শুক্রবার, ১৫ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

তেল ডাল চিনি গম সার ও এলএনজি কিনছে সরকার

নিজস্ব প্রতিবেদক

স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বাজার থেকে ৫০৬ কোটি ৯৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকার সয়াবিন তেল, ডাল, চিনি ও গম কিনছে সরকার। এ ছাড়া আন্তর্জাতিক দরপত্রের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর-যুক্তরাষ্ট্র থেকে চার কার্গো এলএনজি কিনবে সরকার। এতে ব্যয় হবে ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার টাকা। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রিপরিষদ সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে এসব দরপ্রস্তাবের অনুমোদন দেওয়া হয়। বৈঠক শেষে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের সমন্বয় ও সংস্কার সচিব মো. মাহমুদুল হোসাইন খান সাংবাদিকদের ব্রিফিং করেন। তিনি বলেন, অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটাতে ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকার গম, সয়াবিন ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকার চিনি ১০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকার এবং ১৬৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার মসুর ডাল কেনা হবে। তিনি জানান, খাদ্য মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে আন্তর্জাতিক উন্মুক্ত দরপত্র আহ্বান করে সংযুক্ত আরব আমিরাতের (ইউএই) প্রতিষ্ঠান গ্রিনফ্লাওয়ার ডিএমসিসির কাছ থেকে ৫০ হাজার মেট্রিক টন গম আমদানির প্রস্তাব অনুমোদন দেওয়া হয়। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে খাদ্যশস্যের নিরাপত্তা মজুত সুসংহত করতে এ গম আমদানি করা হবে। প্রতি মেট্রিক টন গমের মূল্য ধরা হয়েছে ২৭৯.৯৫ মার্কিন ডলার। ফলে এ গম আমদানিতে মোট ব্যয় হবে ১ কোটি ৩৯ লাখ ৯৭ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ১৫৩ কোটি ৯৭ লাখ ২৫ হাজার টাকা। প্রতি কেজি গমের মূল্য পড়বে ৩০ টাকা ৭৯ পয়সা।

সভায় বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে মসুর ডাল কেনার দুটি প্রস্তাব এবং সয়াবিন ও চিনি কেনার দুটি পৃথক প্রস্তাব নিয়ে আসা হয়। চারটি প্রস্তাবই অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এর মধ্যে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত দরপত্র পদ্ধতিতে ৬ হাজার টন মসুর ডাল ৬২ কোটি ৯৪ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। বরগুনার রয় এগ্রো ফুড প্রডাক্টস লিমিটেডের কাছ থেকে এ মসুর ডাল কেনা হবে। প্রতি কেজি মসুর ডালের দাম পড়বে ১০৪ টাকা ৯০ পয়সা।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ১০ হাজার টন মসুর ডাল ১০৪ কোটি ৪৪ লাখ টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়। প্রতি কেজির দাম পড়বে ১০৪ টাকা ৪৪ পয়সা। টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে এসব মসুর ডাল কেনা হবে।

সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে স্থানীয়ভাবে সরাসরি ক্রয় পদ্ধতিতে ৮ হাজার মেট্রিক টন চিনি ১০৭ কোটি ৬০ লাখ টাকায় কেনার অনুমোন দেওয়া হয়েছে। এস আলম রিফাইন্ড সুগার ইন্ডাস্ট্রিজের কাছ থেকে ১৩৪ টাকা ৫০ পয়সা দরে এই চিনি কেনা হবে। টিসিবির জন্য এই চিনি কেনার প্রস্তাব নিয়ে আসে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে স্থানীয়ভাবে উন্মুক্ত পুনঃদরপত্র পদ্ধতিতে ৫০ লাখ লিটার সয়াবিন তেল ৭৭ কোটি ৯৮ লাখ ৫০ হাজার টাকায় কেনার অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। ঢাকার সোনারগাঁও সিডস ক্রাশিং মিলস লিমিটেড থেকে এ সয়াবিন তেল কেনা হবে। এ সয়াবিন তেলও টিসিবির ফ্যামিলি কার্ডধারী ১ কোটি পরিবারের কাছে ভর্তুকি মূল্যে বিক্রির লক্ষ্যে কেনা হবে।

সিঙ্গাপুর ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র (ইউএসএ) থেকে চার কার্গো তরলীকৃত প্রাকৃতিক গ্যাস (এলএনজি) কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলেরেট এনার্জি এলপি থেকে এক কার্গো এবং সিঙ্গাপুরভিত্তিক গানভর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো ও সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া থেকে ২ কার্গো এলএনজি কেনা হবে। এতে খরচ হবে ১ হাজার ৬৩৭ কোটি ৪৩ লাখ ২২ হাজার টাকা।

তিনি জানান, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির দ্রুত সরবরাহ বৃদ্ধি (বিশেষ বিধান) (সংশোধন) আইন-২০২১ এর আওতায় স্পট মার্কেট থেকে এলএনজি আমদানির প্রত্যাশাগত অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এক্সেলেরেট এনার্জি এলপি থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৭৮৫৮ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ৪২৩ কোটি ১৬ লাখ ৯৩ হাজার ৬৫ টাকা ব্যয় হবে।

জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের আর এক প্রস্তাবের পরিপ্রেক্ষিতে সিঙ্গাপুরের গানভর প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি এমএমবিটিইউ ৯.৩৬৯০ মার্কিন ডলার হিসেবে ৩৩ লাখ ৬০ হাজার এমএমবিটিইউ এলএনজি আমদানিতে ব্যয় হবে ৪০৫ কোটি ১৪ লাখ ৫৫ হাজার ৪০৮ টাকা।

এ ছাড়া সিঙ্গাপুরের ভিটল এশিয়া প্রাইভেট লিমিটেড থেকে এক কার্গো এলএনজি ৪০৯ কোটি ৫১ লাখ ৩১ হাজার ৪০ টাকা ব্যয়ে আমদানির অনুমোদন দিয়েছে সরকারি ক্রয় সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটি। এ ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর মূল্য পড়বে ৯.৪৭ মার্কিন ডলার।

সিঙ্গাপুরের একই প্রতিষ্ঠান থেকে আর এক কার্গো এলএনজি ৩৯৯ কোটি ৫১ লাখ ৫২ হাজার ৭৬১ টাকায় আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। এ ক্ষেত্রে প্রতি এমএমবিটিইউর মূল্য পড়বে ৯.২৩৮৮ মার্কিন ডলার।

তিনি বলেন, কৃষি মন্ত্রণালয়ের প্রস্তাব অনুসারে রাশিয়া ও সৌদি আরব থেকে ৭০ হাজার টন সার কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর মধ্যে ৪০ হাজার টন ডিএপি ও ৩০ হাজার টন এমওপি সার রয়েছে। এতে ব্যয় হবে ৩৫১ কোটি ২৫ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি) কর্তৃক রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় সৌদি আরবের মা-আদেন থেকে তৃতীয় লটে ৪০ হাজার টন ডিএপি সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন ডিএপি সারের মূল্য ৫৮১ মার্কিন ডলার। এতে মোট ব্যয় হবে ২ কোটি ৩২ লাখ ৪০ হাজার মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ২৫৫ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।

কৃষি মন্ত্রণালয়ের আরেক প্রস্তাবে রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে চুক্তির আওতায় রাশিয়ার জেএসসি ফরেন ইকোনমিক করপোরেশন ‘প্রডিন্টরগ’ থেকে ৩০ হাজার টন মিউরেট-অব-পটাশ (এমওপি) সার আমদানির অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। প্রতি টন এমওপি সারের মূল্য ২৮৯.৭৫ মার্কিন ডলার। এ হিসাবে মোট ব্যয় হবে ৮৬ লাখ ৯২ হাজার ৫০০ মার্কিন ডলার। বাংলাদেশি মুদ্রায় এর পরিমাণ ৯৫ কোটি ৬১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। এ ছাড়া দেশের তিন জেলায় পৃথকভাবে ১০০ করে মোট ৩০০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন ক্ষমতা সম্পন্ন তিনটি সোলার প্যানেল নির্মাণ করা হবে। যার ট্যারিফ মূল্য অনুমোদন করেছে পার্চেজ কমিটি।

 

সর্বশেষ খবর