সোমবার, ১৮ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

আবারও অস্থির হচ্ছে কুবি এক দশক ধরে দুই পক্ষের দ্বন্দ্ব

মহিউদ্দিন মোল্লা, কুমিল্লা

সম্প্রতি আবারও অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় (কুবি)। শিক্ষকদের একটি পক্ষ উপাচার্য তাদের পছন্দমতো কাজ না করলে এমন পরিবেশ সৃষ্টি করেন বলে জানা যায়। সাবেক দুই ভিসিও চাকরির মেয়াদ শেষ হওয়ার আগে একরকম অবরুদ্ধ অবস্থায় দিন পার করেন। সম্প্রতি বর্তমান ভিসি ড. এ এফ এম আবদুল মঈনও অনিয়ম-দুর্নীতি বন্ধ করতে গিয়ে আবারও তাদের রোষানলে পড়েন বলে জানা গেছে। ওই পক্ষের কারণে এক দশক ধরে কুবি অস্থিতিশীল হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সূত্র জানায়, কুবি কর্মকর্তাদের গত ১৯ ফেব্রুয়ারি বিকালে লাঞ্ছিতের অভিযোগ ওঠে শিক্ষক নেতাদের বিরুদ্ধে। এ নিয়ে ডেপুটি রেজিস্ট্রার এবং অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মোহাম্মদ জাকির হোসেন শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর মো. আবু তাহের ও সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ সাতজন শিক্ষকের বিরুদ্ধে সদর দক্ষিণ মডেল থানায় সাধারণ ডায়েরি করেন। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের প্রথম প্রহরে কুবি শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া নিয়ে হট্টগোল করেছেন শিক্ষক নেতারা। শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান ৬ মার্চ শিক্ষক নিয়োগের পরীক্ষায় বাধা দেন। ২০১৭ সালের ১০ মার্চ অনুষ্ঠিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ৬৫তম সিন্ডিকেট সভায় যোগ দিতে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) চেয়ারম্যান অধ্যাপক আবদুল মান্নান। ভিসি বাংলোর মূল ফটকে গাড়িসহ প্রবেশে চেয়ারম্যানকে বাধা দেয় এবং তার সঙ্গে অসৌজন্যমূলক আচরণ করা হয়। এতে তৎকালীন শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের, সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসানসহ আরও সাত সদস্যকে ইউজিসির চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে কারণ দর্শানোর নোটিস দেওয়া হয়। ১৬ অক্টোবর উপাচার্যের দফতরে তালা দেন তারা। সর্বশেষ ২০১১ সালে ৪৯ লাখ ৬৯ হাজার টাকা ব্যয়ে ৮ দশমিক ৪ কিলোওয়াটের একটি সোলার প্যানেল স্থাপন প্রকল্পের পরিচালক ছিলেন তৎকালীন রেজিস্ট্রার ড. আবু তাহের। নিম্নমানের একটি প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে এ প্রকল্পের সিংহভাগ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে অভিযোগ ওঠে।

এ বিষয়ে অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. স্বপন চন্দ্র মজুমদার বলেন, অধ্যাপক ড. আবু তাহের শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার পদে ছিলেন। কিন্তু সে সময় তিনি তো শিক্ষকদের স্বার্থবিরোধী কাজেই লিপ্ত ছিলেন। এখন নিজের স্বার্থে আঘাত লাগায় সাধারণ শিক্ষকদের সেন্টিমেন্টকে কাজে লাগিয়ে ফায়দা হাসিলের চেষ্টা করছেন।

লোকপ্রশাসন বিভাগের অধ্যাপক ড. রশিদুল ইসলাম শেখ বলেন, কোনো বিষয় থাকলে, কেউ সংক্ষুব্ধ থাকলে সেটা বসে আলোচনা হতে পারে। কিন্তু উপাচার্যের পদত্যাগ চেয়ে আন্দোলন আমরা সমর্থন করি না।

বঙ্গবন্ধু পরিষদের সভাপতি ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. কাজী ওমর সিদ্দিকী বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল করার জন্য এবং বাংলাদেশ সরকারকে প্রশ্নবিদ্ধ করার জন্য একটি চক্র একসঙ্গে হয়ে উঠেপড়ে লাগছে।

এ বিষয়ে সাধারণ সম্পাদক মেহেদী হাসান দেশের বাইরে থাকায় তার বক্তব্য পাওয়া যায়নি। তবে তিনি বিভিন্ন গণমাধ্যমকে বলেন, উপাচার্য সবার সামনে শিক্ষকদের বলেন তারা রিসার্চ করতে পারেন না। এটা তো শিক্ষকদের জন্য চূড়ান্ত অপমান।

শিক্ষক সমিতির সভাপতি ড. আবু তাহের বলেন, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। বর্তমান উপাচার্য শিক্ষক নিয়োগ ও টেন্ডারের ক্ষেত্রে বৈষম্যমূলক আচরণ করছেন। গ্রেড-১ ও গ্রেড-২ তে পদোন্নতির জন্য করা শিক্ষকদের আবেদন ঝুলিয়ে রেখেছেন। আইন অমান্য করে ইচ্ছামতো বিভাগীয় প্রধান ও ডিন নিয়োগ দিয়েছেন। ঢাকার গেস্ট হাউসের চাবি নিজের কাছে রেখে অন্য শিক্ষকদের ব্যবহার করার সুযোগ দেন না। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হিসেবে যোগদান করলেও নিয়ম অনুযায়ী তিনি ইনক্রিমেন্ট সুবিধা পাবেন না।

উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন বলেন, আমি দায়িত্ব নেওয়ার পর রেজিস্ট্রারসহ অন্যদের দুর্নীতিতে বাধা দিয়েছি। তাই তারা আমার বিরুদ্ধে অবস্থা নিয়েছেন। বরং রেজিস্ট্রার শিক্ষক নিয়োগে দুর্নীতি করেছেন। পদ ছাড়া ১২ জন ও অ্যাডহক ভিত্তিতে তিনজন কর্মকর্তা নিয়োগ দিয়েছেন। ডিন নিয়োগ দেয় সিন্ডিকেট, সেখানে আমাকে কেন দায়ী করা হচ্ছে? গেস্ট হাউসের চাবি এস্টেট অফিস ও গেস্ট হাউসে আছে। সেখানে শিক্ষকরা থাকছেনও, আমার কাছে চাবি থাকার অভিযোগ সঠিক নয়। আমি একটি বিভাগের ডিন হলেও ভাতা নেই না। ইনক্রিমেন্ট অন্য শিক্ষকদের মতো আমার বেতনের সঙ্গেও চলে আসতে পারে। আমি খবর নিয়ে তা বাদ দেব। আমি আসার পর নির্দিষ্ট কাজের সঙ্গে অতিরিক্ত কাজ করে ইউজিসিতে ৩ কোটি ১৪ লাখ টাকা ফেরত দিয়েছি। কোনো দুর্নীতির প্রমাণ দিতে পারলে তার যথাযথ শাস্তি মাথা পেতে নেব।

 

 

সর্বশেষ খবর