বুধবার, ২০ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মৃত্যুকূপ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক!

♦ বছরে শতাধিক প্রাণহানি ♦ দুর্ঘটনার প্রধান কারণ বেপরোয়া ট্রাক ও অবৈধ যানবাহন

শাহ্ দিদার আলম নবেল, সিলেট

মৃত্যুকূপ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক!

ঘন ঘন দুর্ঘটনা, চোরাই পণ্যবাহী ও বেপরোয়া গতির যান চলাচল বন্ধের দাবিতে গতকাল সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষুব্ধ জনতা। এ সময় সড়কের উভয় পাশে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হয় -বাংলাদেশ প্রতিদিন

আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যের জন্য বেশ গুরুত্বপূর্ণ মহাসড়ক সিলেট-তামাবিল। গেল একবছর ধরে ৫৬ কিলোমিটার এই মহাসড়ক পরিণত হয়েছে মৃত্যুকূপে। প্রায়ই মহাসড়কে ঘটছে হতাহতের ঘটনা। এক বছরে এই মহাসড়কে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ। আহত হয়েছেন আরও কয়েক শ। মহাসড়ক দিয়ে বেপরোয়াগতিতে ভারতীয় চোরাইপণ্যবাহী বেপরোয়া ট্রাক, লাইসেন্সবিহীন ও অদক্ষ চালক, ফিটনেসবিহীন অবৈধ যানবাহন ও সড়কে খানাখন্দকে দুর্ঘটনার কারণ হিসেবে দায়ী করছেন স্থানীয় লোকজন ও প্রশাসন। এসব সমস্যার সমাধান করে মহাসড়কটিকে যাত্রীদের জন্য নিরাপদ করার দাবিতে আন্দোলনে নেমেছেন স্থানীয়রা। হাইওয়ে পুলিশও মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে বিশেষ অভিযান শুরু করেছে।

তামাবিল স্থলবন্দর দিয়ে ভারত থেকে আসা পণ্য সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে দেশের বিভিন্ন গন্তব্যে পৌঁছে। এ ছাড়া জাফলং, লালাখাল, শ্রীপুর পর্যটন কেন্দ্রেও পর্যটকদের যেতে হয় এই মহাসড়ক দিয়ে। কিন্তু এক বছর ধরে মহাসড়কটি দিয়ে বেড়েছে চোরাইপণ্যবাহী ট্রাক। জৈন্তাপুর ও গোয়াইনঘাট সীমান্ত দিয়ে ভারত থেকে চোরাইপথে আসা গরু, মহিষ, চিনি, কসমেটিক্সসহ বিভিন্ন পণ্য এই মহাসড়ক দিয়ে ট্রাকে (ডিআই পিকআপ) করে সিলেট নগরীতে নিয়ে আসা হয়। বেপরোয়া গতির এসব পিকআপ অনেক সময় নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে অন্য যানবাহনে ধাক্কা দেয়। এতে ঘটে হতাহতের ঘটনা। এ ছাড়া মহাসড়কটিতে দিন দিন বেড়েছে অবৈধ তিন চাকার গাড়ির চলাচল। মহাসড়কটি দিয়ে যেসব বাস চলাচল করে সেগুলোর ফিটনেস নিয়েও রয়েছে প্রশ্ন। লাইসেন্সবিহীন অদক্ষ চালকদের কারণেও ঘটছে দুর্ঘটনা। একেকটি দুর্ঘটনার পর বিক্ষুব্ধ লোকজন মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করলেও শৃঙ্খলা ফেরে না যান চলাচলে। ফলে থামে না প্রাণহানির ঘটনা। গেল তিন মাসে মহাসড়কটিতে বড় চারটি দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে সাতজন ছাত্রলীগের নেতা-কর্মী। এ ছাড়াও এই সময়ের মধ্যে ঘটেছে আরও কয়েকটি দুর্ঘটনা। সব মিলিয়ে গেল এক বছরে মহাসড়কটিতে প্রাণহানির ঘটনা ১০০ ছাড়িয়ে যাওয়ার কথা বলছেন স্থানীয়রা।

দুর্ঘটনা রোধে প্রশাসনের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনো পদক্ষেপ না নেওয়ায় এবার আন্দোলনে নেমেছেন বিক্ষুব্ধ জনতা। গতকাল সকাল সাড়ে ১০টায় তারা সিলেট-তামাবিল মহাসড়কের জৈন্তাপুর উপজেলার প্রবেশমুখ ঘাটেরচটি নামক স্থানে অবরোধ করেন। প্রায় চার ঘণ্টা তারা মহাসড়কটি অবরোধ করে রাখলে পণ্য ও যাত্রীবাহী অনেক যানবাহন আটকা পড়ে। পরে পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা গিয়ে বিক্ষুব্ধ জনতাকে বুঝিয়ে সরিয়ে দিলে সড়ক দিয়ে যানচলাচল স্বাভাবিক হয়। তবে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, তারা প্রশাসনের পদক্ষেপ পর্যবেক্ষণ করবেন। চোরাইপণ্যবাহী ও বেপরোয়া গতির যানবাহন, ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন যানবাহন চলাচল বন্ধের উদ্যোগ না নিলে আবারও তারা সড়কে নামবেন।

এদিকে মহাসড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে হাইওয়ে পুলিশ গতকাল থেকে ‘ক্রাশ প্রোগ্রাম’ শুরু করেছে। হাইওয়ে পুলিশ সিলেট অঞ্চলের অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ জানান, মহাসড়ক নিরাপদ করতে হলে সাধারণ জনগণ, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও পরিবহন সংশ্লিদের সহযোগিতা প্রয়োজন। কিন্তু অনেক সময় সেটা পাওয়া যায় না। একটি দুর্ঘটনার পর কঠোর ব্যবস্থা নিতে গেলে অনেক সময় মধ্যস্থতাকারী তৈরি হয়ে একদল লোক বিভ্রান্ত করার চেষ্টা করে। এর পরও পুলিশ সিলেট-তামাবিল মহাসড়ককে নিরাপদ করতে গতকাল থেকে বিশেষ অভিযানে নেমেছে। অতিরিক্ত গতি, লাইসেন্স ও ফিটনেসবিহীন যানবাহন, অদক্ষ ও অবৈধ চালকদের বিরুদ্ধে অভিযান শুরু হয়েছে। সপ্তাহব্যাপী এই অভিযান চলবে। প্রথম দিন ৬টি মামলা দেওয়া হয়েছে। চালক মাদকাসক্ত কি-না প্রয়োজন হলে পুলিশ তাৎক্ষনিক সেটাও পরীক্ষা করবে।

সর্বশেষ খবর