শনিবার, ২৭ এপ্রিল, ২০২৪ ০০:০০ টা

বিদ্যুতের ভয়াবহ বিপর্যয়

চট্টগ্রাম - তেল ও জ্বালানি সংকটে বন্ধ উৎপাদন

ইমরান এমি, চট্টগ্রাম

তেল ও জ্বালানি সংকটে ভয়াবহ বিপর্যয় দেখা দিয়েছে চট্টগ্রামের বিদ্যুৎ ব্যবস্থায়। দিনরাত সমানে চলছে বিদ্যুতের ভেলকিবাজি। অফিস-আদালতের কার্যক্রমে ব্যাঘাত ঘটছে প্রতিদিন। লাগাতার বিদ্যুৎ বিভ্রাটে ব্যাহত হচ্ছে শিল্পকারখানার উৎপাদনও। চট্টগ্রামে দৈনিক বিদ্যুতের চাহিদা সর্বোচ্চ ১ হাজার ৫০০ মেগাওয়াট। বিপরীতে বিদ্যুৎ মিলছে ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ মেগাওয়াট। অথচ যে বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে তা দিয়েই স্বয়ংসম্পূর্ণভাবে মেটার কথা চট্টগ্রামের চাহিদা। কিন্তু চট্টগ্রামে উৎপাদিত বিদ্যুৎ জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হওয়ার পর চাহিদা থেকে কয়েক শ মেগাওয়াট কম বিদ্যুৎ মিলছে। এ ছাড়া চট্টগ্রামের বেশির ভাগ বিদ্যুৎ কেন্দ্রেই সক্ষমতা অনুযায়ী মিলছে না বিদ্যুৎ। যান্ত্রিক ত্রুটি, জ্বালানি সংকটের কারণে উৎপাদন বন্ধ রয়েছে কিছু কেন্দ্রে। যেগুলো চালু তাতেও মিলছে না সক্ষমতার শতভাগ। ফলে প্রতিদিন চট্টগ্রামে ২০০ থেকে ৩০০ মেগাওয়াট লোডশেডিং করা হচ্ছে। মূলত গ্যাস ও জ্বালানি সংকটের কারণে এ সমস্যা বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

বিপিডিবি দক্ষিণাঞ্চলের দেওয়া তথ্যমতে, বৃহস্পতিবার চট্টগ্রামের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১ হাজার ৮৫৯.৯০ মেগাওয়াট। একই সময়ে চাহিদা ছিল ১ হাজার ৩৬০ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে জাতীয়ভাবে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ পায় মাত্র ১ হাজার ১৭৩ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১৮৭ মেগাওয়াট; যা সমানভাবে প্রতিটি উপকেন্দ্রের মাধ্যমে সমন্বয় হয়। এর আগের দিন বুধবার চট্টগ্রামের উৎপাদন কেন্দ্রগুলোয় বিদ্যুৎ উৎপাদন হয় ১ হাজার ৭০৪.৬০ মেগাওয়াট। একই সময়ে চাহিদা ছিল ১ হাজার ৪৫৭ মেগাওয়াট। কিন্তু এর বিপরীতে জাতীয়ভাবে চট্টগ্রাম বিদ্যুৎ পায় মাত্র ১ হাজার ২৬২ মেগাওয়াট। লোডশেডিং হয়েছে ১৯৫ মেগাওয়াট। পিডিবি চট্টগ্রাম অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী অশোক কুমার চৌধুরী বলেন, ‘শুক্রবার (গতকাল) সেভাবে লোডশেডিং হয়নি। সার্বিকভাবে যে লোডশেডিং হচ্ছে তার কারণ পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়া। পর্যাপ্ত বিদ্যুৎ উৎপাদন না হওয়ার কারণ গ্যাস ও জ্বালানি সংকট। যে হারে দাবদাহ বেড়েছে তাতে মানুষ বিদ্যুৎ ব্যবহার বাড়িয়ে দিয়েছে। কিন্তু আমাদের উৎপাদন সেভাবে হচ্ছে না। যার কারণে নিয়মিত কিছু লোডশেডিং করা হচ্ছে। গ্যাস ও জ্বালানি সংকট নিরসন হলেই এ সমস্যারও নিরসন হবে।’

পিজিসিবিসূত্রে জানা গেছে, কাপ্তাই হাইড্রোলিক পাওয়ার প্লান্টের পাঁচটি ইউনিটে বিদ্যুৎ উৎপাদন করার ক্ষমতা রয়েছে ২৩০ মেগাওয়াট। কিন্তু লেকে পানির লেভেল নিচে নেমে যাওয়ায় একটি ইউনিট থেকে মাত্র ৬০ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হচ্ছে। রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের দুটি ইউনিটে ৩৬০ মেগাওয়াট উৎপাদন ক্ষমতা থাকলেও গ্যাসস্বল্পতার কারণে উৎপাদন হচ্ছে ১১৫ মেগাওয়াট। তবে রাউজানের অন্য ২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রের বিদ্যুৎ স্বাভাবিক অবস্থায় রয়েছে। শিকলবাহায় তিনটি বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মধ্যে একটিতে মেইনটেন্যান্সের কাজ চলছে। অন্য ২২৫ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রে স্বাভাবিকভাবে উৎপাদন হচ্ছে ২১২ মেগাওয়াট এবং ১০৫ মেগাওয়াট বিদ্যুৎ কেন্দ্রে জ্বালানিস্বল্পতার কারণে মাঝে ১৫-২০ মেগাওয়াট উৎপাদন হয়, কখনো কখনো সেটাও বন্ধ থাকে।

 জ্বালানি সংকটের কারণে বাড়বকুন্ডের রিজেন্ট পাওয়ার লিমিটেডের ২৪ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রে পাওয়া যাচ্ছে ৫ মেগাওয়াট, পতেঙ্গার ৫০ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রে ১৫-২০ মেগাওয়াট, আনোয়ারা ৩০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ১৬ মেগাওয়াট, কর্ণফুলী পাওয়ার লিমিটেডে ১১০ মেগাওয়াট উৎপাদন কেন্দ্রে ৩৪ মেগাওয়াট, এনলিমা এনার্জি বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে ১১৬ মেগাওয়াটের জায়গায় ১৭ মেগাওয়াট। ইঞ্জিনে সমস্যার কারণে হাটহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টে পাওয়া যাচ্ছে ৪৮-৫০ মেগাওয়াট, দোহাজারী ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টে ৪৫-৫০ মেগাওয়াট আর জুলধা ১০০ মেগাওয়াট পিকিং পাওয়ার প্লান্টের দুটি ইউনিটের একটিতে জ্বালানি সংকট এবং অন্যটিতে ইঞ্জিন সমস্যার কারণে পাওয়া যাচ্ছে ২৫ মেগাওয়াট।

তবে মিরসরাই ১৫০ মেগাওয়াট কেন্দ্রে উৎপাদন ক্ষমতার পুরোটাই পাওয়া যাচ্ছে। বাঁশখালীর এস এস পাওয়ার প্লান্টে উৎপাদন ক্ষমতা ১ হাজার ২২৪ মেগাওয়াটের মধ্যে পরীক্ষামূলকভাবে ২৭৬ মেগাওয়াট উৎপাদন হচ্ছে। এসব কেন্দ্রের উৎপাদিত বিদ্যুৎ সরাসরি জাতীয় গ্রিডে যুক্ত হয়ে সারা দেশে সরবরাহ হচ্ছে।

এ ছাড়া জ্বালানি সংকটের কারণে বন্ধ রয়েছে রাউজান তাপবিদ্যুৎ কেন্দ্রের একটি ইউনিট ১৮০ মেগাওয়াট, টেকনাফে যান্ত্রিক ত্রুটির কারণে ২০ মেগাওয়াট, শিকলবাহা পিকিং পাওয়ার প্লান্ট মেইনটেন্যান্সের কারণে ১৫০ মেগাওয়াট, জ্বালানি সংকটের কারণে জুলধা ইউনিট ২ এবং ইউনিট ৩-এর ১০০ মেগাওয়াট, সোলার প্যানেলে সমস্যা হওয়ায় কাপ্তাই ৭ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্ট, জ্বালানি সংকটের কারণে জুডিয়াক পাওয়ার প্লান্টে ৫৪ মেগাওয়াট, পরীক্ষামূলক থাকায় মিরসরাই গ্যাসচালিত ১৫ মেগাওয়াট এবং সোলার প্যানেলে সমস্যা থাকায় সোনাগাজীর ৭৫ মেগাওয়াট সোলার পাওয়ার প্লান্টে বিদ্যুৎ উৎপাদন বন্ধ রয়েছে।

সর্বশেষ খবর