শুক্রবার, ২২ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চরম নাব্যসংকট

বছর বছর ড্রেজিং করেও সমাধান মিলছে না

রাহাত খান, বরিশাল

বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চরম নাব্যসংকট

বরিশাল-ঢাকা যাতায়াতে নিরাপদ রুট হিসেবে এখনো নৌপথ বেছে নেয় যাত্রীরা। আর সে নৌপথ ধীরে ধীরে বন্ধ হওয়ার উপক্রম। বছর বছর ড্রেজিং করেও নৌপথে নাব্যসংকট থেকে পরিত্রাণ মিলছে না। শুকনো মৌসুমের শুরুতেই বরিশাল-ঢাকা নৌপথে চরম নাব্যসংকট দেখা দিয়েছে। ফলে যাত্রীবাহী লঞ্চ ও মালবাহী জাহাজ চলাচল ব্যাহত হচ্ছে। লঞ্চ মাস্টাররা কর্তৃপক্ষকে বারবার বলা সত্ত্বেও নদীর মাটি কেটে নদীতে ফেলায় প্রতি বছরই একই সমস্যা সৃষ্টি হচ্ছে বলে ধারণা তাদের। তবে ড্রেজার বেইজ বিআইডব্লিউটিএ বলছে ভিন্ন কথা।

বরিশাল-ঢাকা নৌরুটের মেঘনা ও গজারিয়া নদীর দুই জায়গায় ভাটার সময় পানি তলানিতে নেমে যাচ্ছে। বরিশালের মেহেন্দীগঞ্জের বাগরজা থেকে বামনীর চরের গজারিয়া পর্যন্ত ১ কিলোমিটার পথ। এ ছাড়া হিজলা থেকে বাবুগঞ্জ পর্যন্ত মেঘনার শাখায় ২ কিলোমিটার পথ। নাব্যসংকট ও ডুবোচরের কারণে প্রায় অচল হয়ে পড়ছে এ নৌরুট। প্রায়ই ডুবোচরে নৌযান আটকে দুর্ভোগে পড়ছে যাত্রীরা। ভাটায় সাধারণত পানির গভীরতা ৩-৪ ফুটে নেমে আসে। যদিও লঞ্চ চলাচলে গভীরতা দরকার কমপক্ষে ৫ ফুট এবং মালবাহী জাহাজের জন্য ৭ ফুট। এখানে জোয়ারের সময় নৌযান চলতে পারলেও ভাটায় লঞ্চ চালাতে হিমশিম খেতে হয়।

এমভি শুভরাজ লঞ্চের ইনচার্জ মাস্টার আবুল কালাম বলেন, ‘প্রিমিয়ার-৫ মালবাহী জাহাজ ডোবার কারণে এবং তার ওপরের দিকে তিন-চার জায়গায় ড্রেজিং না করলে যাত্রীবাহী লঞ্চ চালানো কঠিন হয়ে পড়বে।’ বর্তমানে জোয়ারভাটার সময় গুনে কোনোমতে চলাচল করার কথা জানান তিনি।

সুরভী-৭ লঞ্চের প্রথম শ্রেণির মাস্টার শুক্কুর আলী বলেন, ‘বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ চলাচলে ৮ থকে ১০ ফুট গভীর পানি প্রয়োজন হয়। সেখানে কোনো কোনো জায়গায় ৩-৪ ফুট থাকে। যাতে তলানিতে ঠেকে যায় লঞ্চ। স্থানীয় সমাধান সব সময় চাই কারণ জাহাজ (লঞ্চ) নিয়ে চলাচল করি।’

আমাদের যাত্রীবাহী লঞ্চে পরানটা (প্রাণ) হাতের ওপরে থাকে। যে কোনো সময় পানি কম পেলে অন্য জাহাজের (লঞ্চের) সঙ্গে লেগে দুর্ঘটনা ঘটতে পারে। লঞ্চের তলানিতে পানি কম পেলে একদিকে দৌড় দেয় তখন কিছু করার থাকে না। এ কারণে জাহাজ ডুবে যায়।’ তিনি বলেন, ‘প্রতি বছরই নদীর মাটি কাটে কিন্তু তা আবার নদীতে ফেলায় পুনরায় ভরে যায়। আর যখন মাটি কাটে আমাদের কথা শোনে না, ফলে কাজের কাজ কিছু হয় না।’

লঞ্চ মালিক সমিতির কেন্দ্রীয় সহসভাপতি সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘ড্রেজিং করার পর দেখা যায় দু-চার মাস ভালো থাকে আবার সেই আগের অবস্থায় ফিরে আসে।

শুকনো মৌসুম শুরুর আগেই ইতোমধ্যে আমাদের লঞ্চ ডুবোচরে আটকে যায়। ভাটার সময় কোনো লঞ্চ চলতে পারে না। প্রায় দেড়-দুই ঘণ্টা লঞ্চ বসিয়ে রাখতে হয়।’ তিনি আরও বলেন, ‘বরিশাল ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রীকে ঢাকা-বরিশাল নৌপথে নাব্যসংকটের কথা জানিয়ে দ্রুত খননের তাগিদ দেওয়া হয়েছে। প্রতিমন্ত্রী এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দিয়েছেন।’

বরিশাল ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী (যান্ত্রিক) মো. আবদুর রাজ্জাক মিয়া বলেন, ‘বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতি নাব্য দূরকরণে পত্র দিয়েছে। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে।’ তিনি বলেন, বরিশাল-ঢাকা নৌরুটে যাত্রীবাহী লঞ্চ, মালবাহী জাহাজ চলাচল করে। যে যে পয়েন্টে ডুবোচর আছে সেটি রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র প্রকল্পের মাধ্যমে খনন করা হবে। কারণ এ নদীপথে তাদের মালামাল যাতায়াত করে সেজন্য নদীপথ সচল রাখতে, তাদের মালামাল নির্বিঘ্নে পরিবহন করতে ড্রেজিং করবে। এটি তাদের এ প্রকল্পে দেওয়া আছে।

শুষ্ক মৌসুমে বরিশাল-ঢাকা নৌরুট সচল রাখতে প্রতি বছরই বিভিন্ন স্থানে খননকাজ করে থাকে ড্রেজার বেইজ, বিআইডব্লিউটিএ। তবে এমন ড্রেজিং নিয়ে নৌযান শ্রমিক ও মালিকদের মতের ভিন্নতা রয়েছে। এভাবে বছর বছর অস্থায়ীভাবে খননকাজ না করে নৌপথে পরিকল্পিতভাবে টেকসই ও দীর্ঘস্থায়ী খনন করার দাবি জানান তারা।

সর্বশেষ খবর