বৃহস্পতিবার, ২১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
ইবনে সিনা হাসপাতাল

সিজারের পর রোগীর মৃত্যু চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীর কল্যাণপুরে ইবনে সিনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে সিজারিয়ান ডেলিভারির পর পলি সাহা নামে (২৬) এক নারীর মৃত্যু হয়েছে। চিকিৎসকের অবহেলায় অতিরিক্ত রক্তক্ষরণে পলির মৃত্যু হয়েছে বলে অভিযোগ ভুক্তভোগী পরিবারের। এ ঘটনায় ইবনে সিনা হাসপাতাল একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। পলি সাহার স্বামী আসিফ রায় বলেন, ‘আমার স্ত্রীর সিজারিয়ান ডেলিভারির পর থেকে অতিরিক্ত রক্তক্ষরণ হয়েছে। কিন্তু একেবারে শেষ সময় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়। চিকিৎসকের অবহেলায় আমার স্ত্রী মারা গেছেন।’

আসিফ রায় বলেন, সোমবার দুপুরে সিজারিয়ান ডেলিভারি করাতে পলি সাহাকে ইবনে সিনা হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। দুপুর ২টা ১৫ মিনিটের দিকে পলির সিজারিয়ান অপারেশন হয়। বিকাল ৫টায় তাকে পোস্ট অপারেটিভ রুমে নেওয়া হয়। তখনো চিকিৎসকরা জানান, পলি ভালো আছেন, তবে রক্তক্ষরণ হচ্ছে।

প্রেগন্যান্সির পুরো সময় ইবনে সিনা হাসপাতালে প্রাইভেট প্র্যাকটিস করা চিকিৎসক ডা শারমীন মাহমুদের তত্ত্বাবধানে ছিলেন পলি সাহা। তার প্ল্যাসেন্টা পেছনের দিকে থাকায় নরমাল ডেলিভারিতে ঝুঁকির কারণে চিকিৎসকের পরামর্শে সিজারিয়ান ডেলিভারি করা হয় বলে জানান আসিফ রায়।

আসিফ রায় বলেন, সিজার করার পর থেকে আমার স্ত্রীর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। ৫টার দিকে তাকে পোস্ট অপারেটিভে যখন নেওয়া হয় তখন বুকে ব্যথা ছিল। রাত ১০টার দিকে রোগী বলেছেন রক্তক্ষরণ হচ্ছে কিন্তু চিকিৎসকরা বলেছিলেন ভালো আছেন। রাত ৪টার দিকে ডাক্তার বলেন রোগীর রক্তচাপ অনেক কমে গেছে। তাকে আইসিইউতে নিতে হবে। আইসিইউতে নেওয়ার ১০ মিনিট পর চিকিৎসক আবার জানান, আরেকটি অপারেশন করে দেখতে হবে রক্তক্ষরণ কেন বন্ধ হচ্ছে না। জরায়ু কেটে ফেলতে হবে। দ্বিতীয় দফা অপারেশন শেষে সকাল ১০টায় আইসিইউতে শিফট করা হয়। এরপর মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় কল্যাণপুর ইবনে সিনা হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ পলিকে মৃত ঘোষণা করেন।

চিকিৎসায় অবহেলার অভিযোগ জানিয়ে আসিফ রায় বলেন, পলির দুটি অস্ত্রোপচারেই প্রচুর রক্তক্ষরণ হচ্ছিল। চিকিৎসকরা এটা বন্ধে পদক্ষেপ নেননি। তার বুকে ব্যথা ছিল, ব্লাড প্রেশার কমে যাচ্ছিল, এগুলোর জন্যও স্টেপ প্রণনি চিকিৎসকরা। একেবারে শেষ সময় তাকে আইসিইউতে নেওয়া হয়।

আসিফ রায় একটি ওষুধ কোম্পানির ফার্মাসিস্ট। পলি ও আসিফ দম্পতির একটি ছেলেসন্তান জন্ম নিয়েছে। ছেলেটি সুস্থ আছে, আসিফ রায়ের বোনের বাসায় তাকে রাখা হয়েছে। বুধবার পলির শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়েছে তাদের গ্রামের বাড়ি কিশোরগঞ্জে। এ ঘটনায় থানায় জিডি করার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত জিডি করেনি পলির পরিবার। তবে এ বিষয়ে তারা স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে অভিযোগ জানাবেন। পলির স্বজনদের অভিযোগ বিষয়ে জানতে চাইলে ইবনে সিনা ট্রাস্টের সিনিয়র এজিএম (অ্যাডমিন) মো. নূরে আলম সবুজ বলেন, ‘ঘটনা জানার পর আমরা রোগীর স্বজন ও চিকিৎসকরা বসেছিলাম। প্রাথমিকভাবে আমাদের মনে হয়েছে চিকিৎসায় কোনো অবহেলা হয়নি। তার পরও চিকিৎসায় কোনো ফারাক আছে কি না জানতে হাসপাতালের পক্ষ থেকে চার সদস্যের একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। সাত কার্যদিবসের মধ্যে রিপোর্ট দেবে, তখন দেখা যাবে কোনো অবহেলা ছিল কি না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর