মঙ্গলবার, ২৩ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নামে প্রতারণা

মূলহোতাসহ আটক ৮

নিজস্ব প্রতিবেদক, রাজশাহী

শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে বিভিন্ন ক্রেডিট কার্ড, ডেবিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত মূলহোতা জাকির হোসেন হাওলাদারসহ আটজন প্রতারককে আটক করেছে র‌্যাব-৫। র‌্যাব-৪, ৫, ৮, ১০, ১১ ও ১৪ এর যৌথ অভিযানে ঢাকা, জামালপুর, রাজশাহী, নারায়ণগঞ্জ, কুমিল্লা ও ফরিদপুর থেকে তাদের আটক করা হয়েছে। সোমবার র‌্যাব-৫ এর সদর দফতর থেকে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য জানা গেছে। বিজ্ঞপ্তির তথ্যমতে, গত ২৪ মার্চ সকালে মহানগরীর শালবাগান এলাকায় এক ব্যক্তির (বাদী) ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বরে অজ্ঞাতনামা মোবাইল নম্বর থেকে ভিকটিমের মেয়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অ্যাকাউন্টেট শাখায় কর্মরত মো. মিজানুর রহমান বলে পরিচয় দিয়ে তার মেয়ে এসএসসি পরীক্ষায় গোল্ডেন এ-প্লাস পাওয়ায় শিক্ষা উপবৃত্তির ২২ হাজার ৫০০ টাকা এসেছে বলে জানান। এই টাকা বাদীর অ্যাকাউন্টে চলে যাবে মর্মে একটি ব্যাংকের এটিএম কার্ডের ষোলো ডিজিটের নম্বর দিতে বলেন। তিনি সরল বিশ্বাসে তার এটিএম কার্ডের ষোলো ডিজিটের নম্বর প্রদান করেন।

এ সময় তাকে জানানো হয় যে, তার মোবাইল ফোনে একটি ওটিপি নম্বর যাবে। সেটি তাকে দিতে হবে। তবে এমনটি করার পর টাকা তো আসেইনি উল্টো বাদী তার মোবাইলের এসএমএস অপশনে গিয়ে দেখতে পান তার অ্যাকাউন্ট থেকে চার বারে ১ লাখ ৫০ হাজার ৫০০ টাকা অভিনব এই প্রতারণার মাধ্যমে তুলে নেওয়া হয়েছে। এই ঘটনায় বাদী অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে মহানগরীর বোয়ালিয়া মডেল থানায় মামলা দায়ের করেন (মামলা নং-৩৯)। এরপর র‌্যাব-৫ এই মামলাটির ছায়া তদন্তে নামে। তারা রাজশাহী মহানগরীর রাজপাড়া এলাকায় অভিযান চালিয়ে শিক্ষা উপবৃত্তির টাকা দেওয়ার নাম করে ক্রেডিট কার্ড ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে প্রতারণার কাজে জড়িত শামীম হোসেনকে (২৯) আটক করেন। শামীম টাঙ্গাইল জেলার বাসিন্দা। আটক শামীমের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে র‌্যাব-৫ সদস্যরা রাজধানী ঢাকার আশুলিয়া থানা এলাকার একটি বাড়িতে অভিযান পরিচালনা করে। তারা সেখান থেকে বিভিন্ন মোবাইল কোম্পানির সিমকার্ডসহ বেশ কয়েকটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করেন।

এ সময় জিজ্ঞাসাবাদে আটক শামীম জানান, প্রতারণা চক্রের সদস্য ফরিদপুরের মৃত জয়নুদ্দিনের ছেলে মোহাম্মদ জিহাদ (৩৪), বর্তমানে জামালপুরে অবস্থান করছে। পরে জিহাদকে বিপুল পরিমাণ সিমকার্ডসহ জামালপুর জেলার সদর থানা থেকে আটক করা হয়।

জিজ্ঞাসাবাদে তিনি জানান, আটক জিহাদ ও শামীমকে এই চক্রের সদস্য কুমিল্লার কাজী তাজুল ইসলামের ছেলে কাজী সাদ্দাম হোসেন ওরফে আমির হামজা (২৬) কুমিল্লায় বিভিন্ন বেনামি রেজিস্ট্রেশনকৃত সিমকার্ড সংগ্রহ করে দেয়। পরবর্তীতে আমির হামজাকে কুমিল্লা জেলার হোমনা থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়।

তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে একটি মোবাইল অপারেটর কোম্পানির সিমকার্ড কেনাবেচার কাজে নিয়োজিত গোপালগঞ্জের আবদুল গাজীর ছেলে আহাদ গাজীকে (২৪) নারায়ণগঞ্জ থেকে আটক করা হয়। আটককৃত জিহাদ ও শামীমের দেওয়া তথ্যে ফরিদপুরের জয়নাল ফকিরের ছেলে ফিরোজ রহমান ওরফে জয়কে (২৬) ঢাকার কাফরুল থানা এলাকা থেকে আটক করা হয়। আটক মোস্তাফিজুরের দেওয়া তথ্য মতে, ফরিদপুর জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা  থেকে বাপ্পি মোল্লাকে (২০) আটক করা হয়। তিনি ফরিদপুরের খোকন মোল্লার ছেলে। আর তাদের দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে তথ্য প্রযুক্তির সহায়তায় ফরিদপুরের দেলোয়ার হাওলাদারের ছেলে জাকির হোসেন হাওলাদার (৪৭) ও এবাদত মোল্লার ছেলে উসমান গনি মোল্লাকে (৩৩) জেলার ভাঙ্গা থানা এলাকা  থেকে আটক করা হয়। এদের মধ্যে জাকির হোসেন হাওলাদার অভিনব এই প্রতারক চক্রের মূলহোতা। র‌্যাব-৫ এর সিইও লেফটেন্যান্ট কর্নেল মুনীম ফেরদৌস বলেন, অভিযানে আটকদের কাছ থেকে সর্বমোট ২৩টি মোবাইল সেট, ৩১০টি সিমকার্ড এবং নগদ ৩ লাখ ১ হাজার ২৭০ টাকা ও ৯টি ব্যাংক লেনদেন স্লিপ উদ্ধার করা হয়েছে।

এ ঘটনায় ঢাকা জেলার কেরানীগঞ্জ, ডিএমপির ডেমরা থানা, ঢাকা জেলার আশুলিয়া থানা, ডিএমপির ক্যান্টনমেন্ট থানায় জিডি ও মামলাও হয়েছে। আর জিজ্ঞাসাবাদ শেষে আটকদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলেও জানান এই র‌্যাব কর্মকর্তা।

সর্বশেষ খবর