রবিবার, ২১ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা
খুলনা

নদী ভরাটে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

পলি জমে ভরাট হচ্ছে ২০টি নদী, ভূমির অবনমন হার বাড়ছে - লবণাক্ততা ও জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি, বাস্তুচ্যুত উপকূলীয় মানুষ

সামছুজ্জামান শাহীন, খুলনা

নদী ভরাটে বিপর্যস্ত দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চল

পোল্ডার ব্যবস্থায় প্লাবনভূমির সঙ্গে সংযোগ বিচ্ছিন্ন থাকায় খুলনা, সাতক্ষীরা ও যশোরে অসংখ্য নদনদী ভরাট হয়ে গেছে। আগে জোয়ারের পানিতে ভেসে আসা পলি বিলের কৃষিজমিতে নিমজ্জিত হতো, এখন তা জমা হয় নদনদীর বুকে।

গবেষণায় দেখা গেছে, ১০-১৫ বছর নদীবক্ষে পলি জমা হওয়ার কারণে নদী নিষ্কাশনক্ষমতা হারিয়ে ফেলে এবং দ্রুত মৃত্যুমুখে পতিত হয়। প্রতি বছর খুলনা অঞ্চলে নদনদীতে ১ মিটারের বেশি পলি জমা হয়। এতে জোয়ার ওঠার শেষ এলাকা অর্থাৎ প্রান্তভাগ থেকে নদী প্রতি বছর ৬-৭ কিলোমিটার পর্যন্ত মরে যাচ্ছে।

নদীবিষয়ক গবেষণা প্রতিষ্ঠান উত্তরণ ও পানি কমিটির গবেষণা প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়েছে।

তাদের মতে, ষাটের দশকে উপকূলে বেড়িবাঁধ নির্মাণের ফলে ১৩টি পোল্ডারের মধ্যে ১০৯টি নদনদী অবরুদ্ধ করা হয়। সেই নদনদী এখন পানি নিষ্কাশনের খাল হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। পোল্ডারের বাইরে থাকা ২০টি উন্মুক্ত নদনদীর মধ্যে হামকুড়া, আপার শোলমারী, শালতা, মধ্যভদ্রা, ঘ্যাংরাইল, আমতলী, গুয়াচাপা, বুড়িভদ্রা ও প্রাণসায়ের ভরাট হয়ে গেছে। আরও ১১টি নদনদীর উজান অংশ মৃত অবস্থায় রয়েছে। সমুদ্রপৃষ্ঠে পানির উচ্চতার পাশাপাশি প্রতি বছর খুলনায় ভূমি অবনমন হচ্ছে ৫.১ ও সুন্দরবনে ৪.১ মিলিমিটার। জলাবদ্ধতায় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে ২০ লাখ মানুষ। জীবনযাপনে সংকটে বাস্তুভূমি ত্যাগ করতে বাধ্য হচ্ছে অনেকে।

এদিকে এ অবস্থার উত্তরণে গতকাল খুলনার শিল্পকলা একাডেমিতে ‘দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূল অঞ্চলে নদনদী রক্ষা বিষয়ক সমাবেশ ও নদীমেলা-২০২৪’ অনুষ্ঠিত হয়। প্রধান অতিথি ছিলেন ভূমিমন্ত্রী নারায়ণ চন্দ্র চন্দ।

এতে নদীরক্ষায় দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে আঞ্চলিক বোর্ড গঠন, জলাবদ্ধ এলাকার সব নদনদী অববাহিকায় টিআরএম বাস্তবায়ন, পোল্ডারের মধ্যে আবদ্ধ নদনদী মুক্ত করা এবং পদ্মা প্রবাহের সঙ্গে সংযোগ, ক্ষতিপূরণে অর্থ বরাদ্দ নিশ্চিত ও মাল্টি স্টেকহোল্ডার ফোরাম গঠনের সুপারিশ করা হয়।

 

উত্তরণ পরিচালক শহিদুল ইসলাম বলেন, ক্ষতিপূরণ প্রদান সমস্যায় ভবদহ, কপোতাক্ষ অববাহিকায় টিআরএম কার্যক্রম বন্ধ আছে। বিকল্প হিসেবে কিছু এলাকায় খনন করা হচ্ছে। কিন্তু খননকৃত মাটি দুই পাশে রাখায় নদীর প্লাবনভূমি থাকছে না। খনন করা মাটি ধুয়ে নদীতে অবক্ষেপণ ও দুই পাশ দ্রুত দখলের আওতায় চলে যাচ্ছে।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তৃতা করেন সংসদ সদস্য মো. রশীদুজ্জামান, ফিরোজ আহমেদ স্বপন, এনামুল হক বাবুল, সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য লায়লা পারভীন সেঁজুতি, আইডব্লিউএম পরিচালক মো. সোহেল মাসুম, পাউবো খুলনার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী বিদ্যুৎ কুমার সাহা ও পাউবো ঢাকার তত্ত্ব¡াবধায়ক প্রকৌশলী ড. মোহাম্মদ সাইফ উদ্দিন।

উত্তরণ ও পানি কমিটি অনুষ্ঠানের আয়োজন করে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর