সোমবার, ২২ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

সংরক্ষণ হয়নি জলাশয় উন্মুক্ত স্থান

► আরডিএ এই দীর্ঘ সময়ে জমি অধিগ্রহণ করে পুকুর সংরক্ষণও করছে না ► আদর্শ নগরায়ণের জন্য ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে আরডিএ

কাজী শাহেদ, রাজশাহী

সংরক্ষণ হয়নি জলাশয় উন্মুক্ত স্থান

রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (আরডিএ) মহাপরিকল্পনায় (মাস্টারপ্ল্যান) জনস্বার্থে জলাশয় ও উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণের কথা ছিল। কিন্তু ২০ বছরেও তা হয়নি। আরডিএ এই দীর্ঘ সময়ে জমি অধিগ্রহণ করে পুকুর সংরক্ষণও করছে না। আবার জমির মালিককে তার সুবিধামতো ব্যবহারও করতে দিচ্ছে না। এ অবস্থায় পরিকল্পনা সংশোধন করেছে উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ।

আরডিএর নগর পরিকল্পক (ভারপ্রাপ্ত) রাহেনুল ইসলাম রনী জানান, মহাপরিকল্পনা বাস্তবায়নে তারা কাজ করছেন। পরিকল্পনায় ভূমি ব্যবহারের যে সিদ্ধান্ত আছে, সেভাবে ভূমির ব্যবহার নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে। আরডিএ সূত্রে জানা গেছে, আদর্শ নগরায়ণের জন্য ২০ বছর (২০০৪-২০২৪) মেয়াদি মহাপরিকল্পনা গ্রহণ করে আরডিএ। এর জন্য পদ্মা নদীর চরসহ এর আয়তন নির্ধারণ করা হয় ৩৬৫ বর্গকিলোমিটার। আর চর ছাড়া ৩০০ বর্গকিলোমিটার। পরিকল্পনা গ্রহণের সময় নগরীর মোট আয়তনের ৭ দশমিক ৪৩ শতাংশ জলাশয় ছিল। কর্তৃপক্ষের প্রস্তাব ছিল, পরিবেশ সংরক্ষণ, ভূগর্ভস্থ পানির স্তর ঠিক রাখা ও অগ্নিকান্ডের সময় প্রয়োজনীয় পানির উৎসস্থল এবং জনসাধারণের ব্যবহারের জন্য ৩ দশমিক ৯৩ শতাংশ জলাশয় (পুকুর) সংরক্ষণ করা হবে। কিন্তু দু-একটি ছাড়া সব পুকুরই ব্যক্তিমালিকানাধীন। আরডিএর অথোরাইজড কর্মকর্তা আবুল কালাম আজাদ জানান, এরই মধ্যে ২০ বছর মেয়াদি মহাপরিকল্পনার মেয়াদ হচ্ছে এ বছর। তার আগেই ২০১৯ সালে মহাপরিকল্পনা সংশোধনের উদ্যোগ নেয় কর্তৃপক্ষ। প্রায় ১৯ কোটি টাকা ব্যয় করে থাইল্যান্ডের একটি প্রতিষ্ঠানকে দিয়ে কাজটি করিয়েছে রাজশাহী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ। যার মেয়াদ ২০৪১ সাল পর্যন্ত। বর্তমানে আরডিএ নতুন মহাপরিকল্পনা নিয়ে কাজ করছে।  রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান জানান, পরিকল্পনা নিলেও সে অনুযায়ী আরডিএ কোনো কাজ করছে না। আরডিএ পুকুর সংরক্ষণে দীর্ঘ সময়েও কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় কয়েকজন ব্যক্তি তাদের প্রয়োজনে পুকুর ভরাট করেছেন। এখনো দেদার চলছে পুকুর ভরাট। আরডিএর মহাপরিকল্পনার মধ্যে ছিল জনস্বার্থে নগরীর উন্মুক্ত জায়গা সংরক্ষণ। আরডিএ সূত্র জানায়, বর্তমানে নগরীর মোট আয়তনের মধ্যে স্টেডিয়াম ও পার্ক মিলে উন্মুক্ত জায়গা আছে মাত্র শূন্য দশমিক ৫৫ ভাগ (প্রায় ১৩৪ একর)। কিন্তু মহাপরিকল্পনায় ৩ দশমিক ৫৭ ভাগ (৮৮২ একর) জায়গা উন্মুক্ত রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। এর মধ্যে আছে কেন্দ্রীয় পার্ক ও কমিউনিটি পার্ক। কেন্দ্রীয় পার্কের জন্য মেহেরচন্ডী এলাকায় ৮০ একর, বারুইপাড়া ও বুধপাড়া এলাকায় কমিউনিটি পার্কের জন্য ১৬ একর, উজিরপুকুর এলাকায় বোটানিক্যাল গার্ডেনের জন্য ২০০ একর এবং কুখাি  এলাকায় ৫০ একর জমি সবুজ প্রকৃতি সংরক্ষণের জন্য প্রস্তাব করা হয়েছে।

জামাত খান আরও জানান, এই প্রস্তাব পর্যন্তই শেষ। আগের ২০ বছরে কর্তৃপক্ষ তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। মাঝখানে বিপদে পড়েছেন জমির মালিকরা। তারা জমি কোনো কাজে ব্যবহার করতে পারছেন না। নতুন মহাপরিকল্পনায় বিশেষত্ব বলতে তেমন কিছু নেই। আগের পরিকল্পনায় যা ছিল তার সঙ্গে সামান্য কিছু যোগ হয়েছে। এবার মহাপরিকল্পনায় যোগ হয়েছে দুর্যোগব্যবস্থাপনার বিষয়টি।

এর মধ্যে আছে চার ধরনের দুর্যোগব্যবস্থাপনায় সংবেদনশীল, ভূমিকম্প, বন্যা, খরা, অগ্নিনির্বাপণ, ওয়াটার রিজার্ভ, বড় ভবন তৈরির ক্ষেত্রে অগ্নিনির্বাপণের জন্য রাস্তা। নতুন মহাপরিকল্পনায় এ কয়টি বিষয় বিশেষত্ব বলা হলেও দেখা গেছে, অগ্নিনির্বাপণের জন্য ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে নির্দেশনা আগের পরিকল্পনায় ছিল। দুর্যোগব্যবস্থাপনার মধ্যে ভূমিকম্প এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণ করার ক্ষেত্রে আগে যে নির্দেশনা ছিল, সেখানে ভূমিকম্প প্রবণ এলাকায় বহুতল ভবন নির্মাণের ক্ষেত্রে করণীয় বিষয় যোগ হয়েছে। অগ্নিকান্ডের মতো ঘটনায় ফায়ার সার্ভিসের গাড়ি অনায়াসে যেতে পারে, সে পরিমাণ রাস্তা রেখে ভবন নির্মাণ করতে হবে, যা মহাপরিকল্পনায় সংযুক্ত হয়েছে। বন্যা বা খরার মতো দুর্যোগে কী কী ব্যবস্থা নেওয়া যায়, সে বিষয়টি আগের পরিকল্পনায় ছিল। ২০৪১ সাল পর্যন্ত যে মহাপরিকল্পনা তৈরি করা হয়েছে সেখানে বড় বড় রাস্তাঘাট, আগামীর রাজশাহী কেমন হবে, কতটা নিরাপদ হবে, নগরায়ন কেমন হবে, আরডিএর পরিধির মধ্যে যে জায়গা আছে সেসব জায়গার রাস্তাঘাট, বসতি কেমন হবে তার কিছুই নেই।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর