শনিবার, ২০ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
রাখাইন পল্লী

সাংগ্রেং উৎসবে দেশি বিদেশিদের উচ্ছ্বাস

কক্সবাজার প্রতিনিধি

সাংগ্রেং উৎসবে দেশি বিদেশিদের উচ্ছ্বাস

পর্যটন নগরী কক্সবাজারে রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনব্যাপী ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ বা জলকেলি উৎসবের শেষ হয়েছে দেশি-বিদেশিদের উচ্ছ্বাসের মধ্যদিয়ে।

বুধবার থেকে শুরু হওয়া ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী রাখাইন সম্প্রদায়ের তিন দিনের বর্ষবরণ উৎসব ‘সাংগ্রেং পোয়ে’ শেষ হয়েছে গতকাল। এ তিন দিন নেচেগেয়ে মগিসন বা রাখাইন বর্ষ তথা নতুন বছরকে (১৩৮৬) বরণ করল তারা। জলকেলিতে মেতেছেন নানা বয়সের মানুষ। স্থানীয়দের ভাষায় পরিচিত এ পানিখেলা দেখতে ভিড় জমিয়েছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরাও। পাশাপাশি কক্সবাজারে অবস্থানরত বিদেশিরাও অংশ নিয়েছেন এ উৎসবে। এ যেন মধুর সম্প্রীতি। শহরের টেকপাড়া, বৌদ্ধমন্দির, পেশকার পাড়া, হাঙ্গর পাড়া এলাকাসহ রাখাইন পল্লীতে নানা রঙে সাজানো হয়েছে প্যান্ডেল। প্যান্ডেলের এক পাশে জলভর্তি ড্রাম, কাঠের নৌকা রেখে অন্য পাশে রাখাইন তরুণ-তরুণীর দল, প্রত্যেকের হাতে ছিল পানি ছুড়ে মারার পাত্র। তারা একে অপরকে পানি ছুড়ে পরিশুদ্ধির আহ্বান জানালেন। কক্সবাজার সিটি কলেজের শিক্ষার্থী ইনিন রাখাইন বলেন, ‘এ দিনে কী যে আনন্দ লাগে তা বলে বুঝাতে পারব না। এ নতুন বছরকে নানাভাবে বরণ করতে আমরা রাখাইনরা প্রস্তুত থাকি। গত বছরও আমরা অনেক মজা করেছি, নেচেছি, গেয়েছি। এ বছরও তার চেয়ে বেশি মজা হয়েছে। সবাইকে রাখাইন নববর্ষের শুভেচ্ছা। বিদেশি পর্যটক এলিজা পাটেল জানান, ‘আমি সংস্কৃতির কিছু না জানলেও খুব ভালোই উপভোগ করেছি। মনে হয়েছে জীবনের সেরা কিছু মুহূর্ত বাংলাদেশ থেকে নিয়ে যাচ্ছি।’

এদিকে রাখাইন সম্প্রদায়ের নতুন বছরে বিশ্বে সুখ-শান্তি ও সমৃদ্ধি ছড়িয়ে পড়ার প্রত্যাশা করছেন আয়োজকরা। কক্সবাজার সাংস্কৃতিক কেন্দ্রের পরিচালক মং ছেন লা বলেন, ‘সার্বিক নিরাপত্তার মধ্য দিয়ে তিন দিনের উৎসব শেষ হয়েছে। এবার শহরের রাখাইন পল্লীতে ১২টি প্যান্ডেল তৈরি করা হয়েছে। শুধু রাখাইন নয়, অন্য ধর্মাবলম্বীরাও উৎসবে এসে সম্প্রীতির মেলবন্ধনও তৈরি করেছেন।

 এ উৎসব কক্সবাজার জেলার টেকনাফ, উখিয়া, রামু, চকরিয়া, পেকুয়া, ঈদগাঁও, মহেশখালীর রাখাইন পল্লীতেও চলেছে। এসব অঞ্চলে ৫০টির বেশি প্যান্ডেলে জলকেলি উৎসবে মেতেছেন সবাই। আর সুষ্ঠু পরিবেশে বর্ষবরণ করতে পেরে তারা আনন্দিত।

কক্সবাজার পৌরসভার মেয়র মাহবুবুর পরিদর্শনে এসে বলেন, রাখাইন পল্লীর প্রতিটি ঘরে ঘরে এ উৎসব উদযাপিত হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। অন্য ধর্মের লোকজনও তাদের উৎসবে যোগ দেয় এবং সহযোগিতা করে। এ ঐতিহ্য ও সম্প্রীতি আমাদের ধরে রাখতে হবে।

জেলা প্রশাসক মুহাম্মদ শাহীন ইমরান বলেন, এ চিরায়ত ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে সরকার সব ধরনের সহযোগিতা অব্যাহত রাখবে। অনুষ্ঠানে অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক শিক্ষা ও আইসিটি তাপ্তি চাকমা, রাখাইন সমাজকর্মী ডা. মায়েনু, ক্য থিন চ্য ডলিহ সহ অন্যরা বক্তব্য রাখেন। এ সময় জেলার ৫০টি জল উৎসব আয়োজক কমিটির মাঝে অর্থ সহায়তার চেক হস্তান্তর করা হয়।

সর্বশেষ খবর