রাজধানীর পল্লবী এলাকায় মোহাম্মদ ফয়সাল হত্যা মামলার রহস্য উদঘাটন করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। মাদক ও আধিপত্যের দ্বন্দ্বে প্রতিপক্ষ কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় নিহত হন ফয়সাল। একই ঘটনায় ছুরিকাঘাতে রানা ওরফে রানু নামের আরেক তরুণ এখন চিকিৎসাধীন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঢাকা, পটুয়াখালী ও নেত্রকোনা জেলায় অভিযান চালিয়ে কিশোর গ্যাংয়ের ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তারা হলেন- শাহিন ওরফে ন্যাড়া শাহিন, মো. মুরাদ হোসেন, পারভেজ আহম্মেদ, মো. ইয়াসিন, মো. সাইফুল ইসলাম সাইমন, মো. নাসির উদ্দিন, মো. হৃদয় ওমর সাফি গন্ডার, মো. রাজিব মিয়া, শাহনেওয়াজ ওরফে কাল্লু ও তানজিলা। এ সময় তাদের কাছ থেকে হত্যায় ব্যবহৃত চাপাতি, রামদা ও ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ।
তিনি বলেন, পল্লবী এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় ফয়সাল নামের একজন নিহতের ঘটনায় পল্লবী থানায় একটি মামলা হয়। হত্যাকান্ডের পর আসামিরা পালিয়ে যায়। মামলার তদন্তে নেমে জানতে পারি, প্রথমে একই গ্রুপের সদস্যদের মধ্যে মারামারির ঘটনা ঘটে। দুটির মধ্যে একটি গ্রুপ হলো পেপার সানী গ্রুপের সদস্য শাহিন ও তার বোন তানজিলার সঙ্গে ১৫ মার্চ বিকালে মাদকের টাকা ভাগাভাগি ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে একই গ্রুপের সদস্য ফয়সাল ও রানার মারামারির ঘটনা ঘটে। এই ঘটনার পরে পেপার সানী গ্রুপের সদস্য শাহিন এই ঘটনার প্রতিশোধ নিতে সায়মুন গ্রুপের রাব্বী ও অন্যান্যদের জানায়। পরের দিন ফয়সাল, তার বন্ধু রানা এবং আরও দুই বন্ধুসহ রিকশায় করে পল্লবীর কমিউনিটি সেন্টারে ইফতার শেষে বাসায় ফিরছিল। এ সময় তারা ফয়সালকে পল্লবীর সেকশন-১২ এলাকায় চাপাতি, তলোয়ার, রামদা, সুইচ গিয়ার চাকু দিয়ে এলোপাতাড়িভাবে কুপিয়ে গুরুতর আহত করে। পরে ফয়সালের মা এসে তাকে উদ্ধার করে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। ফয়সালের বন্ধু রানা আশঙ্কাজনক অবস্থায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন। ঘটনার পর ফয়সালের বাবা শাহাদাত হোসেন পল্লবী থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন। এই ঘটনায় ডিবি ১০ জনকে গ্রেফতার করেছে। এই ঘটনায় জড়িত অন্যদের ধরতে অভিযান চলছে।
ডিবি প্রধান হারুন বলেন, মিরপুরে কিশোর গ্যাং সদস্যরা প্রায়ই মাদক ও আধিপত্য বিস্তার নিয়ে মারামারির ঘটনা ঘটায়। একই ঘটনা উত্তরায় ঘটেছে। উত্তরায় বেশ কিছু বড় ভাইদের নাম পেয়েছি যারা কিশোর গ্যাং নিয়ন্ত্রণ করে। তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া মিরপুর ও উত্তরার পাশাপাশি মোহাম্মদপুরেও বেশ কয়েকটি কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। রাজধানীর কোনো এলাকায় বড় ভাইদের প্রভাব বিস্তার করতে দেওয়া হবে না। কোনো বড় ভাইয়ের নামে চাঁদাবাজি ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম চালাতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে ডিবির প্রত্যেকটি টিম রাজধানীর প্রত্যেক এলাকায় কাজ করছে।ডিবির পল্লবী জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার (এডিসি) মো. রাশেদ হাসান বলেন, পল্লবী এলাকায় একাধিক কিশোর গ্যাং সক্রিয় রয়েছে। ফয়সাল হত্যাকান্ডে র ঘটনা ছাড়া অতীতেও কিশোর গ্যাং সদস্যরা বেশ কয়েকটি ঘটনা ঘটিয়েছে। কিশোর গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িতদের ধরতে ধারাবাহিক অভিযান চলছে।