বিমানে গিয়ে ওঠেন। ডিপার্চার লাউঞ্জে কোনো তল্লাশি করা হচ্ছে না। ভিআইপি লাউঞ্জে কারা যাবেন, সেটি নির্ভর করে সেখানে থাকা নিরাপত্তাকর্মীর মর্জির ওপর। বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকরা সেখানে যেতে না পারলেও দলীয় কর্মী, রাজনৈতিক নেতার স্বজন পরিচয়ে অনেকে সুযোগ পান ভিআইপি লাউঞ্জে। যা নিয়ে বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়তে হচ্ছে ভিআইপি যাত্রীদের। এ ব্যাপারে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা ইনচার্জ কোনো কথা বলতে চাননি। যোগাযোগ করা হলে ডিপার্চার লাউঞ্জের কাজের দেখভালের দায়িত্বে থাকা সিভিল এভিয়েশনের উপসহকারী প্রকৌশলী শাহ সুলতান সবুজ বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া কথা বলতে পারবেন না তিনি। বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপক দিলারা পারভীন বলেন, ‘এখন একবার চেকিং হলেও ভালোভাবেই চেক করা হয়। তল্লাশির বাইরে কোনো যাত্রী বিমানে উঠতে পারেন না।’ ভিআইপিতে ইচ্ছামতো প্রবেশের সুযোগ ও রানওয়ের কাছে অভ্যর্থনা জানাতে আসা লোকজনের যেতে পারার সুযোগ প্রসঙ্গে তিনি কোনো কথা বলতে অপারগতা প্রকাশ করেন।

সর্বশেষ খবর