শিরোনাম
সোমবার, ১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
প্রতারণার ভয়ংকর রূপ

উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার ফাঁদ

নিজস্ব প্রতিবেদক

প্রতি মাসে ১২ হাজার ৫০০ টাকা হারে উপবৃত্তি পাওয়ার ফাঁদে ফেলে ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। প্রথমে তারা নিজেদের ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের কর্মকর্তা পরিচয়ে যোগাযোগ করে। তারপর উপবৃত্তির টাকা পাঠানোর জন্য অভিভাবকের বিকাশ নম্বর ও এনআইডি চায়। এরপর নানান কৌশল করে হাতিয়ে নেয় টাকা। এমন এক ভুক্তভোগী আইনজীবী মামলা করার পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) এ চক্রের মূলহোতা মো. সাজ্জাত হাওলাদারকে গ্রেফতার করেছে। এ সময় তার কাছ থেকে ৩টি মোবাইল ফোন এবং ৩টি সিমকার্ড জব্দ করা হয়। মোবাইল ব্যাংকিং অ্যাকাউন্টের তথ্য, পাসওয়ার্ড অপরিচিত কাউকে না দেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন ডিবির এই কর্মকর্তা। গতকাল রাজধানীর মিন্টো রোডে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ। তিনি বলেন, মামলার তদন্তে নেমে সাজ্জাতকে গ্রেফতার করে ডিবি সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম (দক্ষিণ) বিভাগ। গত শনিবার রাজধানীর হাতিরঝিল এলাকা থেকে প্রতারক সাজ্জাতকে গ্রেফতার করা হয়। তিনি ফরিদপুরের বাসিন্দা। বর্তমানে ঢাকায় রাজমিস্ত্রির কাজ করেন। আসামির স্বীকারোক্তিতে জানা যায়, স্বল্প পরিশ্রমে অধিক টাকা উপার্জনের লক্ষ্যে প্রথমে এলাকার সমবয়সী বন্ধুরা মিলে মোবাইল ব্যাংকিং এজেন্টের টাকা আত্মসাৎ করার কৌশল রপ্ত করে।

এরপর সংঘবদ্ধ চক্র গড়ে তুলে ব্ল্যাকমেইলিং বা বৃত্তির টাকা দেওয়ার প্রলোভন দেখিয়ে লাখ লাখ টাকা হাতিয়ে নিত।

তিনি জানান, ভুক্তভোগী আইনজীবীর মেয়ে গত বছর এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। গত ২২ জানুয়ারি ওই আইনজীবীর ফোনে একটি মেসেজ আসে। সেখানে জানানো হয়, ভালো রেজাল্টের জন্য তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে। এজন্য আইনজীবীকে উল্লিখিত ফোন নম্বরে যোগাযোগ করতে বলা হয়। সে অনুযায়ী ২৩ জানুয়ারি নির্ধারিত নম্বরে কল করলে অপর প্রান্ত থেকে বকশীবাজার শিক্ষা বোর্ডের অফিস বলে জানানো হয়। এ সময় তার মেয়ে প্রতি মাসে ৫ হাজার ২০০ টাকা করে ৭ মাস এবং এক বছর পর থেকে তিন বছর পর্যন্ত মাসিক ১২ হাজার ৫০০ টাকা করে উপবৃত্তি পাবে বলে জানানো হয়। এ সময় ভুক্তভোগীর ব্যাংকের নাম, হিসাব নম্বর ও শাখার নাম জানতে চায়। যে অ্যাকাউন্টে মেয়ের স্কলারশিপের টাকা জমা হবে, সেজন্য একটি বিকাশ নম্বর ও মেয়ের মোবাইল নম্বর এবং এনআইডি নম্বর জানতে চায়। ভুক্তভোগী প্রয়োজনীয় তথ্য দিলে তাকে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ ফোন করে আরও কিছু তথ্য চাইবে বলে জানানো হয়।

পরে ভুক্তভোগীর বিকাশ নম্বরে বিভিন্ন মেসেজ আসে। নির্দেশনা অনুযায়ী ভুক্তভোগী একাধিক কোড নম্বর সরবরাহও করে যান। এক পর্যায়ে ফোন করে ভুক্তভোগীকে মোবাইলে ক্যালকুলেটর দেখতে বলে। নির্দিষ্ট একটি নম্বরের সঙ্গে অপর একটি নম্বর এবং ভুক্তভোগীর বিকাশের পিন যোগ করে যোগফল জানতে চাইলে ভুক্তভোগী যোগফল জানান। তখন তাকে ১২ ঘণ্টা তার বিকাশ লেনদেন বন্ধ রাখতে বলা হয়। একই সঙ্গে অ্যাকাউন্ট চেক করতেও নিষেধ করা হয়। এ পর্যায়ে ভুক্তভোগীর সন্দেহ হলে ১০-১৫ মিনিট পর ভুক্তভোগী বিকাশ অ্যাকাউন্ট চেক করেন। তখন তিনি দেখতে পান, তার ১ লাখ টাকা কেটে নেওয়া হয়েছে। এভাবে আরও ১ লাখ ও ৮০ হাজার টাকাসহ সর্বমোট মোট ২ লাখ ৮০ হাজার টাকা হাতিয়ে নেওয়া হয়। পরে প্রতারণার বিষয়টি বুঝতে পেরে শাহবাগ থানায় একটি মামলা করেন ভুক্তভোগী।

সর্বশেষ খবর