রবিবার, ২৪ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার!

পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা হবে নদীকে গলা টিপে হত্যা করা। নাব্য নষ্ট হবে, হুমকিতে পড়বে মৎস্যসম্পদ। নগরের নানা বর্জ্যে স্বকীয়তা হারাবে কর্ণফুলী।

রেজা মুজাম্মেল, চট্টগ্রাম

কর্ণফুলীর চরে বর্জ্য শোধনাগার!

কর্ণফুলী নদীর বুকে জেগে ওঠা প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর নয়নাভিরাম চরে নগরের বর্জ্য শোধনাগার তৈরির পরিকল্পনা করেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। পরিবেশবিদরা মনে করেন, এ পরিকল্পনা বাস্তবায়ন হলে তা হবে নদীকে গলা টিপে হত্যা করা।  নাব্য নষ্ট হবে, হুমকিতে পড়বে মৎস্যসম্পদ। নগরের নানা বর্জ্যে স্বকীয়তা হারাবে কর্ণফুলী। স্থানীয়ভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক)। তবে এ প্রকল্পের বিরুদ্ধে জেগে উঠেছে চট্টগ্রামবাসী। ইতোমধ্যে চরে অনুষ্ঠিত হয়েছে মানববন্ধন। ধারাবাহিক ঐক্যবদ্ধ কর্মসূচি ঘোষণা করেছে পরিবেশবাদী সাত সংগঠন।

চট্টগ্রাম নগরীর কল্পলোক আবাসিক এলাকার পুবে এবং বোয়ালখালী ও শিকলবাহার পশ্চিম পাশে কর্ণফুলী নদীর মাঝখানে জেগে ওঠে ৩৫ একর ভাসমান চর। সবুজ বৃক্ষে তৈরি হয় এক নান্দনিক পরিবেশ। চরটি পূর্ণিমা বা অমাবস্যার জোয়ারে ডুবে যায়। গত বছরের নভেম্বরে এই চরে বর্জ্য শোধনাগার করার পরিকল্পনা করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলনের সাধারণ সম্পাদক আলীউর রহমান বলেন, ‘স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় কর্ণফুলী নদীর বুকে জেগে ওঠা চরে বর্জ্য শোধনাগার করার যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে, আমরা মনে করি তা নদীটিকে গলা টিপে হত্যা করার নামান্তর। এটি নদী হত্যার একটি নীলনকশা। এর ফলে অচল হয়ে যাবে চট্টগ্রাম বন্দর। নদীর মধ্যে বর্জ্য নেবে কীভাবে? আমরা কোনোমতেই এখানে বর্জ্য শোধনাগার করতে দেব না। চট্টগ্রামবাসী তা প্রতিহত করবে।’

তিনি বলেন, ‘এখানে কর্ণফুলী নদীর চাক্তাই থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত বাস্তবায়নাধীন মেরিনার্স সড়কটির সঙ্গে চরটির সমন্বয় করে একটি পরিবেশবান্ধব ইকো ট্যুরিজম স্পটের পরিকল্পনা করা যায়। নদীর মাঝখানে পর্যটন কেন্দ্রটি হলে এটি অনন্য একটি বিনোদন কেন্দ্র হবে। সঙ্গে বৃক্ষরাজিও রক্ষা পাবে। নদীর নাব্যও রক্ষা পাবে।’

কর্ণফুলী নদী গবেষক প্রফেসর ড. ইদ্রিস আলী বলেন, ‘এই প্রকল্পের কথা শুনে ও বাস্তবতা পরিদর্শন করে এক কথায় বলা যায়, এটা পাগলের কান্ডকারখানা। শিকলবাহার বাঁকে নদীর মাঝখানের চরে বর্জ্য নিয়ে গেলে তার সবটুকুই কর্ণফুলীতে যাবে। এটা হলে কর্ণফুলী নদী নয়, ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হবে। হুমকিতে পড়বে মৎস্যসম্পদ।’

চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শেখ মুহাম্মদ তৌহিদুল আলম বলেন, ‘মন্ত্রণালয় প্রকল্পটি বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এ ব্যাপারে পরিবেশ অধিদফতর ছাড়পত্রও দিয়েছে। সংশ্লিষ্ট আরও কিছু সংস্থার অনুমোদন লাগবে। এরপর বাস্তবায়ন হবে। এটি অত্যাধুনিক একটি বর্জ্য শোধনাগার হবে। তাই নদী ও পরিবেশের জন্য হুমকি হবে না।’

এদিকে কর্ণফুলী নদীর বুকে চরে বর্জ্য শোধনাগার করার সিদ্ধান্তের কথা প্রকাশের পর থেকে নানাভাবে কর্মসূচি পালন করা হচ্ছে। গত সোমবার চরেই পালন করা হয় মানববন্ধন কর্মসূচি। আজ রবিবার কণফুলী নদীতে ভাসমান মঞ্চেই অনুষ্ঠিত হবে সংবাদ সম্মেলন। পরিবেশবাদী সাতটি সংগঠন এক হয়ে কর্মসূচিগুলো পালন করছে। সংগঠনগুলোর মধ্যে আছে- কর্ণফুলী রক্ষায় জনগণের প্রতিবাদ মঞ্চ, চট্টগ্রাম নদী ও খাল রক্ষা আন্দোলন, বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ ফোরাম, চট্টগ্রাম ইতিহাস সংস্কৃতি গবেষণা কেন্দ্র, আরএসকে ফাউন্ডেশন ও কর্ণফুলী নদী সাম্পান মাঝি কল্যাণ সমিতি ফেডারেশন।

 

সর্বশেষ খবর