মঙ্গলবার, ২৬ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা
কিশোর গ্যাং

দ্বন্দ্বের বলি আকাশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ডিজে পার্টিতে মোবাইল ফোন খোয়া যাওয়া কেন্দ্র করে দ্বন্দ্বে জড়ায় সাভারের দুই কিশোর গ্যাং। এর জেরেই খুন হন আকাশ মাহমুদ। তাকে নৃশংসভাবে কুপিয়ে হত্যা করা হয়। একটি হোটেলে প্রকাশ্যে এমন খুনের ঘটনায় মূলহোতা হৃদয় গ্রুপের প্রধান হৃদয় হোসেন ওরফে গিয়ার হৃদয়সহ আটজনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাব। সাভারে পৃথক অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে উদ্ধার করা হয় বিপুলসংখ্যক দেশি অস্ত্র, হেরোইন ও কষ্টিপাথরসদৃশ মূর্তি। গতকাল রাজধানীর কারওয়ান বাজার র‌্যাব মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান বাহিনীর আইন ও গণমাধ্যম শাখার পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, সম্প্রতি সাভারে বেশ কয়েকটি হত্যাকাণ্ড ঘটে।

এসব হত্যার পেছনে হৃদয় গ্রুপের সদস্যদের সম্পৃক্ততা রয়েছে। চার-পাঁচ বছর ধরে হৃদয়ের নেতৃত্বে ‘হৃদয় গ্রুপ’ পরিচালিত হয়ে আসছে। তারা এলাকায় ছিনতাই, ডাকাতি, মাদক ব্যবসা, জমি দখল, চাঁদাবাজি, অপহরণ ও সন্ত্রাসী কার্যক্রম পরিচালনা করত। তাদের আয়ের অন্যতম উৎস ছিল সাভারে নির্মাণকাজে চাঁদাবাজি। এ ছাড়া মাদক সেবন, কেনাবেচাসহ আধিপত্য বিস্তার কেন্দ্র করে বিভিন্ন সংঘর্ষ ঘটত বলে জানা যায়। এ গ্রুপের সদস্যরা বিভিন্ন সময় ভাড়াটিয়া সন্ত্রাসী হিসেবেও কাজ করত।

কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, গ্রেফতারকৃতরা সাভারের আড়াপাড়ায় একটি বাসায় ডিজে পার্টির আয়োজন করেছিল। সেখানে একটি মোবাইল হারানোর ঘটনা কেন্দ্র করে দুই যুবককে মারধর করা হয়। সে ঘটনার জেরে গত বছরের ৯ জুলাই সাভারের একটি খাবার হোটেলের ভিতর হৃদয় গ্রুপ ও পিনিক রাব্বি গ্রুপের সংঘর্ষের সময় আকাশ মাহমুদ নামে এক যুবককে ধারালো অস্ত্র দিয়ে কুপিয়ে নৃশংসভাবে হত্যা করা হয়। এ ছাড়া পূর্বশত্রুতার জেরে এ গ্রুপের সদস্যরা ১২ মার্চ সাভার পৌর এলাকায় সোহেল নামে এক ব্যক্তিকে এবং ছিনতাই করা টাকা ভাগবাঁটোয়ারা নিয়ে ২২ মার্চ খুন করে আমজাদ নামে অন্য এক ব্যক্তিকে। তাকে হত্যার উদ্দেশ্যে বাড়ি থেকে ডেকে নিয়ে ছুরি মেরে গুরুতর জখম করে এলাকার সবুজবাগ পুকুরপারে ফেলে যায়। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে পাশের হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। র‌্যাব কমান্ডার জানান, অভিযুক্ত ও গ্রেফতার সবাই সাভারের হৃদয় গ্রুপের সদস্য। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে অভিযুক্তরা সব হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে নিজেদের সংশ্লিষ্টতার বিষয়ে তথ্য দিয়েছেন। অন্য গ্রেফতারকৃতরা হলেন আরিয়ান আহম্মেদ জয় ওরফে ড্যাগার আরিয়ান, নাসির উদ্দিন নাসু ওরফে বাবা নাসু, আবিরুল হক আবির ওরফে কাটা আবির, জোবায়ের হাসান খন্দকার ওরফে পাইটু জোবায়ের, জাকির হোসেন রনি, জাহিদুল ইসলাম ওরফে জাহেদ ও আমির হামজা।

কে এ গিয়ার হৃদয় : গিয়ার হৃদয় সাভারে চার-পাঁচ বছর ধরে একটি সন্ত্রাসী গ্রুপ পরিচালনা করে আসছিল। তার বিরুদ্ধে সাভার মডেল থানায় মাদক, হত্যা, মারামারি, ছিনতাইসহ ছয়টি মামলা রয়েছে। গ্রেফতারকৃতরা কষ্টিপাথর ও ধাতব মুদ্রা প্রতারণার সঙ্গে জড়িত বলে জানায় র‌্যাব। এ ছাড়া ভুয়া পাথরের মূর্তি কষ্টিপাথর বলে বিক্রিও করত। গ্রেফতার জাকির হোসেন রনি ওরফে মেশিন রনি হৃদয় গ্রুপের অন্যতম সদস্য। সে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগের দিন হৃদয়ের কাছ থেকে ৪০ হাজার টাকায় একটি আগ্নেয়াস্ত্র কেনে। এ অস্ত্র দিয়ে সন্ত্রাসী কার্যক্রম করত। আগ্নেয়াস্ত্র ভাড়া দেওয়ায় তাকে সবাই মেশিন রনি হিসেবে চিনত। তার বিরুদ্ধে সাভার থানায় হত্যা মামলা রয়েছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর