বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

অপরাধে কিশোরদের দৌরাত্ম্য

চট্টগ্রামে সক্রিয় ২০০ গ্রুপের দেড় হাজার সদস্য - আশ্রয়দাতা পাঁচ কাউন্সিলরসহ ৮০ বড় ভাই

মুহাম্মদ সেলিম, চট্টগ্রাম

অপরাধে কিশোরদের দৌরাত্ম্য

বন্দর নগরী চট্টগ্রামের অপরাধ জগতে চলছে কিশোর গ্যাংদের দাপট। খুন থেকে ছিনতাই, অস্ত্র-মাদক ব্যবসা থেকে শুরু করে চাঁদাবাজি অপরাধের সব শাখা-উপশাখায় রয়েছে তাদের সমান বিচরণ। কথিত বড় ভাই এবং রাজনৈতিক কতিপয় নেতার সংস্পর্শে এসে তারা একেকজন হয়ে উঠেছে অপ্রতিরোধ্য।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম নগরীতে সক্রিয় রয়েছে দুই শতাধিক কিশোর গ্যাংয়ের দেড় হাজার সদস্য। তাদের আশ্রয় প্রশ্রয় দেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের পাঁচ কাউন্সিলরসহ কথিত ৮০ বড় ভাই।

নগরীতে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, সামাজিক অস্থিরতা, কিশোর গ্রুপের উত্থান ও প্রসারের কারণ খুঁজতে জরিপ পরিচালনা করে চট্টগ্রাম মহানগর পুলিশ (সিএমপি)। ওই জরিপে উঠে এসেছে কিশোর গ্যাংয়ের ভয়ংকর চিত্র। জরিপে বলা হয়- কথিত কিশোর গ্যাং লিডার ও বিভিন্ন রাজনৈতিক নেতার সংস্পর্শে এসে হিরোজম হতে গিয়ে জড়িয়ে পড়ছে কিশোর অপরাধে। তাদের সংস্পর্শে এসে কিশোরদের আচরণ ও চিন্তার জগতের বড় ধরনের নেতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। তারা মাদকের টাকা জোগাড় করতে জড়িয়ে পড়ছে অপরাধে। এ বিষয়ে সিএমপি কমিশনার কৃষ্ণপদ রায় বলেন, সিএমপি পরিচালিত জরিপে যে তথ্যগুলো পেয়েছি তা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হয়েছে। কিশোর গ্যাং কালচার রোধে এরই মধ্যে পুলিশ কাজ শুরু করেছে। কথিত বড় ভাইদের নজরদারিতে রাখা হয়েছে। কয়েকজন বড় ভাইকে গ্রেফতারের আওতায় আনাও হয়েছে।

সিএমপির বিভিন্ন থানা থেকে পাওয়া তথ্য মতে- চট্টগ্রাম নগরীতে কমপক্ষে ২০০ কিশোর গ্যাং সক্রিয়। এসব গ্রুপের সদস্য রয়েছে কমপক্ষে দেড় হাজার। এ গ্রুপগুলোর একেকটিতে সদস্য রয়েছে ৫ থেকে ২০ জন পর্যন্ত। এ গ্রুপগুলোকে আশ্রয় প্রশ্রয় দেন কমপক্ষে ৮০ জন কথিত বড় ভাই। এই বড় ভাইদের মধ্যে আবার পাঁচজন হচ্ছেন চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের কাউন্সিলর। এ ছাড়া বড় ভাইদের তালিকায় রয়েছে কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতা, যুবলীগ নেতা, ছাত্রলীগের বর্তমান ও সাবেক নেতারা। কথিত এ বড় ভাইদের আশ্রয় প্রশ্রয়ে ‘ছোট ভাইয়েরা’ অপরাধ জগতে হয়ে উঠেছেন অপ্রতিরোধ্য। কিশোর অপরাধ বৃদ্ধির চিত্র মিলেছে চট্টগ্রাম আদালতে বিচারাধীন মামলার পরিসংখ্যানে। বর্তমানে আদালতে কিশোর অপরাধ সংশ্লিষ্ট মামলা বিচারাধীন রয়েছে প্রায় আড়াই হাজার। ২০২১ সালে এ সংখ্যা ছিল ১ হাজার ৮৮টি।

জানা যায়, চট্টগ্রামের অপরাধ সাম্রাজ্যে এক সময় নিয়ন্ত্রণ করত পেশাদার দাগি অপরাধীরা। সময়ের পরিবর্তনের সঙ্গে সঙ্গে চট্টগ্রামের অপরাধ জগতের নিয়ন্ত্রণ করা শুরু করেছে কথিত বড় ভাই ও কথিপয় রাজনৈতিক দলের নেতারা। তারা অপরাধ জগৎ নিয়ন্ত্রণে রাখতে সারথী হিসেবে নিয়েছে এলাকাভিত্তিক কিশোরদের। বড় ভাইদের আশ্রয় প্রশয়ে নগরীর অলিগলিতে চলছে কিশোর-তরুণ অপরাধীদের দাপট। সম্প্রতি নগরীতে সংঘটিত বেশ কয়েকটি খুন, ডাকাতি, ছিনতাই, অপহরণ ও দস্যুতার ঘটনায় যাদের গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ হচ্ছে কিশোর।

সর্বশেষ খবর