মঙ্গলবার, ৯ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
ঈদুল ফিতর

ছুটিতে ফাঁকা বন্দরনগরী

বাড়ি ফিরছেন ৩০ লাখ বাসিন্দা, আকাশপথে দ্বিগুণ ভাড়া

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

লম্বা ছুটি পেয়ে ঈদ উদযাপনে নাড়ির টানে বাড়ি ফিরছে লাখ লাখ মানুষ। সাম্প্রতিক বছরগুলোর ন্যায় এবারও নগরীর অর্ধেক বাসিন্দা অর্থাৎ প্রায় ৩০ লাখ মানুষ বাড়ি ফিরবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে। অসংখ্য মানুষের বাড়ি ফেরার চাপে চট্টগ্রামে দেখা দিয়েছে পরিবহন সংকট। রেলপথে বাড়তি ভাড়া আদায়ের সুযোগ না থাকলেও সড়ক ও আকাশপথে ইচ্ছামতো ভাড়া আদায় করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীর ৭০ লাখ বাসিন্দার মধ্যে অর্ধেকেরও বেশি চট্টগ্রামের বাইরের বিভিন্ন জেলা ও পার্শ্ববর্তী উপজেলাগুলোর বাসিন্দা। যারা উৎসব এলে শেকড়ের টানে গ্রামের বাড়ি ফিরে যান। এর মধ্যে উত্তর ও দক্ষিণবঙ্গসহ দূরবর্তী জেলাগুলোর বাসিন্দারা দূরপাল্লার বাস, ট্রেন, লঞ্চ ও আকাশপথে বাড়ি যাচ্ছেন। চট্টগ্রামের উপজেলাগুলোর বাসিন্দারা স্বল্পপাল্লার গণপরিবহন, ব্যক্তিগত ও ভাড়ায়চালিত কার, মাইক্রো, টেম্পোসহ বিভিন্ন যানবাহনে বাড়ি যাচ্ছেন।

রেলওয়ের বিভাগীয় ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সাইফুল ইসলাম জানান, ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে ঢাকা, উত্তরবঙ্গসহ কয়েকটি রুটে স্পেশাল আন্তনগর, মেইল ট্রেন চলাচল করবে। প্রথমবারের মতো চট্টগ্রাম-কক্সবাজার রুটেও বিশেষ দুটি ট্রেন চলাচল করবে। প্রয়োজনমতো প্রতিটি ট্রেনে বাড়তি বগি সংযোজন করা হয়েছে। ইতোমধ্যে ছেড়ে যাওয়া ট্রেনগুলো যাত্রীতে পরিপূর্ণ। তবে কোনো যাত্রী যাতে ছাদে কিংবা অন্য কোনোভাবে অনিরাপদ ভ্রমণ না করেন সেদিকে কঠোর রেলওয়ে।

এদিকে চট্টগ্রাম আন্তজেলা বাস মালিক সমিতির নেতারা জানান, গত শুক্রবার থেকে ধীরে ধীরে মানুষ বাড়ি যেতে শুরু করেছে। ঈদ উপলক্ষে শুক্রবার থেকে অলংকার, বড়পুল, ফ্রিপোর্ট পয়েন্ট, কদমতলী, থেকে প্রতিদিন ৭০০-এর বেশি গাড়ি দেশের বিভিন্ন জেলার দিকে ছেড়ে গেছে। এসব গাড়িতে কমপক্ষে ৪০-৫০ জন পর্যন্ত যাত্রী ছিল। এসব গাড়ি আবার চট্টগ্রামে ফিরে এসে ঈদের দিন পর্যন্ত যাত্রী নিয়ে ছেড়ে যাবে।

সরেজমিন দেখা গেছে, রবিবার বিকালে চট্টগ্রাম থেকে বাড়ি ফেরা মানুষের সর্বোচ্চ ভিড়। নগরীর প্রবেশমুখগুলো বাড়ি ফেরা মানুষের জটলা লেগেই আছে। অনেকে আবার ঈদের একদিন পর যাওয়ার জন্যও টিকিট কেটে নিচ্ছেন। নিজের জেলার রুটের বাসের টিকিট না পেয়ে বিকল্প রুট হয়েও বাড়ি যাচ্ছেন কেউ কেউ।

এদিকে ঈদ কেন্দ্র করে গণপরিবহনে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ উঠছে। গত রবিবার সন্ধ্যায় বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগে নগরীর অলংকার, একে খান মোড় ও দামাপাড়ার দূরপাল্লার বাস কাউন্টারগুলোতে অভিযান চালায় বিআরটিএ। কিন্তু এরপরও বাড়তি ভাড়া আদায় থেমে নেই বলে দাবি করেছেন একাধিক দূরপাল্লার যাত্রী।

সড়ক পথের যানজট, রেলপথের শিডিউল বিড়ম্বনাসহ নানা কারণে কিছুটা স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়ি যেতে সামর্থ্যবান যাত্রীরা আকাশপথ বেছে নিলেও সেখানেও আছে ভোগান্তি। চট্টগ্রাম থেকে সরকারি ও বেসরকারি মিলিয়ে চারটি বিমান সংস্থা পরিচালিত হলেও ফ্লাইট ও বিমানে সিটের সংখ্যা তুলনামূলক কম। ফলে টিকিট পেতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের। আবার এ সুযোগ কাজে লাগিয়ে দ্বিগুণের বেশি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেছে।

আকাশযাত্রায় সেবা প্রদানকারী সংস্থাগুলোর তথ্যমতে, সড়কপথের চেয়ে আকাশপথে বাড়তি ভাড়া আদায়ের অভিযোগ বেশি। অন্য সময়ে ৩,৫০০ টাকা থেকে ৪ হাজার টাকার ভাড়া বিভিন্ন বিমান সংস্থা ভেদে ৮ থেকে ১০ হাজার টাকা পর্যন্ত আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে।

অ্যাসোসিয়েশন অব ট্রাভেল এজেন্সি অব বাংলাদেশ (আটাব) চট্টগ্রাম জোনের চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আবু জাফর বলেন, ‘ঈদে স্বাভাবিকভাবেই চাপ একটু বেশি থাকে। এটাকে পুঁজি করে কোনোভাবেই বাড়তি ভাড়া আদায় কাম্য নয়। সব সময় এমন অভিযোগ পাওয়া যায়। সবার পর্যাপ্ত টাকা নেই। অনেকে বাজেটের মধ্যে আকাশপথে ভ্রমণের চেষ্টা করেন। চাপ কমাতে ফ্লাইট সংখ্যা বাড়ানো যেতে পারে।’

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর