রবিবার, ৩১ মার্চ, ২০২৪ ০০:০০ টা

মহাব্যস্ত চট্টগ্রামের খলিফাপট্টি

আজহার মাহমুদ, চট্টগ্রাম

মহাব্যস্ত চট্টগ্রামের খলিফাপট্টি

ঈদকে সামনে রেখে মহাব্যস্ত চট্টগ্রামের ঐতিহ্যবাহী খলিফাপট্টি। ১৯৪৭ সালে দেশভাগের পর থেকে সাত দশক ধরে পোশাক তৈরির সুনাম  ধরে রেখেছে চট্টগ্রামের এই দর্জিপাড়া। প্রতিবারের মতো এবারও নিরবচ্ছিন্ন কর্মচাঞ্চল্য খলিফাপট্টিতে।

৫ শতাধিক দোকানে ৬ হাজারের অধিক দর্জি এখন ঈদ পোশাক তৈরিতে ব্যস্ত। এখানকার নামমাত্র মজুরিতে সেলাই করা তৈরি পোশাকগুলো দেশের অনেক অভিজাত শপিং মলে বিক্রি হচ্ছে চড়া দামে। কী নেই এই দর্জিপাড়ায়। ভারত, পাকিস্তান ও বাংলাদেশের ডিজাইন অনুযায়ী এখানকার দর্জিরা শিশুদের ফ্রক, স্কার্ট, থ্রি-পিস, পাঞ্জাবিসহ প্রায় সব ধরনের জামা তৈরিতে দক্ষ। এখানকার দর্জিদের তৈরি করা জামা ছড়িয়ে পড়ছে সিলেট, কক্সবাজার, নোয়াখালী, উত্তরবঙ্গসহ দেশের প্রত্যন্ত উপজেলাগুলোতেও। চট্টগ্রামের অভিজাত আমিন সেন্টার, স্যানমার, ইউনেস্কো, আখতারুজ্জামান সেন্টার, আফমি প্লাজায়ও বিক্রি হচ্ছে এসব পোশাক। বৃহস্পতিবার খলিফাপট্টিতে গিয়ে দেখা গেছে, দীর্ঘদিনের পুরনো অন্তত ৭০টি ভবনের প্রায় প্রতিটি ফ্লোরেই সেলাই মেশিনের নিরবচ্ছিন্ন আওয়াজ শোনা যাচ্ছে। একেকটি ফ্লোরে একাধিক সেলাই কক্ষ আছে। সেগুলোতে ১২ থেকে ২৫ বছর বয়সী কিশোর-তরুণরা চুক্তিভিত্তিক পোশাক তৈরি করছেন। নারীরা বোতাম লাগানো, চুমকিসহ অন্যান্য উপাদান যুক্ত করে দৃষ্টিনন্দন করে তুলছেন পোশাককে। কেউ কেউ আবার তৈরি পোশাক ভাঁজ করে প্যাকেজিংয়ে ব্যস্ত।

মো. মাসুদ নামের এক তরুণ জানান, তারা দিনরাত কাজ করলেও মজুরি পান খুবই কম। ৩০ থেকে ৫০ টাকা শিশুদের পোশাক সেলাইয়ের মজুরি পান তারা। অথচ এসব পোশাক সেলাইয়ের পর কারুকাজ শেষে অভিজাত শপিং মলগুলোতে ২ থেকে ৩ হাজার টাকায়ও বিক্রি হচ্ছে।

আলপনা ট্রেডার্স নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী নুর মোহাম্মদ জানান, ২০০০ সালের আগে পর্যন্ত এখানকার ব্যবসার জৌলুস ছিল। সে সময় তিনি তার বাবার সঙ্গে ব্যবসা দেখাশোনা করতেন। বর্তমানে বিদেশি পোশাকের জনপ্রিয়তা বেড়ে যাওয়ায় এখানকার ব্যবসার জৌলুস কমে আসছে। তবে এখনো এক শ্রেণির ক্রেতা কম দামে পোশাক কিনতে খলিফাপট্টির তৈরি পোশাকের ওপরই ভরসা রাখেন।

এ বাজারের ব্যবসায়ী ও বণিক সমিতির নেতারা জানান, বিভিন্ন দেশের নানা ডিজাইনের পোশাক বাজারে এলে সেগুলো সংগ্রহ করে হুবহু নতুন করে তৈরি করতে পারেন এখানকার দর্জিরা। মূলত এ কারণে এই বাজারের খ্যাতি দেশজুড়ে। একসময় খলিফাপট্টির কাপড় দিয়ে দেশের অনেক এলাকায় পুরো ঈদের পোশাকের জোগান দেওয়া হতো। বর্তমানে খুচরা বিক্রেতারা ভারত, পাকিস্তান, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে তৈরি পোশাক আমদানির দিকে ঝুঁকছেন। ফলে এখানকার অর্ডারের পরিমাণ আগের চেয়ে কমে গেছে।

খলিফাপট্টি বণিক কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক ইমাম হোসেন বলেন, করোনা মহামারি থেকে কয়েক বছর ধরে এখানকার ব্যবসা-বাণিজ্যে এক প্রকার দুর্যোগ নেমে আসে। বেশির ভাগ দোকানির বেচাকেনা শূন্যে নেমে আসে। তবে এবার গত বছরের তুলনায় অর্ডারের পরিমাণ বেশি। রোজার অন্তত এক মাস আগে থেকে এখনো পর্যন্ত দর্জিরা পুরোদমে কাজ করে যাচ্ছেন।

সমিতির সভাপতি খন্দকার নুরুল ইসলাম বলেন, ব্রিটিশ শাসন শেষ হওয়ার পর থেকেই খলিফাপট্টির জন্ম। সেই হিসাবে এ বাজারের ইতিহাস ৭৭ বছরের পুরনো। বিভিন্ন সময়ে নানা উত্থান-পতনের পরও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে এ দর্জিপাড়া। কিন্তু সরকারি পৃষ্ঠপোষকতার অভাব, ব্যাংকসহ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর সহযোগিতা না পাওয়ায় নতুন করে এ বাজারের বিকাশ হচ্ছে না। ফলে ঝুঁকিপূর্ণ অনেক ভবনেও কাজ করছেন অনেকে।

 

 

সর্বশেষ খবর