বুধবার, ১৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

প্রভাবশালীদের থাবায় পুকুর হচ্ছে ভিটা

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

রাজশাহী নগরীর শিরোইলে প্রায় ২ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর আছে। এলাকাবাসী পুকুরটিকে এখনো শতবর্ষী শিরোইল পুকুর হিসেবে চেনে। অনেক আগে থেকেই পুকুরটির পানি নানা কাজে ব্যবহার করে আসছে স্থানীয়রা। কিন্তু হঠাৎ একদিন সকালে পুকুরের মধ্যে একটি সাইনবোর্ড দেখতে পায় এলাকাবাসী। সাইনবোর্ডে লেখা ‘এই জমির বায়নাসূত্রে মালিক মাইনুল হোসেন, আনোয়ার ও শওকত আলী। জমির পরিমাণ ৪৯ একর। শ্রেণি ভিটা।’ স্থানীয় বাসিন্দা জাবেদ আলী বলেন, ‘বাপদাদার আমল থেকে এ জমি পুকুর হিসেবে দেখে আসছি। এখন পুকুরের মধ্যে দেখি ভিটার সাইনবোর্ড! এটা হয় কীভাবে?’

রাজশাহী নগরীতে এভাবেই ভরাট হয়ে যাচ্ছে প্রাচীন পুকুর ও জলাশয়গুলো। তারপর রাতারাতি দলিলপত্রেও পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তিত হয়ে ভিটায় পরিণত হচ্ছে। এজন্য প্রভাবশালীদের যোগসাজশে ভূমি অফিসে একটি চক্র গড়ে উঠেছে। বিপুল টাকার বিনিময়ে কিছু অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারী পুকুর বা জলাশয়কে ভিটায় পরিণত করে দিচ্ছে। তারপর পুকুরগুলো ভরাট করে রাতারাতি সেখানে গড়ে উঠছে ভবন। অথচ উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে রাজশাহী নগরীর পুকুর-জলাশয় কোনোভাবেই ভরাট করা যাবে না।

জানা যায়, সম্প্রতি নগরীর দায়রা পার্ক এলাকায় সাড়ে ৬ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ভরাট শুরু করেছিলেন জনৈক হালিম উদ্দিন। খবর পেয়ে ২৬ মার্চ রাতে নগরীর চন্দ্রিমা থানা পুলিশ গিয়ে পুকুর ভরাট কাজ বন্ধ করে দেয়।

 চন্দ্রিমা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মাহবুব আলম বলেন, ‘উচ্চ আদালতের নির্দেশনা আছে নগরীতে কোনো পুকুর ভরাট করা যাবে না।’

 সে কারণে খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ওই কাজ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে রাতেই।’ তবে অভিযোগ রয়েছে, সব জায়গায় পুলিশ সমান সক্রিয় নয়। কারণ নগরীর অধিকাংশ ওয়ার্ডেই স্থানীয় কাউন্সিলরদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতায় পুকুর ভরাট হয়ে যাচ্ছে। নগরীর ৩, ৫, ৭, ১৪, ১৫, ১৬, ১৭, ১৮, ১৯, ২১, ২৫, ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে পুকুর ভরাটের মহোৎসব চলছে। জানা যায়, এ ক্ষেত্রে পথ দেখান নগরীর নওদাপাড়ার স্থানীয় কাউন্সিলর শাহাদৎ আলী শাহু। তিনি প্রথম এলাকায় প্রায় সাড়ে ৬ বিঘা আয়তনের একটি পুকুর ভরাট করেন। জনপ্রতিনিধি হয়েও তিনি পুকুরকে বাণিজ্যিক আবাসিক এলাকায় পরিণত করেন। যাতায়াতের জন্য সিটি করপোরেশনের খরচে রাস্তা করেন। এ বিষয়ে জানতে চাইলে কাউন্সিলর শাহাদৎ আলী শাহু বলেন, ‘কোনো পুকুর আমি ভরাট করিনি। ভিটা ভরাট করে সেখানে প্লট বিক্রি করা হয়েছে। আর আবাসিক এলাকায় তো রাস্তা দিতেই হবে। যেখানে রাস্তা আছে, সেখানে সিটি করপোরেশনের অর্থে কাজ করা হয়েছে।’

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের অথরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ বলেন, ‘নগরীতে ব্যাপকহারে পুকুর ভরাট হচ্ছে। এটি সত্যিই আশঙ্কাজনক। শ্রেণি ভিটা থাকলে, সেখানে আমাদের নকশার অনুমোদন দিতে হয়। তখন আর কোনো বাধা দেওয়ার কিছু থাকে না।’ এ বিষয়ে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক শামীম আহমেদ বলেন, ‘পুকুরের শ্রেণি পরিবর্তনের কোনো সুযোগ আমি দেব না। এ ধরনের ঘটনা ঘটে থাকলে অভিযোগ পেলে তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর