শুক্রবার, ২৬ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

পিঁয়াজ সংরক্ষণে নতুন উদ্ভাবন মাচাঘর

চাষিদের জন্য আশীর্বাদ

কুষ্টিয়া প্রতিনিধি

দেশীয় আধুনিক পদ্ধতিতে পিঁয়াজ সংরক্ষণের মডেল মাচাঘর ব্যবহার শুরু করেছেন কৃষকরা। সরকারি খরচে কৃষকের বাড়িতে নির্মাণ করা তিন তলার এসব ঘরে পিঁয়াজ খুব ভালো থাকছে। পচে নষ্ট হওয়ার ঝুঁকি থাকছে না। এ মাচা ঘর আশীর্বাদ হিসেবে মনে করছেন পিঁয়াজ চাষিরা। এই ঘরই ভাগ্য বদলে দেবে বলে মনে করছেন তারা।

দেশে বেশি পিঁয়াজ চাষ হয় এমন সাতটি জেলায় কৃষকদের বাড়িতে ৩০০টি মডেল ঘর নির্মাণ করে দিয়েছে কৃষি বিপণন অধিদফতর। এর মধ্যে কুষ্টিয়ার কুমারখালীর কৃষকরা পেয়েছেন ১৫টি ঘর। নিচে পাকা পিলারের ওপর বাঁশ দিয়ে আকর্ষণীয় ডিজাইনে এ ঘর তৈরি করা হয়েছে। ওপরে দেওয়া হয়েছে টিন। আধুনিক এসব ঘরে সহজেই বাইরের আলো-বাতাস প্রবেশ করছে। ভিতরের গরম বাতাস বের করতে বসানো হয়েছে ছয়টি করে ফ্যান। ঘরে থাকছে আর্দ্রতা ও তাপ মরিমাপক যন্ত্র। একই সঙ্গে কত পিঁয়াজ আছে তার হিসেব রাখার ব্যবস্থাও। সনাতন পদ্ধতিতে ঘরের চাতালে পিঁয়াজ সংরক্ষণের বদলে কৃষকরা এখন তিন স্তরের এই মডেল ঘরে পিঁয়াজ ও রসুন সংরক্ষণ করতে পারছে। এই ঘরে প্রাকৃতিকভাবেই পিঁয়াজ কম তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ঘর পাওয়া কৃষক যদুবয়রা ইউনিয়নের মনিরুল ইসলাম বলেন, সনাতন পদ্ধতিতে সংরক্ষণে পিঁয়াজের প্রায় ৩০ ভাগই পচে নষ্ট হচ্ছিল। এই ঘরে ৫ ভাগও নষ্ট হবে না। দেড় মাস হলো ঘরে পিঁয়াজ রেখেছি, কিছুই হয়নি। ভালো আছে।

একই এলাকার প্রসেনজিত কুমার মন্ডল বলেন- প্রতি বছর সাড়ে ৪০০ মণ পিঁয়াজ হয়। আগে যেভাবে সংরক্ষণ করতাম তাতে ৪ লাখ টাকার পিঁয়াজ পচে যেত। এই ঘরে রাখছি এবার আমার ৩ লাখ টাকা অন্তত বেঁচে যাবে।

শানপুকুরিয়া গ্রামের কৃষক আলফাজ বলেন, আগে বাড়ির সবকটি ঘরের চাতালে এমনকি গোয়াল (গরু রাখার) ঘরের চাতালেও পিঁয়াজ রাখতাম। সারা বাড়ি পিঁয়াজের গন্ধ হয়ে যেত। এখন বাড়ির বাইরে আলাদা ঘরে থাকছে। নষ্ট হচ্ছে না। যখন খুশি বেচতে পারব। সুবিধা হলো।

প্রকল্প পরিচালক হেলাল উদ্দিন বলেন, সারা দেশে আরও ৬০০টি ঘর নির্মাণের অনুমোদন দিয়েছে সরকার। এমন ১ লাখ ঘর নির্মাণ করা গেলে সংরক্ষণ করা পিঁয়াজ দিয়েই মিটে যাবে দেশের চাহিদা। তিনি বলেন, পিঁয়াজ সংরক্ষণে হিমাগারের চেয়ে এই মডেল ঘর বেশি কার্যকর। কারণ হিমাগারে পিঁয়াজ রাখতে হলে ধীরে ধীরে এর তাপমাত্রা কমাতে হয়। আবার বিক্রির সময়ও ধীরে ধীরে বাড়াতে হয়। এতে কয়েকদিন লেগে যায়। আর মডেল ঘরে এসব প্রক্রিয়ার দরকার হয় না।

জেলা প্রশাসক এহেতেশাম রেজা বলেন, দেশে বছরে ৩৪ লাখ টন পিঁয়াজ উৎপাদন হয়। সেখানে চাহিদা মাত্র ২৮ লাখ টন। কিন্তু সংরক্ষণের অভাবে অনেক পিঁয়াজ নষ্ট হয়ে যায়। শেষমেশ আমাদের পিঁয়াজ আমদানি করতে হয়। তাই সরকার এই মডেল ঘরের ব্যবস্থা করেছে। এই মডেল ঘর পিঁয়াজ চাষিদের ভাগ্য বদলে দেবে।

 

সর্বশেষ খবর