শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

দাবদাহে ঝরছে আমের গুটি

♦ এ বছর মুকুল ও গুটি সবই কম ♦ সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগেও আসছে না স্বস্তি

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

দাবদাহে ঝরছে আমের গুটি

রাজশাহীতে বিগত বছরগুলোর তুলনায় এ বছর গাছে আমের মুকুল ও গুটি সবই কম। বাগানের গাছগুলোতে মুকুল না ফুটলেও এসেছে নতুন পাতা। আর যে গাছগুলোতে মুকুল থেকে গুটি হয়েছে; তা পড়েছে তীব্র দাবদাহের কবলে। বৃষ্টিহীনতার এমন সময়ে সর্বশেষ টিকে থাকা আমের গুটিগুলোও এখন ঝরছে খরায়। ফলে বেশির ভাগ গাছে আমের পরিবর্তে মুকুলের কাঁদির ডাঁটা ঝুলে আছে।

বৃষ্টিপাত না হওয়া ও খরার কারণে তাপমাত্রা বেড়েছে রাজশাহীতে। তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে আমের বোঁটার রস শুকিয়ে ঝরে পড়ছে আমের গুটি। পানির সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগেও আসছে না চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে স্বস্তি। একে তো গাছে কম আম, দ্বিতীয়ত যে আম আছে সেখান থেকে ঝরে পড়ছে। সব মিলে এক ধরনের লোকসানের আভাস চাষি ও ব্যবসায়ীদের মনে। চাষিদের দাবি, প্রতি বছর আমের গুটি ঝরে। যাকে সাধারণ গুটি ঝরা হিসেবে ধরা হয়। কিন্তু এ বছর সাধারণের চেয়ে বেশি আমের গুটি ঝরছে খরায়। তাদের ধারণা, এরই মধ্যে অনেক বাগানে ১০ থেকে ১৫ ভাগ আমের গুটি ঝরে গেছে খরার কারণে। আম গবেষণা সংশ্লিষ্টরা বলছেন, গত ১৮ মার্চ রাত ২টা থেকে পরের দিন বিকাল ৪টা পর্যন্ত রাজশাহীতে বৃষ্টিপাত হয়েছে ১০ মিলিমিটার। তার আগে ৪ মার্চ ১ মিলিমিটার ও পরের দিন ৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়। এ সময়গুলোতে আমের গাছগুলোতে মুকুল ছিল। বৃষ্টির আগে শুষ্ক আবহাওয়া ও বৃষ্টির পর স্যাঁতসেঁতে আবহাওয়ার এক-দুই দিন পর রোদ। এই রোদে আমের মুকুল পুড়ে নষ্ট হয়ে গেছে। এই ধকলের পর শুরু হয়েছে খরা। খরার কারণে এখন ঝরছে গাছে অবশিষ্ট থাকা আমের গুটি।

রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, এ বছর রাজশাহী জেলায় ১৯ হাজার ৬০২ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছে। যা গত বছরের চেয়ে ২৪ হেক্টর বেশি। আর গতবার জেলার ১৯ হাজার ৫৭৮ হেক্টর জমিতে আমের চাষ হয়েছিল। আম চাষি হাসান আলী বলেন, তার তিনটি বাগানে ৭৫টি আমের গাছ আছে। ৩ ভাগের ১ ভাগ গাছেও আম নেই। তার দাবি, এ বছর মুকুল আসেনি।

তারপরও যে কয়েকটা গাছে মুকুল ছিল তা আবার ঝরে যাচ্ছে। সব মিলে এ বছর আমের উৎপাদন কম হবে। বৈরী আবহাওয়ায় আমের গুটি ঝরে পড়ার দুশ্চিন্তার কথা জানিয়ে আম চাষি আবদুস সালাম বলেন, আমের জন্য এ সময়ে বৃষ্টি খুব প্রয়োজন। বৃষ্টি হলে আশা করা যায় আমের গুটি ঝরা বন্ধ হয়ে যাবে। তা না হলে তীব্র তাপে গাছের আমের আরও বেশি গুটি ঝরে যাবে। রাজশাহী ফল গবেষণা কেন্দ্রের প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা শফিকুল ইসলাম বলেন, এবার আম কম হবে। বিগত বছরের তুলনায় আমের মুকুলও কম ছিল।

 এ বছর মুকুলে ফুল ফুটন্তের সময়ে গত ২০ মার্চ বৃষ্টিপাত হয়েছিল। ফলে আমের অনেক মুকুল নষ্ট হয়ে গেছে। যেহেতু গেল বছর আমের বাম্পার ফলন হয়েছিল। এ বছর বেশির ভাগ গাছে নতুন পাতা দেখা দিয়েছে। আশা করা হচ্ছে আগামী বছরে আমের ভালো ফলন হবে।

যেহেতু তাপমাত্রা বেশি, তাই আমের গাছের গোড়ায় পানি দিতে হবে। তাহলে আমের গুটি ঝরা রোধ হয়ে যাবে। ফলে কিছুটা হলেও উপকার পাওয়া যাবে সেচ দিয়ে।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-পরিচালক মোজদার হোসেন বলেন, খরার কারণে আমের গুটি ঝরতে পারে। আম চাষিদের আম গাছের গোড়ায় সেচ দেওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।

আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের জ্যেষ্ঠ পর্যবেক্ষক আবদুস সালাম বলেন, সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ৪১ ডিগ্রি সেলসিয়াস ছিল শুক্রবার বিকাল ৩টায়। যা তারা তীব্র তাপপ্রবাহ বলে থাকেন। বৃহস্পতিবার রাজশাহীতে সর্বোচ্চ তাপমাত্রা ছিল ৩৯ দশমিক ২ ডিগ্রি। আপাতত কয়েকদিন বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা নেই বলে এই পর্যবেক্ষক জানান।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর