শুক্রবার, ৫ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সাইবার ট্রাইব্যুনালে রেকর্ড মামলার নিষ্পত্তি

রাজশাহী

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

বয়সে তরুণ রাসেল ক্ষোভে, দুঃখে ফেসবুকে পোস্ট দেন। কিন্তু তার এ স্ট্যাটাস অন্যের জন্য অপমানজনক ও মানহানিকর হওয়ায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে অপরাধ সংগঠিত হয়। স্বাভাবিক ভাবেই ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। রাসেল খুব ভয়ে ছিলেন তার ক্যারিয়ার হয়তো তখনই শেষ। মামলায় সাক্ষ্য প্রমাণ শেষে রায় হয়। রায়ে সাইবার ট্রাইব্যুনালের বিচারক জিয়াউর রহমান শাস্তি না দিয়ে রাসেলকে প্রবেসন দেন। রাসেলও প্রবেসনের শর্ত অনুযায়ী অনলাইনে সাইবার সচেতনতা বিষয়ে প্রচারণা চালাচ্ছেন। রাসেল বলেন, ‘আদালত তার আদেশে বলেছেন, আমার প্রবেসন শেষ হলে চাকরি পেতে এ মামলা কোনো বাধা হবে না।’ বর্তমানে সাইবার সচেতনতা সৃষ্টিতে রাসেল অনলাইনে প্রচারণা চালাচ্ছেন।

রাসেলের মতো এক ডজন তরুণ যারা এক সময় সাইবার অপরাধে জড়িয়েছিলেন, তারা আজ প্রবেসনে গিয়ে সাইবার সচেতনতা নিয়ে কাজ করছেন। শাস্তি হলে হয়তো তাদের জীবন দুর্বিষহ হয়ে পড়ত। তারা উপলব্ধি করছেন, সাইবার অপরাধ নয়, বরং প্রতিরোধে সচেতনতা সৃষ্টিতে নিজ অবস্থান হতে কাজ করবেন। এক সময়ের সাইবার অপরাধীরা এখন সাইবার ডিফেন্ডার হয়ে অবদান রাখছেন। গত চার বছরে মামলা নিষ্পত্তিতে বড় অবদান রেখেছে এই আদালত।

রাজশাহী বিভাগের ৮ জেলার মানুষের জন্য ২০২১ সালের ৪ এপ্রিল রাজশাহীতে প্রতিষ্ঠিত হয় সাইবার ট্রাইব্যুনাল আদালত। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এই আদালতে পুরাতন মামলার পাশাপাশি নতুন মামলা বাড়তে থাকে।

মামলার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে চলতে থাকে বিচারিক কার্যক্রম। পুরাতন মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য আদালত বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। আদালতে সাক্ষীদের উপস্থিত নিশ্চিত করার জন্য ডাক মারফত প্রসেস পাঠানোর পাশাপাশি অনলাইনে বা মেইলেও সাক্ষীদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। এতে করে তিন বছরে তিন হাজারের বেশি সাক্ষীর সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। নিষ্পত্তি করা হয় প্রায় সাত শ মামলা। প্রতিটি মামলা গড়ে মাত্র তিন মাসের মধ্যে নিষ্পত্তি হয়েছে বলে আদালত সূত্র থেকে জানায়। বর্তমানে এই আদালতে ২৫টি মামলা বিচারাধীন, যা নিষ্পত্তির অপেক্ষায় আছে।

রাজশাহী সাইবার ট্রাইব্যুনাল পাবলিক প্রসিকিউটর অ্যাডভোকেট ইসমত আরা বেগম বলেন, ‘এই ট্রাইব্যুনালে যে কোনো সাইবার অপরাধের মামলার দ্রুত বিচার নিশ্চিত করা হয়। আমাদের কোর্টে প্রচুর সাক্ষী আসে। আর এ জন্য দ্রুততর সময়ে মামলা নিষ্পত্তি করা সম্ভব হয়। এর পেছনে আদালতের আন্তরিক প্রচেষ্টা এবং আইনজীবীদের সহযোগিতা বিশেষভাবে ভূমিকা রেখেছে।’

সাইবার ট্রাইব্যুনালে নিয়মিত মামলা পরিচালনাকারী আইনজীবী অ্যাডভোকেট মাহমুদুর রহমান বলেন, দ্রুত মামলা নিষ্পত্তি ও প্রতিকার পাওয়ায় বিচার প্রার্থীদের খরচ কমছে, আদালত ব্যবস্থার প্রতি মানুষের আস্থা বাড়ছে।            

রাজশাহী আইনজীবী সমিতির সাবেক সাধারণ সম্পাদক পারভেজ তৌফিক জাহেদীর বলেন, মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি হলে বিচার প্রার্থীর ভোগান্তি কমে। সাইবার ট্রাইব্যুনালে মামলার দ্রুত বিচার নিষ্পত্তি হলে সেটি ভালো খবর।

সর্বশেষ খবর