মঙ্গলবার, ২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

আন্দোলনে ভূমিকা নিয়ে বিভক্ত সিলেট বিএনপি

নিজস্ব প্রতিবেদক, সিলেট

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের প্রায় তিন মাস পর সরকারবিরোধী আন্দোলনে পদবিধারী নেতাদের ভূমিকা নিয়ে সিলেট বিএনপির অভ্যন্তরীণ দ্বন্দ্ব মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। দেখা দিয়েছে প্রকাশ্য বিভক্তি। অভিযোগ উঠেছে, আন্দোলনে অনুপস্থিত থাকা নেতারা অবমূল্যায়ন করছেন ত্যাগী ও জেলখাটা নেতা-কর্মীদের। এ ছাড়া জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর ‘বিভাগীয় সাংগঠনিক রিপোর্ট’ নিয়েও চলছে অসন্তোষ। অবশ্য রিপোর্টের বিষয়টি অস্বীকার করেছেন তিনি।

সরকার পতনের ‘এক দফা’ আন্দোলনে জেলা ও মহানগর বিএনপির পদবিধারী অনেক নেতাই ছিলেন অনুপস্থিত। কেন্দ্রীয় পদবিধারী অনেক নেতারও দেখা মেলেনি মাঠের আন্দোলনে। পদহীন ও কম গুরুত্বপূর্ণ নেতারাই সক্রিয় ভূমিকা রেখেছেন। আসামি হয়েছেন ডজন ডজন মামলার। অন্তত ২০০ নেতাকে যেতে হয় জেলে। ‘দুঃসময়ে’ ‘বড় নেতাদের’ পাশে না পাওয়ায় তৃণমূলে ক্ষোভের সঞ্চার হয়। সেই ক্ষোভ এখন প্রকাশ্যে।

দলীয় সূত্র জানায়, সিলেট জেলা ও মহানগর বিএনপির ব্যানারে গত শুক্রবার দক্ষিণ সুরমার একটি কনভেনশন সেন্টারে ইফতারের আয়োজন করা হয়। সেখানে ভার্চুয়ালি বক্তব্য রাখেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান। জেলা ও মহানগরের গুরুত্বপূর্ণ অনেক নেতা ছিলেন অনুপস্থিত। এ ছাড়া মাহফিলে গেলেও কেন্দ্রীয় পদবিধারী সিলেটের নেতারা মঞ্চে ওঠেননি। দর্শক সারিতে বসে ইফতারে অংশ নেন। কারা নির্যাতিত অনেক নেতাও ইফতার মাহফিলের দাওয়াত না পাওয়ার অভিযোগ করেছেন। এ ইফতার মাহফিলের দুই দিনের মাথায় রবিবার ‘রাজপথের সক্রিয় ও কারা নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা’ ব্যানারে নগরীর ইলেকট্রিক সাপ্লাই রোডে একটি কমিউনিটি সেন্টারে ইফতারের আয়োজন করা হয়। দলের একাধিক নেতার সঙ্গে আলাপ করে জানা গেছে, ক্ষোভের বহিঃপ্রকাশ হিসেবেই এ আয়োজন করা হয়।

সিলেট মহানগর বিএনপির সাবেক যুগ্ম আহ্বায়ক রেজাউল হাসান কয়েস লোদী বলেন, বিগত আন্দোলনে যেসব নেতা-কর্মী জীবনবাজি রেখে কর্মসূচি পালন করেছেন, যারা কারা নির্যাতিত হয়েছেন তাদের নিয়ে ইফতারের আয়োজন করা হয়েছে। এতে রাজপথের সাহসী সৈনিকদের মনোবল আরও সুদৃঢ় হবে বলে আমরা মনে করছি।

জেলা বিএনপির সদস্য ও জেলা স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি আবদুল আহাদ খান জামাল বলেন, ‘জেলা ও মহানগর বিএনপির ইফতার মাহফিলে অনেক ত্যাগী ও নির্যাতিত নেতাদের দাওয়াতই করা হয়নি। বর্তমান নেতৃত্বে দলের মধ্যে ঐক্যের পরিবর্তে বিভেদ সৃষ্টি হচ্ছে। তাই মেয়াদোত্তীর্ণ জেলা কমিটি ভেঙে কাউন্সিলের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠনের দাবি জোরালো হচ্ছে।’

জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরী বলেন, ‘রাজপথে সক্রিয় ও কারা নির্যাতিত নেতা-কর্মীরা’ ব্যানারে আয়োজিত ইফতারের সঙ্গে বিএনপির দলীয় কোনো সম্পর্ক নেই। এ নিয়ে নেতা-কর্মীদেরও বিভ্রান্ত হওয়ার কিছু নেই।’

এদিকে দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান বরাবর সিলেট জেলা বিএনপির সভাপতি আবদুল কাইয়ুম চৌধুরীর লেখা পাঁচ পৃষ্ঠার একটি রিপোর্ট এখন নেতা-কর্মীদের হাতে হাতে। তবে ওই রিপোর্টের নিচে কাইয়ুম চৌধুরীর স্বাক্ষর নেই। কাইয়ুম চৌধুরীও রিপোর্টটি অস্বীকার করেছেন। তবে নেতা-কর্মীদের দাবি, রিপোর্টটি কাইয়ুম চৌধুরী ঢাকায় পাঠিয়েছেন। রিপোর্টটি ফাঁস হওয়ায় এখন তিনি অস্বীকার করছেন।

বিভাগীয় ওই রিপোর্টে আন্দোলন সংগ্রামে কেন্দ্রীয় ১৬ সিলেটি নেতার ভূমিকা তুলে ধরা হয়েছে। এর মধ্যে দলের চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা খন্দকার আবদুল মুক্তাদির ছাড়া আর কারও ভূমিকা সন্তোষজনক ছিল না বলে উল্লেখ করা হয়। রিপোর্টে আন্দোলন সংগ্রামের সঠিক চিত্র উঠে আসেনি বলে দাবি করছেন নেতা-কর্মীরা।

সর্বশেষ খবর